ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পানি খেতে গিয়ে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছেন না তো?

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ২৬ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পানি খেতে গিয়ে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছেন না তো?

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্লাস্টিকের বোতলজাত পানিতে প্রচুর পরিমাণে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের কণা থাকে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।

প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি জানি। দৈনন্দিন কাজে আমরা নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করে চলেছি, যা পুনরায় ব্যবহার করার অযোগ্য হওয়ায় কঠিন এবং ক্ষতিকর আবর্জনায় পরিণত হচ্ছে। প্লাস্টিকের পানির বোতলও ঠিক একই ধরনের বর্জ্য। প্লাস্টিকের পানির বোতল অন্যান্য প্লাস্টিকজাত আবর্জনার সঙ্গে একত্রিত হয়ে নদীনালায় গিয়ে মিশছে, যা বাস্তুসংস্থান নষ্ট করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের চরম ক্ষতিসাধন করছে। এখন আমরা হয়তো বুঝতে পারছি যে, প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের জন্য খুব একটা ভালো নয়।

তাছাড়া, প্রতিনিয়ত প্লাস্টিকের বোতলে পানি খাওয়ার ফলে প্রচুর প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা আমরা খেয়ে ফেলছি। এক চুমুক পানিতে যে পরিমাণ প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা থাকে তা আমাদের চিন্তার বাইরে।

নতুন এক গবেষণা অনুযায়ী, প্লাস্টিকের বোতলজাত পানিতে এতো পরিমাণ আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের কণা থাকে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর ফলে স্বাস্থ্যের চরম অবণতি হয়। বিবিসির এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্লাস্টিকের মাধ্যমে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকগুলো খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা করেছে।

প্লাস্টিকের আণুবীক্ষণিক কণাগুলো আসলে অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক যা বোতলজাত বা প্যাকেটজাত যেকোনো খাদ্য পণ্যে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এক জরিপ অনুযায়ী, প্রতিবছর ২,৭৫,০০০ মেট্রিকটন প্লাস্টিক বিভিন্ন পানির উৎসে মিশ্রিত হচ্ছে, যার ফলে চরম পানিদূষণ সৃষ্টি হচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্লাস্টিকের পানির বোতলে আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের কণার উপস্থিতির পরীক্ষা করেন। তারা ৯টি দেশে আন্তর্জাতিকভাবে বিক্রিত ১১টি কোম্পানির মোট ২৫৯ বোতল পানির ওপর এই পরীক্ষা চালান। দেখা যায় যে, এক লিটার পানিতে গড়ে আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের কণার পরিমাণ ১০.৪। কিছু বোতলে কোনো প্লাস্টিকের কণা পাওয়া যায়নি এবং নেসলে কোম্পানির এক লিটার পানির বোতলে ১০,০০০ আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের কণা পাওয়া যায়। গবেষণায় আরো পাওয়া গেছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিদিন প্লাস্টিকের বোতলজাত এক লিটার পানি পান করেন তাহলে তার শরীরে এক বছরে ১০,০০০ প্লাস্টিকের আণুবীক্ষণিক কণা প্রবেশ করবে।

আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের কণা প্রকৃতপক্ষে মানবদেহের কি ক্ষতি করে তা না জানা গেলেও, মানবদেহে প্লাস্টিকের অস্তিত্ব গড়ে ওঠা খুব একটা ভালো দিক বলে মনে করেন না গবেষকগণ। মাছের দেহে প্লাস্টিকের অস্তিত্ব গড়ে ওঠার ফলাফল সম্পর্কে জানা গেছে অনেক আগেই। আচরণগত পরিবর্তনের পাশাপাশি হরমোনের পরিবর্তন এরকম নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে।

প্লাস্টিকের বোতলজাত পানিতে প্লাস্টিকের মিশ্রণ, বিষয়টা আসলেই ভয়ের। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত ৮৩ শতাংশ পানিতে প্লাস্টিকের আণুবীক্ষণিক কণা রয়েছে। প্লাস্টিকের বোতলের তুলনায় পাইপলাইনের পানিতে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ প্লাস্টিকের কণা থাকে।

আসলে সমস্যাটির উপযুক্ত কোনো সমাধান বের করা অত্যন্ত কঠিন। কোম্পানি এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বোতল বা পাইপলাইনে পানি প্রবেশের আগে তা পরিশুদ্ধ করে নিতে পারে কিন্তু তাতে করে খুব একটা সুবিধা হবে বলে মনে হয় না। অন্যান্য প্লাস্টিকজাত পণ্যের বেলায়ও একই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আছি আমরা। ভালোমতো পানি পরিশোধন বিরাট এই সমস্যার সাময়িক একটা সমাধান হতে পারে কিন্তু কোনো পরিপূর্ণ সমাধান নয়। একটি বাস্তুসংস্থানে মানুষের পাশাপাশি অনেক জীবজন্তু বসবাস করে। প্লাস্টিক ব্যবহার মানুষসহ পরিবেশে বসবাসকারী প্রত্যেকটি প্রাণীর চরম ক্ষতি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। সকল দেশের সরকার যদি একযোগে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করে দেয় তাহলে এই সমস্যার একটা কার্যকরী সমাধান হতে পারে।

তথ্যসূত্র : ফিউচারিজম



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়