ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

হঠাৎ সূর্য আর না উঠলে কী হবে?

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ১৭:১৩, ৮ জুলাই ২০২১
হঠাৎ সূর্য আর না উঠলে কী হবে?

পাঠক, একবার কল্পনা করুন সূর্য হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে গেছে বা কোনো কারণে সূর্য আর পুব আকাশে উঠছে না। অথবা ব্ল্যাকহোল সূর্যকে গিলে ফেলেছে! তখন কী হবে? সূর্যের আলো ছাড়া কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবে সবুজ শ্যামল এই পৃথিবী?

পৃথিবীর সমস্ত শক্তির একমাত্র উৎস। সূর্যের প্রভাবেই পৃথিবীতে দিন এবং রাত্রি হয়। শুধু পৃথিবী নয়, আমাদের সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহ সূর্যের ওপর নির্ভরশীল। সূর্য এই সৌরমণ্ডলের প্রতিটি  গ্রহকে তাপ এবং আলো সরবরাহ করে। আমাদের সৌরমণ্ডলের প্রতিটি গ্রহ মহাকর্ষণের টানে সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজস্ব কক্ষপথে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। সূর্য না থাকলে মহাকর্ষ একেবারেই বিলীন হয়ে যাবে। ফলে সবগুলো গ্রহ-উপগ্রহ কক্ষপথ থেকে ছিটকে নিজের ইচ্ছামতো সমান্তরালভাবে ছুটতে থাকবে।

যদি হঠাৎ করে কোনো কারণে সূর্য গায়েব হয়ে যায়, তাহলে গায়েব হওয়ার ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পর পৃথিবীবাসী জানতে পারবেন সে কথা! কারণ সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে এই সময় লাগে। এরপর পৃথিবীতে নেমে আসবে অন্ধকার! পৃথিবীর সমস্ত গাছপালার শ্বসন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটবে। অক্সিজেন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কারণ গাছপালা সূর্যের আলোর সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন অবমুক্ত করে। তবে আশার কথা হচ্ছে, গাছপালা অক্সিজেন উৎপাদন বন্ধ করে দিলেও পৃথিবীতে মজুদ মোট অক্সিজেন মানব সভ্যতাকে আরো প্রায় এক হাজার বছর টিকিয়ে রাখতে সক্ষম।

সূর্য গায়েব হওয়ার এক ঘণ্টা পর থেকেই শুরু হয়ে যাবে আসল তাণ্ডব। প্রথমদিকে ছোটখাটো ভূমিকম্প হতে থাকবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত কমতে থাকবে। এক সপ্তাহের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে এবং পৃথিবীজুড়ে বরফ জমতে শুরু করবে। এক মাসের মধ্যেই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে! এতো নিম্ন তাপমাত্রায় ফসল উৎপাদন একেবারেই সম্ভব হবে না। ফলে পৃথিবীতে খাদ্যের অভাব মারাত্মক রূপ নিবে। খাবারের জন্য পৃথিবীতে লুটতরাজ, হানাহানি, দাঙ্গা শুরু হয়ে যাবে। টিকে থাকার জন্য মানুষ মানুষের মাংস খেতে দ্বিধাবোধ করবে না।

এদিকে খাবার, আলো এবং পানির অভাবে পৃথিবীতে বসবাসকারী অন্যান্য পশুপাখি ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করবে। যে প্রাণী ঠান্ডা আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না, তারা সবার আগে মারা যাবে। তবে প্রচণ্ড শীত সহ্য করে বেঁচে থাকতে পারে এমন প্রাণীগুলো বেঁচে থাকলেও, মানুষের খাদ্যাভাব পূরণ করতে এদেরকেও মানুষের শিকার হতে হবে।

সূর্য গায়েব হওয়ার কয়েকমাসের মধ্যে সমুদ্রের পানি জমে বরফ হয়ে যাবে। ফলে সামুদ্রিক প্রাণীদের কোনো প্রজাতিই এই ঠান্ডা বরফের মধ্যে টিকে থাকতে পারবে না। এতো বিশাল প্রাণীজগতের এমন বিপর্যয় সমস্ত প্রাণীজগতের ওপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলবে। পৃথিবীর খাদ্যশৃঙ্খল একদম ভেঙে যাবে।

সূর্য না থাকায় পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা বন্ধ করে দিবে এবং কক্ষপথ ছেড়ে সোজা ভেসে চলতে থাকবে। এই যাত্রাপথে পৃথিবী যেকোনো গ্রহের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অথবা এমনও হতে পারে যে, ভাসতে ভাসতে পৃথিবী অন্য কোনো সৌরজগতে পৌঁছে গেছে এবং নতুন সূর্যের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করা শুরু করেছে। যদি এমন হয় তাহলে পৃথিবী হয়ত আবারও তার পুরাতন রূপ ফিরে পাবে।

পাঠক, সম্পূর্ণ লেখাটি ছিল বিজ্ঞাননির্ভর নিছক কল্পনা। কারণ সূর্যের এভাবে হঠাৎ গায়েব হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আর আমাদের সৌরজগতের আশেপাশে এমন কোনো ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্বও নেই যা আস্তো এই সূর্য গিলে ফেলতে সক্ষম। সুতরাং আনন্দে বাঁচুন। ভালো থাকুন।

ঢাকা/ফিরোজ/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়