ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

২০১৯: গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচিত যত ঘটনা

অনিক আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২০১৯: গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচিত যত ঘটনা

গণবিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১৯ সালটা ছিল স্মরণীয় নানা ঘটনায় পরিপূর্ণ। ক্রীড়াঙ্গণে ব্যাপক সফলতা, বৈধ উপাচার্যের দাবিতে ৬৮ দিন আন্দোলন, রোবট উদ্ভাবন, ছাত্র সংসদের অভিষেকসহ নানা ঘটনায় সারা বছরই সরগরম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি তুলে ধরছেন রাইজিংবিডির গণবিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা অনিক আহমেদ।

রুবাইকাণ্ড

বছরের শুরুতে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা নিরাপত্তাকর্মী কর্তৃক বিশ্ববিদ্যলয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধর এবং লাঞ্ছিত করার অভিযোগ। ২৬ মার্চ রাতে মারধরের স্বীকার হওয়া ঐ শিক্ষার্থীর নাম হাসান মোহাম্মদ রুবাই। সে সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। মারধরের পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে কতিপয় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের তালা ভেঙে মারধরের স্বীকার হওয়া শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। জানা যায়, ঐ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান বৈধ উপাচার্য দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভবনের দেয়ালে ‘ভিসি দিবি কিনা বল’ এবং ‘আমরা অসাম্প্রদায়িক কিন্তু হিজাব আলাদা ব্যাপার’ লেখার কারণে তাকে এমনভাবে মারধর এবং লাঞ্ছিত করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে উপরোক্ত বিষয়ের সত্যতা পাওয়া গেলেও পরেরদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সামনে বক্তব্য পাল্টান তিনি।

বৈধ উপাচার্যের দাবিতে আন্দোলন

এ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল বৈধ উপাচার্যের দাবিতে আন্দোলন। চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে নামের ওপরে লাল তারকা চিহ্ন এবং উপাচার্যের ঘর ফাঁকা  থাকায় বিষয়টি প্রশাসনকে জানায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ৬ এপ্রিল থেকে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা চালায় শিক্ষার্থীরা। গণবিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ৬৮ দিন আন্দোলন শেষে ১৫ জুন প্রশাসনের আশ্বাসে কথিত ‘বিজয়ের’ মাধ্যমে ক্লাসে ফিরে। কিন্তু এরপরে ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো উপাচার্য সমস্যার সুরাহা হয়নি।

ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক সফলতা

গণবিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যতিক্রমধর্মী বলার অন্যতম কারণ ক্রীড়া ক্ষেত্রকে উল্লেখযোগ্য হারে গুরুত্ব দেয়া। সেই ধারা অনুযায়ী নিয়মিতভাবে সাফল্য বয়ে এনেছে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। ব্যতিক্রম হয়নি চলতি বছরেও। এ বছর ক্রীড়াঙ্গণে গণবিশ্ববিদ্যালয় দুইটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে অর্জন করেছে পাঁচটি বড় শিরোপা। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে ৬৭টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্প।

উক্ত টুর্নামেন্টের মোট ১০টি ইভেন্টের ৭টি তে অংশগ্রহণ করে ৪টি তে চ্যাম্পিয়ন হয় গণবিশ্ববিদ্যালয়। শিরোপাগুলো হলো মেয়েদের ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল এবং টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছেলেদের ফুটবল। এরপর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ইউনাইটেড গ্রুপ ফারাজ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে সাউথ ইস্টকে বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ছেলেদের ফুটবল টিম। এই ৫টি শিরোপা চলতি বছরের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে ধরা হয়।

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ছবি প্রতিযোগিতা

স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা তৈরির প্রয়াসে ‘ফটোগ্রাফিতে জনস্বাস্থ্য: ফুটিয়ে তুলুন আপনার ক্যামেরায়’ প্রতিপাদ্যে ১৮ জুন দেশব্যাপী শুরু হয় দ্বিতীয় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ছবি প্রতিযোগিতা। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. মনজুর কাদির আহমেদ। আমাদের চারপাশের ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক না কেন, তা যদি আমাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে ভূমিকা রাখে অথবা আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে সেটিকে ছবিতে ফুটিয়ে তুলে ধরাই হলো প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সর্বমোট ১১৩১টি ছবি জমা পড়ে। ২৩ সেপ্টেম্বর সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ছবি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও নির্বাচিত ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে ১০ জন বিজয়ীকে মোট ১,০০,০০০ টাকার প্রাইজবন্ড ও ১০ জন রানার্সআপকে মোট ২০,০০০ টাকার প্রাইজবন্ড দেয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

চলতি বছরের অন্যতম আলোচিত একটি বিষয় ছিল ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে মেডিক‌্যাল, ডেন্টাল এবং ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ১০ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তিসহ দশ দফা দাবি লিখিত লিখিত আকারে ট্রাস্টি বোর্ড এবং প্রশাসন বরাবর প্রেরণ করে মেডিক‌্যাল এবং ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে উল্লেখিত সময়ের মাঝে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়। দশ দিনের সময় অতিক্রান্ত হলেও দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত না হওয়ায় পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ২০ জুলাই গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনে নামে তারা। আন্দোলনের কয়েকদিন পর হাসপাতালের ইন্টার্ণ চিকিৎসকরাও তাদের সাথে যুক্ত হন। পনের দিন আন্দোলনের পর ৩ আগষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো উদ্যোগকে বিবেচনা আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে পরিচালিত ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি (বিপিটি) কোর্সটি নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র ফিজিওথেরাপি কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির দাবিতে ২৩ জুলাই আন্দোলনে নামে ফিজিওথেরাপি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড, বিভাগীয় প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে ৬ দফা দাবিসহ স্মারকলিপি প্রদান করে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সমাধানের কাজ চলমান রয়েছে।

ছাত্রসংসদের শপথ

দেশের প্রথম এবং একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে একমাত্র গণবিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ। ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয় ছাত্রসংসদের তৃতীয় কমিটি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নির্বাচনের কয়েক মাস পরই ছাত্রসংসদসহ সকল সংগঠনের কার্যক্রম এক মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এক মাস পর অন্যান্য সব সংগঠন খুলে দিলেও ছাত্র সংসদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। অবশেষে প্রায় সাড়ে সাত মাস পর চলতি বছরের ২৭ মার্চ ছাত্র সংসদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সাড়ে পাঁচ মাস পর ১২ সেপ্টেম্বর অভিষেকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি।

রোবট মিরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধিতে চলতি বছরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয় ছিল রোবট মিরা উদ্ভাবন। নিজ বিভাগ থেকে দেয়া প্রকল্পের অংশ হিসেবে কম্পিউটার বিজ্ঞান অ‌্যান্ড প্রকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের ৬ জন শিক্ষার্থী অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত রোবটটি উদ্ভাবন করেন। প্রায় আড়াই মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরিকৃত রোবটটির পুরো নাম Mobile & Intelligent Robot for Advanced Assistance- MIRAA. মানুষের সাথে কথা বলা, বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের উত্তর দেয়া, ভার্চুয়াল কাজে সহযোগিতা করাসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে রোবটটিতে। এ বছরের ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটটির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রায় সকল জাতীয় পত্রিকা, টেললিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন পত্রিকাগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পায় রোবট মিরার খবর।


ঢাকা/অনিক/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়