ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ডেঙ্গুতে টালমাটাল ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০২, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডেঙ্গুতে টালমাটাল ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন

চলতি বছরে অন‌্যতম আলোচিত বিষয় ছিল ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, অকার্যকর ওষুধ স্প্রে, পরিচ্ছন্নতা অভিযান না চালানোসহ বিভিন্ন কারণে দুই সিটি করপোরেশন সমালোচিত হয়েছে নগরবাসীর কাছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এতটা বাইরে চলে যায় যে, ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের চাপ সামলাতে পারছিল না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানিয়েছেন, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ২৬৪টি মৃত্যুর ঘটনার মধ‌্যে ২১১টি পর্যালোচনা করে ১৩৩ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

প্রশ্নবিদ্ধ মশার ওষুধ :

আইইডিসিআরের গবেষণা অনুযায়ী, এডিস ও কিউলেক্স মশার মধ্যে অতিমাত্রার কীটনাশক প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে কার্যকর ওষুধ হিসেবে বেন্ডিওকার্ব ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। যেহেতু এ ওষুধের নিবন্ধন বাংলাদেশে নেই, সেহেতু তারা পরে ম্যালাথিউন ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশন দুর্বল পারমিথ্রিন ব্যবহার করেছে।

এছাড়া, ডেঙ্গু মশা নিধনে একই ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশের চেয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪০ শতাংশ বেশি টাকা খরচ করেছে বলে দাবি করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

পূর্বাভাস দেয়া হয়নি:

প্রাক বর্ষা মৌসুমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ছিল ২১ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ছিল ২৬ শতাংশ। অথচ ২০ শতাংশের বেশি এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।

টিআইবির জরিপে দেখা গেছে, ২০১৮ সালেও দুই সিটিতে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব গড় ২০ শতাংশের বেশি ছিল। এটি ক্ষতিকর মাত্রার চেয়ে বেশি বলে তাদের অবহিত করেছিল আইইডিসিআর। কিন্তু নির্বাচনের কারণে তাদেরকে এ গবেষণার তথ‌্য প্রকাশে নিষেধ করা হয়। এ বছরের ৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার ১৯টি স্থানে জরিপ চালিয়ে ৮০ শতাংশের বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। জরিপ শুধু ঢাকা শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় অন্য জেলাগুলোতে সতর্ক বার্তা বা পূর্বাভাস দেয়া হয়নি।

কর্মী সংকটের অজুহাত :

দুই সিটি করপোরেশন সম্প্রসারিত হয়েছে, দাবি করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরা দাবি করেন যে, তাদের কর্মী সংকট রয়েছে। তবে এ সমস্যা সমাধানে দুই সিটি করপোরেশন কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যদিও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানোর জন‌্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ছয় শতাধিক কর্মী নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল।

ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষায় নাটক :

অভিযোগ ওঠে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু মশা নির্মূলে যে ওষুধ ব্যবহার করছে, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য নগর ভবনে কয়েক দফায় তা স্প্রে করে এর কার্যকারিতা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার জন‌্য খাচায় রাখা মশাদের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়েনি। এরপরও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এডিস মশা নির্মূলে অকার্যকর ওষুধ স্প্রে করে।

ঈদে দেশজুড়ে ছড়ায় ডেঙ্গু:

ঈদুল আজহার ছুটিতে অনেকে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যান। তাদের মাধ‌্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকাতে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।

ডেঙ্গুকে গুজব আখ্যা :

ডেঙ্গুর প্রকোপে যখন রাজধানীবাসী আতঙ্কিত, তখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপেরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, এটি গুজব। এ নিয়ে দেশজুড়ে প্রচুর সমালোচনা হয়। যদিও সাঈদ খোকন তার এই বক্তব্যে অনড় ছিলেন।

স্বাস্থ‌্যমন্ত্রীর হাস‌্যকর বক্তব‌্য :

২৫ জুলাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু চেঞ্জিং ট্রেন্ডস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক এক সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গু (এডিস) মশা অনেক হেলদি। তাদের প্রজনন ক্ষমতাও বেশি। রোহিঙ্গাদের মতোই তাদের প্রজনন ক্ষমতা।’

 

ঢাকা/নূর/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়