ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ২০১৯

আক্ষেপের অবসান আর অবিশ্বাস্য জয়

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আক্ষেপের অবসান আর অবিশ্বাস্য জয়

বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দল

আরেকটি ক্রিকেটীয় বছর সমাপ্তির পথে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। এরপর উল্টে যাবে বর্ষপঞ্জিকার পাতা। দেয়ালের পুরোনো বর্ষপঞ্জিকা ফেলে টানানো হবে ২০২০ সালের বর্ষপঞ্জিকা। পাল্টে যাবে টেবিল ক্যালেন্ডার, মানিব্যাগে থাকা পকেট ক্যালেন্ডারও। পকেটের স্মার্ট ফোনে ভেসে আসবে নতুন আলোর ঝলকানি, জানাবে হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২০। 

শেষ হওয়ার পথে থাকা বছরে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি; দুইয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের। ঘটনাবহুল বছরের বিভিন্ন স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া বিভাগ। পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ তুলে ধরেছেন ক্রীড়া বিভাগের সহ-সম্পাদক আবু হোসেন পরাগ।

ইংল্যান্ডের অপেক্ষার অবসান

ক্রিকেটের জনক বলা হয় তাদের। বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসেছিল তাদের দেশেই। কিন্তু ইংল্যান্ডের জন্য বিশ্বকাপ ট্রফিটা ছিল সোনার হরিণ। বিশ্বকাপের প্রথম ১১টি আসরে অংশ নিয়ে প্রতিবারই শূন্য হাতে ফিরতে হয় ইংলিশদের। অবশেষে ১২তম আসরে ফুরোয় দীর্ঘ অপেক্ষা, ধরা দেয় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ৪৪ বছর ধরে যে ক্ষণটির অপেক্ষায় ছিল ইংল্যান্ড। ১৪ জুলাই লর্ডসের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় ইংলিশরা।

ফাইনালটাও ছিল উত্তেজনায় ঠাসা, রোমাঞ্চে ভরা। আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ, ক্লাইম্যাক্স-অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স; কী ছিল না সেখানে! আগে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড পেয়েছিল ২৪১ রানের মাঝারি সংগ্রহ। সেটিই পর্বতসমান হয়ে যায় ইংলিশদের সামনে। ৮৬ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। এরপর জস বাটলার ও বেন স্টোকসের ১১০ রানের দারুণ এক জুটিতে ম্যাচে ফেরে স্বাগতিকরা।

বাটলারের বিদায়ে জুটি ভাঙার পর নিয়মিত বিরতিতে আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় ইংল্যান্ড। তবে লড়ে গেছেন স্টোকস। তার হার না মানা ৮৪ রানের ইনিংসের সুবাদেই ম্যাচ হয় টাই, চলে যায় সুপার ওভারে। সুপার ওভারেও পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা। ইংল্যান্ড করে ১৫ রান। নিউজিল্যান্ডও করে ঠিক ১৫। সুপার ওভারেও টাই! শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের চেয়ে বাউন্ডারি বেশি মারায় শিরোপা ওঠে ইংল্যান্ডের হাতে।

অবিশ্বাস্য স্টোকসে অকল্পনীয় জয়

বিশ্বকাপ ফাইনালের ওই ইনিংসের জন্যই ইংলিশ ক্রিকেটে অমর হয়ে থাকতেন তিনি। কিন্তু বেন স্টোকস পরের মাসে গৌরবের অ্যাশেজে খেললেন আরেকটি মহাকাব্যিক ইনিংস।

হেডিংলিতে সিরিজের সেটি ছিল তৃতীয় টেস্ট। সিরিজে সমতা ফেরাতে ইংল্যান্ডের জয়ের বিকল্প ছিল না। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের সামনে ৩৫৯ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। টেস্টে এত রান তাড়া করে আগে কখনো জেতেনি ইংল্যান্ড। তার মধ্যে আবার এই টেস্টে তাদের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৬৭ রানেই! বড় লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাট করতে নেমেও তারা ১৫ রানেই হারায় দুই ওপেনারকে।

তবে তৃতীয় উইকেটে জো ডেনলি ও জো রুটের ১২৬ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। ডেনলির বিদায়ে ভাঙে জুটি। চতুর্থ দিনের শুরুতে ফিরে যান রুটও। এরপর জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে ৮৬ রানের জুটি গড়ে ফেলেন স্টোকস, জয়ের পথে ইংল্যান্ড এগিয়ে তখন ভালোভাবেই। কিন্তু জুটি ভাঙতেই বদলে যায় সব। ৪১ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায়। তখন জয় থেকে অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেট দূরে, ইংল্যান্ডের দরকার ৭৩ রান।

এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান জ্যাক লিচকে সঙ্গে নিয়ে সেই অসাধ্যটাই সাধ্য করেন স্টোকস। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৭৬ রানের শেষ উইকেট জুটিতে ইংল্যান্ড পায় ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়। জুটিতে লিচের অবদান মাত্র ১ রান, যে রানে সমতা আসে দুই দলের স্কোরে। এরপর প্যাট কামিন্সকে চার হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন স্টোকস। শেষ জুটিতে স্টোকসের রান ৪৪ বলে ৭৪! সব মিলিয়ে ২১৯ বলে ১৩৫ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস।

 

 

স্মিথের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন

বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গত আগস্টে অ্যাশেজ দিয়ে ১৬ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরেন স্টিভেন স্মিথ। এজবাস্টনে প্রত্যাবর্তনের টেস্টেই করেন জোড়া সেঞ্চুরি। লর্ডসে পরের টেস্টে এক ইনিংস খেলতে পেরে করেন ৯২ রান। জোফরা আর্চারের বাউন্সারে মাথায় আঘাত না পেলে হয়তো সেঞ্চুরিই করে ফেলতেন! ওই আঘাতের কারণে তিনি খেলতে পারেননি হেডিংলিতে তৃতীয় টেস্টে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ফিরে এসেই করেন ডাবল সেঞ্চুরি।

চার টেস্টে সাত ইনিংসে ১১০.৫৭ গড়ে তিনি করেন সিরিজে সর্বোচ্চ ৭৭৪ রান। তিনটি সেঞ্চুরির (যার একটি ডাবল) সঙ্গে ছিল তিনটি ফিফটি। মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে এক সিরিজে একাধিকবার সাতশ রান স্পর্শ করেন তিনি। প্রথমবার তিনি সাতশ ছুঁয়েছিলেন ২০১৪-১৫ মৌসুমে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে।

পেরেরা বীরত্বে শ্রীলঙ্কার অবিশ্বাস্য জয়

ফেব্রুয়ারিতে কুশল পেরেরার অসাধারণ এক ইনিংসে ডারবান টেস্টে অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ৩০৪ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল লঙ্কানরা। ষষ্ঠ উইকেটে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভারর সঙ্গে ৯৬ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন পেরেরা। এরপর পরপর দুই বলে ধনাঞ্জয়া ও সুরঙ্গা লাকমলকে ফিরিয়ে দেন কেশব মহারাজ। বেশিক্ষণ টিকেননি লাসিথ এম্বুলদেনিয়া ও কাসুন রাজিথা। দক্ষিণ আফ্রিকার জয়কে তখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল।

শেষ ব্যাটসম্যান বিশ্ব ফার্নান্দো যখন ক্রিজে আসেন, তখনো জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ৭৮ রান। ৮৬ রানে ব্যাট করছিলেন পেরেরা। সেখান থেকে একাই লড়াই করে শ্রীলঙ্কাকে ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয় উপহার দেন তিনি। দশম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭৮ রানের জুটিতে ফার্নান্দোর অবদান ছিল মাত্র ৬ রান, বাকিটা পেরেরার। দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ১৫৩ রানের অনবদ্য এক ইনিংস।

 

 

বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনি

সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত অক্টোবর-নভেম্বরে হওয়া বাছাইপর্ব থেকে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে ছয় দল। যার একটি পাপুয়া নিউগিনি। ‘এ’ গ্রুপের সেরা হয়ে বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করে তারা। এই প্রথম তারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে।

কোহলির নোটবুক উদযাপন

ডিসেম্বরের শুরুতে হায়দরাবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অসাধারণ এক ইনিংসে ভারতকে জেতান অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তার মাত্র ৫০ বলে ৬টি করে চার ও ছক্কায় করা অপরাজিত ৯৪ রানের সুবাদে ২০৭ রান টপকে যায় ভারত। অবিশ্বাস্য কিছু শটে ইনিংসটা সাজান কোহলি। শুধু শট নয়। ছিল উদযাপন, ছিল ক্ষীপ্রতা।

১৬তম ওভারে ক্যারিবীয় পেসার কেসরিক উইলিয়ামসকে ছক্কায় উড়ানোর পর কোহলি করেন ‘নোটবুক’ উদযাপন। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দেখা গিয়েছিল, উইলিয়ামস উইকেট পাওয়ার পর কল্পিত নোটবুক বের করে ব্যাটসম্যানের নাম লিখে রাখেন। এবার উইলিয়ামসকে ছক্কা হাঁকিয়ে কোহলি করেন একই কাজ! ম্যাচ শেষে কোহলি জানান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় তাকে আউট করার পর এভাবে উদযাপন করেছিলেন উইলিয়ামস। সেটিই উইলিয়ামসকে ফিরিয়ে দেন ভারত অধিনায়ক।

টেস্ট ফিরল পাকিস্তানে

এ বছরই ফুরিয়েছে পাকিস্তানের দীর্ঘ অপেক্ষা। ১০ বছর পর টেস্ট ক্রিকেট ফিরেছে পাকিস্তানে। ২০০৯ সালে পাকিস্তানের লাহোরে শ্রীলঙ্কার টিম বাসে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। হামলায় শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফ মিলিয়ে আহত হয়েছিলেন সাতজন।

এরপর পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত ছিল বেশ কয়েক বছর। পরবর্তীতে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, বিশ্ব একাদশ সীমিত ওভারের সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে গেলেও কোনো টেস্ট ম্যাচ আর হয়নি।

অবশেষে এ মাসে পাকিস্তানে টেস্ট ক্রিকেট ফেরে এক দশক পর। কাকতালীয় ব্যাপার, এক দশক আগে যাদের ওপর হামলা হয়েছিল, সেই শ্রীলঙ্কা দলের সফর দিয়েই পাকিস্তানে টেস্ট ক্রিকেট ফেরে। পাকিস্তানে দুই টেস্টের সিরিজ খেলেছে শ্রীলঙ্কা দল।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত ভারত

এবারের অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট দিয়ে শুরু হয় আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। যেটিকে বলা হচ্ছে আইসিসির বৈশ্বিক টেস্ট লিগ। দুই বছর মেয়াদী এই লিগে খেলছে শীর্ষ নয়টি টেস্ট খেলুড়ে দল। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্বার গতিতে ছুটছে ভারত। এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচ খেলে সবগুলোই জিতেছে বিরাট কোহলির দল। একমাত্র অপরাজিত দল তারাই। ৩৬০ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে টেবিলের শীর্ষে। ২৫৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। ৯ ম্যাচের মধ্যে তারা জিতেছে ৬টি, হেরেছে ২টি, ড্র হয়েছে অন্যটি। আর কারও পয়েন্ট একশ ছাড়াতে পারেনি এখনো। 

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিটি দল দুই বছরের মধ্যে ছয়টি সিরিজ খেলবে। যার তিনটি দেশের মাটিতে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। প্রতিটি সিরিজ হবে কমপক্ষে দুই টেস্টের। সর্বোচ্চ পাঁচটি টেস্ট থাকতে পারবে এক সিরিজে। এই সময়ে সিরিজ হবে মোট ২৭টি, যেখানে টেস্টের সংখ্যা ৭১টি। ২০২১ সালের জুনে লিগ টেবিলের শীর্ষ দুই দলকে নিয়ে হবে ফাইনাল।

লাবুশেনের চমক

বছরের শুরুতে ছিলেন ১১০তম স্থানে। গত অ্যাশেজে স্টিভেন স্মিথের বদলি হিসেবে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই বদলে যাওয়া শুরু মার্নাস লাবুশেনের। দারুণ পারফরম্যান্সে এ মাসের শুরুতে প্রথমবারের মতো ঢুকেছিলেন সেরা দশে। আর বছর শেষ করেছেন সেরা চারে থেকে! তাও মাত্র ১৩ টেস্ট খেলেই। টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র‍্যাঙ্কিংয়ে তার ওপরে আছেন শুধু বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ ও কেন উইলিয়ামসন।

ক্যারিয়ারের প্রথম ১৫ ইনিংসে লাবুশেনের ছিল না কোনো সেঞ্চুরি। পরের তিন ইনিংসে করেন তিন সেঞ্চুরি। এ বছর টেস্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনিই, ১৭ ইনিংসে করেছেন ১১০৪ রান। হাজার ছুঁতে পারেননি আর কেউ। তালিকার দুইয়ে থাকা স্মিথ ১৩ ইনিংসে করেছেন ৯৬৫ রান।

 

 

বিদায় বললেন যারা

এ বছর বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার অবসর নিয়েছেন। বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ খেলেই ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক। তবে দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি। বিশ্বকাপ দলে জায়গা না হওয়ায় সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ভারতের আম্বাতি রাইডু। আগস্টে ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা।

ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলেন ইমরান তাহির ও জেপি ডুমিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই ফরম্যাটে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের সেরা পেসার ডেন স্টেইন। ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক যুবরাজ সিং। ওয়ানডে থেকে অবসর নেন শ্রীলঙ্কান গ্রেট লাসিথ মালিঙ্গা। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমির। এছাড়া আরও বেশ কিছু ক্রিকেটার ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন এ বছর।

চলে গেলেন যারা

এ বছর না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো ক্রিকেটারের সংখ্যাও কম নয়। সেপ্টেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পাকিস্তানের কিংবদন্তি লেগ স্পিনার আব্দুল কাদির। এ মাসেই থাইরয়েড ক্যান্সারের কাছে হার মেনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার বব উইলিস। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার কেলি সেমুর, ইংল্যান্ডের অ্যালান মোস, অস্ট্রেলিয়ার টনি মানসহ এক সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা আরও বেশ কয়েকজন না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

এবং আম্পায়ারিং বিতর্ক

বছরজুড়েই বেশ আলোচিত ছিল বাজে আম্পায়ারিং। বিশেষ করে বিশ্বকাপ ফাইনালে কুমার ধর্মসেনার মারাত্মক সেই ভুল নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল ক্রিকেট বিশ্বে। সেদিন শেষ ওভারে দ্বিতীয় রান নেওয়ার প্রচেষ্টায় নিজেকে বাঁচাতে ডাইভ দেওয়া বেন স্টোকসের ব্যাটে লেগে বল পেরিয়ে যায় সীমানা। দৌড়ে ২ আর ওভার থ্রো থেকে ৪ মিলিয়ে ইংল্যান্ডকে ৬ রান দেন আম্পায়ার ধর্মসেনা।

অথচ ইংল্যান্ডের পাওয়ার কথা ছিল ৫ রান। কারণ, ফিল্ডার বল থ্রো করার সময় দুই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় রানের জন্য একে অপরকে অতিক্রম করেননি। নিয়ম অনুযায়ী ওভার থ্রো থেকে বাউন্ডারি এলে সেই চার রানের সঙ্গে দৌড়ে নেওয়া তত রানই যোগ হবে, ফিল্ডার বল ছাড়ার আগে যতবার দুই ব্যাটসম্যান রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে একে অপরকে অতিক্রম করতে পারবেন।

এমসিসি থেকে শুরু করে আইসিসির সাবেক বর্ষসেরা আম্পায়ার সাইমন টফেল; সবাই ধর্মসেনার ওই সিদ্ধান্তকে ভুল বলেছিলেন।

ধর্মসেনার ভুলে ইংল্যান্ডের বাড়তি পাওয়া এক রান বড় ভূমিকা রেখেছিল ফাইনালে। ম্যাচ টাই হয়ে সুপার ওভারে গিয়েছিল। এরপর সুপার ওভারও টাই হলে বাউন্ডারির সংখ্যায় নিউজিল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে থেকে শিরোপা জিতেছিল ইংল্যান্ড। অথচ ইংল্যান্ড বাড়তি এক রান না পেলে মূল ম্যাচেই জিতে যেত নিউজিল্যান্ড!

একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটে গত নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান অ্যাডিলেড টেস্টেও। মোহাম্মদ আব্বাসকে লেগ সাইডে খেলে দ্বিতীয় রানের জন্য ছুটেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। শাহিন শাহ আফ্রিদির ওভার থ্রো থেকে হয়ে যায় চার। দৌড়ে ২ আর ওভার থ্রো থেকে ৪ মিলিয়ে আম্পায়ার অস্ট্রেলিয়াকে দেন ৬ রান।

পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, আফ্রিদি যখন বল থ্রো করেছেন, ব্যাটসম্যান ওয়ার্নার ও মার্নাস লাবুশেন তখনো দ্বিতীয় রানের জন্য একে অপরকে অতিক্রম করেননি। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার পাওয়ার কথা ছিল ৫ রান। সে ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন ইংল্যান্ডের রিচার্ড ইলিওর্থ ও মাইকেল গফ।

এছাড়া গত অ্যাশেজে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই সাতটি ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন দুই অনফিল্ড আম্পায়ার আলিম দার ও জোয়েল উইলসন।

শুধু অনফিল্ড আম্পায়ার কেন, ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন স্বয়ং টিভি আম্পায়ার পর্যন্ত! গত নভেম্বরে ব্রিসবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্সের বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান। বোলার ওভারস্টেপিং করেছেন কি না, সেটা পরীক্ষা করে দেখতে সিদ্ধান্তটা টিভি আম্পায়ারের কাছে পাঠান মাঠের আম্পায়ার।

রিপ্লেতে দেখা যায়, কামিন্সের বুটের কোনো অংশ লাইনের পেছনে ছিল না। অর্থাৎ নো বল। ধারাভাষ্যকাররাও বলছিলেন, নো বল হবে; বেঁচে যাবেন ব্যাটসম্যান। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইংলিশ টিভি আম্পায়ার মাইকেল গফ নো বল দেননি!

অপেক্ষায় নতুন বছর। পুরোনো ব্যর্থতা ঝেরে নতুনকে স্বাগত জানাচ্ছে সবাই। নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন ও নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার জয়গান হচ্ছে। ক্রিকেটাররাও শামিল এ উৎসবে। নতুন পথচলার প্রত্যাশা নিয়ে শুরুর অপেক্ষায় মিশন ২০২০।

 

ঢাকা/পরাগ/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়