ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিজ্ঞানের সেরা ১৫ রহস্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৪, ৯ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিজ্ঞানের সেরা ১৫ রহস্য

বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, ‘ওরা জানেনা যে ওরা জানেনা, কিন্তু আমি জানি যে আমি জানিনা।’ এক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, কেননা বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি। তারপরও বিজ্ঞানের অনেক রহস্য আমাদের অজানাই রয়ে গেছে, যা যুগে যুগে কালে কালে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে। বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় ১৫ রহস্য নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

আসলে এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা খুবই অল্প জানি। সীমাহীন এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কৃষ্ণগহবর যা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা আমাদের পক্ষে দুস্কর হয়ে দাঁড়াবে। মহাবিশ্বের এতো অজানা রহস্যের মধ্যে আমাদের সর্বপ্রথম অজানা রহস্যটি হলো, এই মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হলো? অনেক মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানীগুণীর চিন্তা অনুসারে হয়তো মহাবিশ্বের কোনো সূত্রপাত অবশ্যই ছিল নতুবা মহাবিশ্ব যেখানে বর্তমানে যেখানে আছে বরাবরই সেখানেই ছিল।

কৃষ্ণগহবরের ভেতরের রহস্য

মহাবিশ্বের এই বিশাল রহস্যময় এক গোলকধাঁধায় কৃষ্ণগহবরগুলো আসলে আরেক রহস্যময় দুনিয়ার জন্ম দেয়। কৃষ্ণগহবরগুলো আসলে মহাবিশ্বের ভেতরে অবস্থিত এমন কিছু জায়গার সমষ্টি যেখানে মাধ্যাকর্ষণ বল অত্যন্ত শক্তিশালী; এতোটাই শক্তিশালী যেখানে আলো তার পথ হারিয়ে ফেলে। আসলে কৃষ্ণগহবরের ভেতরের রহস্য নিয়ে কেউই তেমন মজবুত ব্যাখ্যা দিয়ে যেতে পারেননি। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস কৃষ্ণগহবরের রহস্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ নামক বিশেষ এক তাত্ত্বিক ধারণার কথা বলেছেন। তবে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ কৃষ্ণগহবরের বাইরে অবস্থান করার কারণে তত্ত্বটিও অনিশ্চিত এক রহস্যের কথা বলে।

মহাবিশ্বের ভাগ্য

বিজ্ঞানীরা যেমন মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি, ঠিক তেমনি মহাবিশ্ব কিভাবে সমাপ্তির দিকে চলে যাবে সেটারও সুস্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব একমাত্র সূর্যের উপস্থিতির কারণে টিকে আছে এবং এই জীবনের অস্তিত্ব চিরস্থায়ী নয়। অন্যান্য সকল নক্ষত্রের মতো একদিন সূর্যেরও মৃত্যু ঘটবে, সাথে মৃত্যু ঘটবে জীবনের অস্তিত্বেরও। বিজ্ঞানীরা এবিষয়েও একমত যে, একদিন এই সমগ্র মহাবিশ্ব ধ্বংস হবে; কিন্তু কিভাবে সেটা হবে তা নির্ভর করে বেশকিছু অজানা তথ্য, যেমন; মহাবিশ্বের আকার, ঘনত্ব এবং এর মধ্যে অবস্থানকারী কৃষ্ণবস্তুর উপস্থিতির ওপর।

কৃষ্ণবস্তু রহস্য

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে সমগ্র মহাবিশ্ব এই কৃষ্ণবস্তু দিয়েই তৈরি যা থেকে কোনো আলো বা শক্তির নিঃসরণ ঘটে না। আসলে কৃষ্ণবস্তুর রহস্য এবং এর সৃষ্টি সকলের কাছে অজানা থাকলেও বিজ্ঞানীরা এটির অস্তিত্ব এবং কার্যকারিতা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই মতামতে উপনীত হোন যে, কৃষ্ণবস্তু অবশ্যই আছে এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টি থেকে অন্ত পর্যন্ত এর অস্তিত্ব স্থায়ী থাকবে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট মহাবিশ্ববিদ সিন ক্যারল বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণবস্তুসহ মহাবিশ্বের সকল রহস্য মানবজাতির নিকট তুলে ধরতে পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কৃষ্ণবস্তুর রহস্য মানুষের কাছে অজানাই রয়ে যাবে।’

পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি রহস্য

পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বলতে আসলে সকল জীবনকেই বোঝায়, শুধুমাত্র মানুষের জীবন নয় এবং এই প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার শেষ নেই। প্রতিনিয়ত নানান গবেষণা চলছে, চলছে সকল সম্ভাব্য পরীক্ষা-নীরিক্ষা। কিভাবে মহাকাশ থেকে পৃথিবী অবধি প্রাণের এই সঞ্চারণ ঘটলো আর কিভাবেই এই প্রাণ প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে তা নিয়ে বিজ্ঞানের গবেষণার শেষ নেই এবং বিজ্ঞান এই সকল প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক। এখন আসল কথা হচ্ছে, বিজ্ঞানের কোন শাখা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবে। এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলছে প্রতিনিয়ত মতবিনিময়। আর বিজ্ঞানের কোন অংশ প্রাণের অস্তিত্বকে কিভাবে দেখবে তা নিয়েও রয়ে যায় প্রশ্ন।

মিশরের পিরামিড রহস্য

মিশরের বিস্ময়কর পিরামিডগুলো খ্রিস্টপূর্ব ২৫৮৯ এবং ২৫০৪ অব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। আসলে বিস্ময় এই জায়গায় যে, সেগুলো যদি এযুগে তৈরি করা হতো তাহলেও পিরামিডগুলো আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যার আশ্চর্যজনক এক উদাহরণ হয়ে উঠতো। প্রশ্ন রয়ে যায়, কিভাবে সেসময় সেই মরু অঞ্চলের প্রাচীন লোকজন এই বিস্ময়কর পিরামিডগুলো গড়ে তুলেছিল। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে, এসকল পিরামিডগুলো তৈরির পেছনে ভীনগ্রহী প্রাণীদের (অ্যালিয়েন) হাত ছিল। অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ মতামত প্রকাশ করেন যে, সেসময়কার নানান কলাকৌশল, যন্ত্রকৌশল ও প্রকৌশলবিদ্যার মাধ্যমে মিশরের তপ্ত মরুঅঞ্চলের মানুষেরা সেসকল পিরামিড গড়ে তুলেছিল। মিশরের গিজায় অবস্থিত নানান পিরামিডের বিস্ময়কর রহস্য, এই মরু অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস গবেষণায় এক নতুন মাত্রা যোগ করে যা প্রতিনিয়ত এক গভীর আশ্চর্যের সূত্রপাত ঘটিয়ে চলেছে।

ভীনগ্রহের প্রাণী রহস্য

বিস্ময় জাগানো এই পৃথিবী, মহাবিশ্বে রহস্যের শেষ নেই। সুবিশাল পিরামিড থেকে শুরু করে তৎকালীন মানবসৃষ্ট নানান স্থাপনা আমাদের প্রতিনিয়ত বিস্মিত করে তোলে। পৃথিবীর বাইরে অবস্থানকারী ভীনগ্রহী প্রাণীদের সাহায্য ছাড়া এসব কিছুই সম্ভব হতো না বলে মনে করেন অনেক বিশিষ্টজন। পৃথিবীর বাইরেও বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণের অস্তিত্ব আছে এবং তাদের মাধ্যমেই এসকল কিছুর সূত্রপাত এবং এগিয়ে যাওয়া তাদের হাত ধরেই বলে মনে করেন অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী। আমরা যদি মনে করি এসবই মানুষের দ্বারা সৃষ্ট, তাহলে পৃথিবীর বাইরেও যে ভিন্ন এক দুনিয়া আছে তা বিশ্বাস করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। যদি ভিন্ন দুনিয়ায় ভিন্ন প্রাণের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে কি আমরা আমাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেসব রহস্যের সমাধান বের করতে পারবো নাকি পারবোনা? প্রশ্ন রয়েই যায়। কে জানে তারা হয়তো আছে আমাদের দৃষ্টির আড়ালে, রহস্যময় এক দুনিয়ায়।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়