ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

প্রাণীর সাহায্যে অভিনব আবিষ্কার

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৫, ১৪ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাণীর সাহায্যে অভিনব আবিষ্কার

আমাদের চারপাশে বিভিন্ন প্রাণী হয়তো বিজ্ঞানীদের মতো ল্যাবে কাজ করে না। কিন্তু ছোট-বড় এসব প্রাণী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ক্যানসার, ভূমিকম্প এবং অন্যান্য রহস্য সমাধানে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করতে পারে। পড়ুন বিস্তারিত-

নভোচারীদের জন্য কাঠবিড়ালী: ওজনহীনতা মানুষের দেহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। নভোচারীরা খুব সামান্য সময়ের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ করলেও তারা পেশী এবং হাড় ক্ষয়জনিত সমস্যায় ভোগেন। সমস্যা থেকে বের হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। এই অবস্থার সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা আর্কটিক অঞ্চলের স্থলচর কাঠবিড়ালীর ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন। স্তন্যপায়ী এই প্রাণী মাসের পর মাস শীতনিদ্রায় কাটিয়ে দেয় কিন্তু এর পেশী এবং হাড়ে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়ে না। আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়নবিদ কেলি ড্রিউ বলেন, ‘আমরা যদি বুঝতে পারি প্রাণীটি কীভাবে অভিযোজিত হয় তাহলে মানুষের মধ্যেও এমন ক্ষমতা তৈরি করতে সমর্থ হবো।’

জলবায়ু পরিবর্তন বুঝতে তিমি: গ্রিনল্যান্ডের বাফিন উপসাগরের বৃহদাকার তিমির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব জরিপ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এই প্রজাতির তিমি ৯ ফুট লম্বা দাঁতবিশিষ্ট এবং হিমশীতল পানি সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন। ২০১০ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্রিস্টিন লেইডেন এবং তার দল ১৪টি তিমির ওপর গবেষণা চালান। তারা তিমিগুলোর দেহে থার্মোমিটার এবং স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগিয়ে দেন। তিমিগুলো শীতযাপনের জন্য উপসাগরে অবস্থানকালে তারা সেখানকার পানির তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন।

ক্যানসারের গোপন রহস্য উন্মোচনে জেব্রা মাছ: আশ্চর্যজনকভাবে জেব্রা মাছ এবং মানুষের মধ্যে কিছু জিনগত মিল রয়েছে। বিশেষ করে এপিসি জিন যা পাকস্থলী ক্যানসারের সাথে সম্পর্কিত। এই মাছের পোনা দ্রুত পরিবর্তিত হয় এবং কয়েকদিনের ব্যবধানে পূর্ণাঙ্গ মাছে পরিণত হয়। আমেরিকার ওকলাহামা মেডিকেল গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ডেভিড জোনস এই মাছগুলোর দ্রুত পরবর্তিত কোষের গঠন খতিয়ে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘এই মাছের প্রজাতি মানুষের কতরকম রোগের রহস্যের সমাধান দিতে পারবে তার কোনো সীমা নেই।’

ল্যান্ড মাইন খুঁজে পেতে ইঁদুর: মোজাম্বিক, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং অন্যান্য অনেক দেশে বিভিন্ন সময়ে হওয়া যুদ্ধের সময় যে ল্যান্ড মাইন মাটিতে পোঁতা ছিল সেগুলো কয়েক দশক ধরে ওই অবস্থাতেই আছে। সেগুলো নানা রকম দুর্ঘটনা ঘটায়। অ্যাপোপো নামে তানজানিয়ার একটি সংস্থা এর সমাধান বের করেছে। সংস্থাটি ইঁদুর ব্যবহার করছে ল্যান্ড মাইনগুলো খুঁজে বের করার জন্য। ইঁদুরগুলো খুবই হালকা ওজনের এবং এরা মাইনের উপর দিয়ে চলে গেলে মাইন বিস্ফোরিত হয় না। এদের শরীরে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হয় এবং এরা কোনো মানুষের তুলনায় খুব দ্রুত মাইনের সন্ধান দিতে পারে।

ভূমিকম্পের পূর্বাভাসে পেতে: পেরুতে পরিচালিত এক গবেষণার ফলে মানুষ হয়তো এখন বিশ্বাস করবে, ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই বন্যপ্রাণীর মাধ্যমে পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব। ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর পেরুর রাজধানী লিমায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর ২৩ দিন আগে থেকে বিজ্ঞানীরা প্রায় ৫ প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তারও আগে বিজ্ঞানীরা ৫ থেকে ১৫ প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণীর ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। ভূমিকম্পের অন্তত এক সপ্তাহ আগে তারা প্রাণীগুলোর কোনো নড়াচড়া লক্ষ্য করেননি। গবেষণা দলটির প্রধান রেচেল এ গ্রান্ট বলেন, ‘প্রাণীদের মধ্যে ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা আগে থেকে বুঝে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে এবং আমরা তাদের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়ার কাজে অন্যান্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার সাথে ব্যবহার করতে পারি।’

জোঁকের মাধ্যমে প্রাণীর খোঁজ: একটি গভীর বনে আপনি সেখানকার সকল প্রাণী অনুসন্ধান করে বের করতে পারবেন না। সেজন্য বিজ্ঞানীরা জোঁক এবং অন্যান্য পরজীবী প্রাণীর মাধ্যমে অন্য প্রাণীর অনুসন্ধান করছেন। পরজীবী প্রাণীরা যেসকল প্রাণীর দেহে বাস করে তাদের দেহে আক্রান্ত প্রাণীদের ডিএনএ থাকে। এর মাধ্যমেই পরজীবী নিয়ে গবেষণা করলে স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংখ্যা জানা যাবে।

ঘূর্ণায়মান বাতাসের গতিপথ তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করল টিয়া পাখি: বিজ্ঞানীরা টিয়া পাখির চোখে ছোট আকৃতির চশমা পরিয়ে পাখিটিকে একটি লেজারের মধ্য দিয়ে উড়িয়ে দেন। ফলাফল হিসেবে বিজ্ঞানীরা দেখেন, ঘুর্ণায়মান বাতাসের গতিপথের যে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব রয়েছে সেটিকে টিয়া পাখির উড্ডয়ন ভুল প্রমাণিত করেছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ডিয়ানা চিন বলেন, ‘আমরা যে ৩টি মডেল ব্যবহার করেছি তার সঙ্গে প্রচলিত তত্ত্বের কোনো মিল নেই। প্রচলিত তত্ত্ব এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে।’

দীর্ঘায়ুর রহস্য বুঝতে তিমি: এক প্রজাতির তিমি আছে যা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দীর্ঘায়ু স্তন্যপায়ী প্রাণী। তিমির এই প্রজাতি মানুষের জন্য বার্ধক্যরোধের রহস্য উদঘাটন করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এই প্রজাতির তিমি ২১১ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, তাদের দেহে ক্যানসার কোষ তৈরি না হওয়ায় তারা এমন দীর্ঘায়ু লাভ করে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, মানুষের তুলনায় এই প্রজাতির তিমির ২০০০ হাজার গুণ বেশি কোষ রয়েছে এবং এর ফলে তাদের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তাদের জিনোমের মধ্যে এমন কি আছে যা তাদের দীর্ঘায়ু দান করে।

মাছরাঙা পাখি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বুলেট ট্রেন: জাপানি বিজ্ঞানীরা যখন ২০০ মাইল ঘণ্টার গতিবেগের বুলেট ট্রেন আবিষ্কার করেন, তখন তারা এটা খতিয়ে দেখেননি যে, বুলেট ট্রেনগুলো সুড়ঙ্গ অতিক্রম করার সময় তীব্র গর্জন করে। ট্রেনগুলোর শব্দ কমাতে তারা মাছরাঙা পাখির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন। মাছরাঙার সরু লম্বা ঠোঁট থাকায় পাখিটি যখন পানির মধ্যে ডুব দেয় তখন সামান্য পরিমাণ পানিও ছিটকে ওঠে না। পরবর্তীতে বুলেট ট্রেনগুলোর অগ্রভাগ অনেক সরু করা হয় যাতে গর্জনের মাত্রা কমে যায়।

অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাস পেতে ছাগল: ইতালিতে ছাগল এবং ভেড়ার ওপর গবেষণা চালিয়ে জার্মান বিজ্ঞানী মার্টিন উইকেলস্কি আবিষ্কার করেন, এই দুটি প্রাণীর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ৪-৬ ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে।


ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়