ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পানি পানে কেমন বোতল ব্যবহার করা উচিত?

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৪ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ১৬:২০, ১৬ মে ২০২১
পানি পানে কেমন বোতল ব্যবহার করা উচিত?

প্রতীকী ছবি

বাজারে প্লাস্টিক, স্টিল, গ্লাস এর তৈরি বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন রকমের বোতল আছে পানি রাখার জন্য। কিন্তু আসলে সবগুলোই কি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত? ইউরোপের পরিবেশ রক্ষার আইন অনুযায়ী রিসাইকেল করা যায় এমন বোতল কম ব্যবহার করাই ভালো। আর তার মধ্যে যে সকল বোতল ফেলে দিলে মাটি ও পরিবেশের ক্ষতি হয় সেগুলো তো রীতিমতো বর্জনীয়।

পানি খাওয়ার জন্য এমন বোতল ব্যবহার করা উচিত যে বোতল বারবার ব্যবহার করা যায়। সহজে নষ্ট হয় না এর মধ্যে পানি রাখলে এবং পানির গুণগত মানও ঠিক থাকে। আমরা একবার ব্যবহার করা যায় এমন পানির বোতল যদি বার বার ব্যবহার করি তাহলে এতে পানির মধ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় এটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

যদিও কোন ধরনের বোতল আমরা বারবার ব্যবহার করতে পারব আর ঠিক কোন ধরনের বোতল ব্যবহার করতে পারব না, এটা একটা কঠিন প্রশ্ন। এজন্য আমাদের জানতে হবে সেই বোতলের জীবনচক্র বা ঠিক কীভাবে বোতলটি তৈরি হয়।

একটি বোতল তৈরি করা থেকে ব্যবহার এবং ব্যবহার শেষে নষ্ট করে ফেলা পর্যন্ত পুরোটাই জীবনচক্র হিসেবে ধরা হয়। ২০১২ সালের একটি ইতালীয় গবেষণা থেকে বের হয়ে আসে, বারবার ব্যবহারের উপযোগী কাঁচের বোতল হলো সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব। যেখানে প্লাস্টিকের ‘ওয়ান-টাইম’ বোতল পরিবেশের জন্য তেমন ভালো না।

কোন ধরনের বোতল বারবার ব্যবহার করা যায়?

২০১১ সালের আরেকটি গবেষণায় উঠে এসেছে শুধুমাত্র অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল এবং পলিপ্রোইলেনে প্লাস্টিকের তৈরি বোতলই বার বার ব্যবহার করা যায়। যদিও স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়াম তৈরির প্রক্রিয়া পরিবেশের ওপর বেশ জোরালো ও ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। এই ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় এক্ষেত্রে পলিপ্রোইলেন প্লাস্টিকের বোতলই সবচেয়ে ভালো। কেননা স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়াম তৈরির সময় পরিবেশের ওপর যে পরিমাণে প্রভাব ফেলে এতটা প্রভাব এই প্ল্যাস্টিক তৈরির সময় হয় না। এই ধরনের প্ল্যাস্টিকের বোতল অনেক হালকা হয় যার ফলে আমরা সবসময় খুব স্বাভাবিকভাবেই এটা বহন করতে পারি।

অপরদিকে, ধাতু এবং কাঁচের তৈরি জিনিস যদিও বেশিদিন ব্যবহার করা যায় কিন্তু তৈরির সময় থেকে শুরু করে বিনষ্ট করে ফেলা পর্যন্ত পরিবেশের ওপর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করলে প্লাস্টিকের তৈরি বোতলই ভালো বলে বিবেচনা করা যায়। তবে প্লাস্টিকের বোতল আবার ধাতু এবং কাঁচের তৈরি বোতলের মতো অত দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা যাবে না।

অনেকের কাছে কাঁচের বোতলই বেশি গ্রহণযোগ্য, যেহেতু এখানে স্বাস্থ্যগত ব্যাপারটাও বেশ লক্ষণীয় একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বর্তমান সময়ের বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, প্লাস্টিকের বোতলে রাখা পানির মধ্যে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কিছু কণা পানির সঙ্গে মিশে যায়। যেটা আবার মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।

আবার অনেকে ব্যবহারের সুবিধার জন্য প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেন এবং দুই একবার ব্যবহার করেই সেই বোতল ফেলে দেন যাতে করে পানির মধ্যে কোনো বিক্রিয়া না হয় এবং পানির গুণগত মান নষ্ট না হয়। কারণ এই ধরনের বোতল অনেক হালকা ও সহজে বহনযোগ্য।

যেকোনো বোতল বার বার ব্যবহারের সময় আমাদের কয়েকটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে যাতে করে এই বোতল থেকে আমাদের কোনো ক্ষতি না হয়:

* আপনি যদি এমন কোনো স্থানে থাকেন যেখানে ট্যাপের পানি খাওয়া নিরাপদ, তাহলে অবশ্যই ট্যাপ থেকে বোতলে পানি ভরে রাখবেন। বোতলের মধ্যে পানি দীর্ঘ সময় ধরে রেখে দিবেন না।

* পানির বোতল নিয়মিত পরিষ্কার করুন। এতে করে আপনার বোতলটি স্বাস্থ্যকর থাকবে এবং এটা তাড়াতাড়ি নোংরাও হবে না।

* বোতলের রঙ যদি পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে সেই বোতল ফেলে দিন। রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়া বোতল ব্যবহার করবেন না।

সুতরাং এটা দেখা যায় যে, পানি খাওয়ার বোতল ব্যবহার করলে সেটার ক্ষতিকারক প্রভাব আছেই। হোক সেটা পরিবেশগত অথবা হোক সেটা স্বাস্থ্যগত। সর্বশেষে এটুকুই বলা যায়, সরাসরি ট্যাপের পানি অথবা ঝর্নার পানি খাওয়াটাই সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু যেহেতু আমাদের জীবনযাপনে বোতল ব্যবহার করতেই হয়, তাই বোতলটি সঠিকভাবে পরিচর্যার মধ্যে রাখতে হবে। যাতে আপনার শরীরের ওপর কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে না পারে।

তথ্যসূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়