ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১০ স্টার্টআপ যেসব উদ্ভাবনী উদ্যোগে সেরা হলো

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১০ স্টার্টআপ যেসব উদ্ভাবনী উদ্যোগে সেরা হলো

দেশে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’। দেশের অগ্রগতি এবং উন্নয়নে অবদান রাখতে যাদের উদ্ভাবনী পরিকল্পনা আছে এমন তরুণ উদ্যোক্তা খুঁজে বের করা এবং তাদের উদ্যোগগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের জন্য ফান্ডিং করার লক্ষ্যে এ আয়োজন করা হয়।

এই প্রতিযোগিতার জাতীয় স্টার্টআপ ক্যাম্প থেকে প্রাপ্ত সেরা ৩০ স্টার্টআপকে নিয়ে গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে চূড়ান্ত সেরা ১০ স্টার্টআপ নির্বাচন সেশন। এতে বিজয়ী সেরা ১০ স্টার্টআপকে ‘বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট’ প্রদান করা হয়েছে। যার আওতায় প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে শীর্ষ ৩০-এ থাকা অপর ২০ স্টার্টআপ রানারআপ হিসেবে আইডিয়া প্রকল্প থেকে গ্রুমিং ও বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পাবে। প্রশিক্ষণ শেষে স্টার্টআপগুলো প্রস্তুত হলে তাদের জন্যও অনুদান প্রদান করবে আইডিয়া প্রকল্প।

‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’ প্রতিযোগিতার আয়োজক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর অধীনে ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প’ বা ‘আইডিয়া প্রকল্প’। সহযোগিতায় সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর ‘ইয়াং বাংলা’ প্ল্যাটফর্ম।

প্রতিযোগিতায় ‘বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট’ পাওয়া সেরা ১০ প্রকল্প হচ্ছে-

ঝুপরি ডটকম: ঝুপরি ডটকম তৈরি করেছে দেশের প্রথম ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইল পণ্য বিষয়ক সার্চ ইঞ্জিন এবং দ্রুত বিতরণ পরিষেবা বিষয়ক ই-কমার্স। গ্রাহকরা বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মের প্রায় ১০ হাজারটি পণ্য থেকে সেরা পণ্যগুলো পেতে পারেন। এটিতে কয়েকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশগুলোর একটি হলো ভার্চুয়াল ট্রায়াল রুম। এটি ডেলিভারি সেবার মাধ্যমে এবং ফ্যাশন হাউসের বিজ্ঞাপন ও পণ্য হোস্টিং থেকেও উপার্জন করবে। এটি একাধিক ব্র্যান্ডের ডেটা তুলনা এবং বিশ্লেষণের বিশেষ সিস্টেম। এই প্ল্যাটফর্মে অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

ভিশন আইটি: যারা চোখে দেখতে পায় না তাদের জন্য একটি বিশেষ সমাধান এনেছে ভিশন আইটি। এটা অন্ধ ব্যক্তিদের জন্য একটি স্মার্ট অ্যসিস্টিভ স্টিক। এর মাধ্যমে অন্ধব্যক্তিগণ সহজে হাঁটতে ও চলাচল করতে পারবে। এটা সোনার সেন্সর এবং ক্যামেরার মাধ্যমে ইনপুট এবং ডিসটেন্স ইনফরমেশন প্রসেস করবে এবং একই সাথে সিন ও ফেইস রিকগনিশন এর মাধ্যমে স্পিকার ব্যবহার করে পড়তে পারে। এটা অন্ধদের জন্য চোখের ন্যায় কাজ করে।

ওয়ার্ল্ড এক্সজাম্পল : ‘ওয়ার্ল্ড এক্সজাম্পল’ মূলত বিদ্যুতের উপর কাজ করে। এটি নন কানেক্ট ইলেকট্রিক টেস্টার বাজারে এনেছে। এটি বৈদ্যুতিক শক কমানো এবং মানুষের জীবনের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারবে। এটি ব্যবহারের জন্য বিদ্যুতিক সংযোগের দরকার নেই। এটি কোনো স্পর্শ ছাড়াই বৈদ্যুতিক তারের পরীক্ষা করতে বৈদ্যুতিক চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে। এটির ফ্রিকোয়েন্সি সীমা ২ থেকে ৫ সেমি। ইতিমধ্যে এই পণ্যটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে এবং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এর দীর্ঘায়িস্থ কমপক্ষে ১ বছর। এর টার্গেট মার্কেট ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, হার্ডওয়্যার বিশেষজ্ঞ।

ব্ল্যাকবোর্ড: এ দেশে প্রচুর মেধাবী রয়েছে। কিন্তু যথাযথ সুযোগের অভাবে অনেক সৃজনশীল পেশাদার, শিল্পী উঠে আসছে না। এই সমস্যাটি সমাধান করার জন্য ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ এমন একটি উদ্যোগ, যা ওই সকল শিল্পীদের একটি প্ল্যাটফর্ম দিবে। এতে তৃণমূল স্তর থেকে মেধাবীরা সুযোগ পাবে এবং তাদের প্রতিভা প্রদর্শন করতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মটি সেই শিল্পীদের এবং তাদের সৃজনশীল কাজের প্রচার করবে।

কগনিশন ডট এআই: কগনিশন ডট এআই একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে যা একই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রোগীকে ডাক্তার বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে সংযুক্ত করতে পারে। এটি ত্বকের রোগ শনাক্ত করতে ইমেজ প্রসেসিং প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। ত্বকের রোগে ভুগছেন এমন লোকদের জন্য এটি দুর্দান্ত সমাধান হবে। এই ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে রোগী অল্প সময়ের মধ্যে ভালো পরিষেবা পাবে।

ক্রস রোড ইনিশিয়েটিভ: দেশের যে সকল শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চায় তাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হলো ক্রস রোড ইনিশিয়েটিভ। এটি উচ্চ বা উচ্চ স্তরের শিক্ষার জন্য মেন্টরশিপ পরিষেবা দিবে। এই প্ল্যাটফর্মটি যারা হার্ভার্ড, এমআইটি বা যেকোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আশা করে তাদের জন্য। প্ল্যাটফর্মটি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং পরিষেবা দেবে।

ডিজিটং: ডিজিটং বাংলাদেশের চা-কফি শিল্পের জন্য একটি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। বিদেশে দেখা যায়, কোনো গ্রাহক টাকা দেওয়ার সাথে সাথে কফি মেশিন থেকে কফি তৈরি হয়ে বের হয়ে আসে। ডিজিটং এমনই একটি মোবাইল অ্যাপস বের করেছে যার মাধ্যমে ক্যাশ টাকা ছাড়াই মানুষ কফি নিতে পারবে।

এডুবট: এডুবট হলো অগমেন্টেড রিয়েলিটি ভিত্তিক শিক্ষামূলক রোবট যা শিশুদের বাংলায় শেখাতে পারে। এটি বাংলায় কথা বলতে পারে। এটি যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম এবং যে সকল উত্তর স্পেসিফিক করা থাকে না সেগুলো গুগল ‍সার্চ করে বলতে পারে। এটি স্বরবর্ণ, ছড়া, গল্প, অংক ইত্যাদি বলতে পারে। এই রোবট নাচতে পারে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুদের শেখানোর জন্য এটি সত্যি খুব চমৎকার আইডিয়া। এটি শিক্ষা পদ্ধতিকে আরো আকর্ষণীয় করবে। প্রাথমিক লেভেলের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ব্যবহার করা যাবে। এর ব্যবসায়িক মডেল হলো বিটুবি ও বিটুসি।

ইলেকট্রিক স্কেটেবল অ্যান্ড ওয়াকেবল সু: ইলেকট্রিক স্কেটেবল অ্যান্ড ওয়াকেবল সু হলো একটি অসাধারণ সমাধান। এটি একই সাথে স্কেটিং করার পাশাপাশি হাঁটাও যায়। এটি খুবই সাধারণ একটি প্রযুক্তি যা হাঁটা ও স্কেটিং এর অভিজ্ঞতা একটি সাথে কম খরচে দিতে পারবে। এটি গ্রাহকদের জন্য অনেক সুবিধাজনক। এটা একবার চার্জ করলে প্রায় ১৫ কিমি. পর্যন্ত চালানো যায়। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির মাধ্যমে এটি তৈরি। এর ওজন খুবই সুবিধাজনক।

অবসর: ‘অবসর’ একটি ক্যাম্পাস এবং কমিউনিটি ভিত্তিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, যা থেকে লোকেরা বই কিনতে এবং বিক্রয় করতে পারে। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি ইতিমধ্যে ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছে। ইতোমধ্যে এটি বিভিন্ন ইভেন্টে পার্টনারশীপের মাধ্যমে এবং এফ-কমার্সের মাধ্যমেও ১ লাখের বেশি লোকের কাছে পৌঁছেছে। এটি ইতিমধ্যে ১৫০০ এরও বেশি গ্রাহককে সেবা দিয়েছে। এটি বই এবং এর আনুষাঙ্গিক বিক্রয় করে লাভ অর্জন করে। এটি ক্যাম্পাস ভিত্তিক কমিউনিটির মাধ্যমে নতুন এবং ব্যবহৃত বই বিক্রি করে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট হলো, এটি কমিউনিটির মাধ্যমে বই বিক্রি করে যা কম খরচে এবং একইদিনে ডেলিভারি করতে পারে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ‘আমার উদ্ভাবন, আমার স্বপ্ন’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২৫০০ স্টার্টআপ তাদের উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। দেশের ৮টি বিভাগের ২৫টি ভেন্যুতে স্টার্টআপদের ক্যাম্পাস পিচিং এর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৭৫টি স্টার্টআপ অংশগ্রহণ করে জাতীয় স্টার্টআপ ক্যাম্পে। জাতীয় ক্যাম্প থেকে নির্বাচিত সেরা ৩০টি স্টার্টআপ অংশ নেয় চূড়ান্ত পর্বে।


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়