ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অ্যান্টার্কটিকার রক্তক্ষরণের রহস্য উন্মোচন

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অ্যান্টার্কটিকার রক্তক্ষরণের রহস্য উন্মোচন

মোখলেছুর রহমান: পৃথিবীর দুর্গমতম, শীতলতম, শুষ্কতম তথা নির্জনতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। মহাদেশটির ৯৮ শতাংশ বরফে ঢাকা।

শুভ্র এই মহাদেশটিতে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অমীমাংসিত একটি রহস্য হচ্ছে রক্তবর্ণ জলপ্রপাত। বিষয়টিকে ‘অ্যান্টার্কটিকার রক্তক্ষরণ’ বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি রক্তবর্ণ জলপ্রপাতের উৎসের রহস্য উদঘাটন করেছেন একদল বিজ্ঞানী।

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ ভ্রমণকারী একদল অভিযাত্রী সর্বপ্রথম ১৯১১ সালে ট্রানট্রান্টটিক পর্বতমালা থেকে ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) দূরে টেলর হিমবাহের উত্তর দিকে রক্ত-লাল পানির প্রবাহ আবিষ্কার করেন। তখন তারা ধারণা করেছিলেন যে, লাল রঙের শ্যাওলাগুলোই পানির এই লাল রঙের জন্য দায়ী। স্থানটি দ্রুত রক্তের জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে, যদিও রক্ত বা লাল শেওলার সঙ্গে এর যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

সাম্প্রতিক নতুন এক গবেষণার ফলে বলা হয়েছে, এই রক্তবর্ণের জলপ্রপাত আসলে আয়রন সমৃদ্ধ সমুদ্রপৃষ্ঠের ফল যা বাতাস এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে মরিচায় রুপান্তর হয়। অর্থাৎ আয়রন সমৃদ্ধ হ্রদের পানি বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসছে, তখনই সেটা লাল হয়ে যাচ্ছে। ফলে টেলর হিমবাহের গায়ে রক্তের ধারা চোখে পড়ছে। এই মরিচা জল খুবই লবণাক্ত।

এছাড়াও বর্তমানে ভূতত্ত্ববিদরা খুঁজে পেতে সমর্থ হয়েছেন যে, ঠিক কোথা থেকে এই মরিচা মিশ্রিত পানির ধারা বয়ে আসছে।

আলাস্কা ফেয়ারব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, এই রক্তবর্ণের জলপ্রপাত ১.৫ মিলিয়ন বছরের পুরোনো একটি হিমবাহের নিচে থেকে বয়ে আসছে। গবেষণার তথ্য মতে, এক বিলিয়ন বছর পূর্বে টেলর হিমবাহ এই বরফের মহাদেশে প্রসারিত হওয়ার সময় তুষার ও বরফের অসংখ্য স্তরগুলোর মধ্যে একটি ছোট লবণাক্ত সমুদ্রের হ্রদ আটকে গিয়েছিল।  তখন থেকে নিয়মিত তুষারপাতের আগ পর্যন্ত তা আরো বেশি লবণাক্ত হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠে ঘনীভূত হতে থাকে।

আবার এই সমুদ্রের হ্রদের খাঁজে খাঁজে অন্তর্নিহিত ছিল আয়রনের টুকরা। আর এই আয়রনের টুকরোগুলোর কারণেই এই ঝরনার পানি লাল হয়েছে। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পানি বাইরে বের হওয়ার এই পথটি কীভাবে তৈরি হলো তা এখনও পর্যন্ত রহস্যই রয়ে গেছে।

এ গবেষণা কাজে গবেষক দলটি রেডিও-ইকো সাউন্ডিং (আরইএস) নামে একটি রাডার পদ্ধতি ব্যবহার করে, যা হিমবাহ অনুসন্ধানের জন্য সাধারণত ব্যবহৃত হয়। এ প্রযুক্তির সাহায্যে হিমবাহের নিচে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পাঠানো হয়। সেখান থেকে যে সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন হিমবাহের নিচে তরল অবস্থায় থাকা এ বিশাল হ্রদের অস্তিত্ব।

এই অনুসন্ধান থেকে অবশেষে আরও একটি ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে যে, কীভাবে তরল পানি, তা যত লবণাক্তই হোক না কেন- একটি অত্যন্ত ঠান্ডা হিমবাহ থেকে প্রবাহিত হতে পারে। গবেষকদের মতে, জমে যাওয়ার আগে পানি তাপ ছাড়ে। সেই তাপ নোনা জল জমতে দেয় না। ফলে ওই তাপমাত্রাতেও পানি তরল অবস্থাতেই থেকে যাচ্ছে।

এই আবিষ্কারটি গবেষকদের জিওকেমিক্যাল বিবর্তন ও মাইক্রোবাইল পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে। এই গবেষণালব্ধ ফল জার্নাল অব গ্লাসিওলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ মে ২০১৭/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়