ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

২৮ জানুয়ারি তথ্য সুরক্ষা দিবস

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ২৭ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২৮ জানুয়ারি তথ্য সুরক্ষা দিবস

আগামীকাল ২৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক তথ্য সুরক্ষা দিবস (ডাটা প্রাইভেসি ডে)-২০২০। প্রতিবছর এ দিবস উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে সহযোগিতা করে। এই বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য (থিম) নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘ব্যক্তিগত তথ্যের নিয়ন্ত্রণ করুন’।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পরিচালনায় ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্সের (এনসিএসএ) নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী এই ক্যাম্পেইন চলবে। এই ক্যাম্পেইনের অংশীদার হয়ে এ বছরও বাংলাদেশে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে সাইবার সচেতনতা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ ফাউন্ডেশন)।

এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের চ্যাপ্টারগুলোতে নানা কর্মসূচি আয়োজন করছে চ্যাম্পিয়ন সদস্যরা (সাইবার সচেতনতাকর্মী)।

ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেতনতা কর্মসূচি নিতে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ। তিনি বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেকে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া থেকে রক্ষার জন্য তার ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়টি জানা জরুরি। তাই এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, বরং এর জন্য সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।

তথ্য সুরক্ষা দিবস হলো একটি বৃহত্তর প্রচার কার্যক্রমের অংশ যা ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যক্তিগত তথ্য সহজ উপায়ে সুরক্ষিত করার প্রতি গুরুত্ব দেয়। সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মক্ষেত্রে ভোক্তাদের তথ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করানো। অনলাইনে থাকা মূল্যবান তথ্য সুরক্ষিত রাখার পরামর্শমূলক তথ্য জানতে ভিজিট করতে পারেন।

ডাটা প্রাইভেসি ডে বা তথ্য সুরক্ষা দিবস কী

১৯৮১ সালে ইউরোপের বৃহৎ সংগঠন ‘কাউন্সিল অব ইউরোপে’ কনভেনশন ১০৮ স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে বিশ্বে প্রথম ডাটা প্রাইভেসি ডে বা তথ্য সুরক্ষা দিবস উদযাপন শুরু হয়। ‘কনভেনশন ১০৮’ গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি যা প্রতিপালনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ২৮ জানুয়ারি ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) এর নেতৃত্বে দিবসটি পালিত হয়। ইউরোপে উদযাপন শুরু হওয়া তথ্য সুরক্ষা দিবস ২০০৮ সাল থেকে উত্তর আমেরিকায় পালন শুরু হয়।

এই দিবসটিতে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, করপোরেশন, সরকারি প্রতিষ্ঠান, পৌরসভা ও ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা হয়। তুলে ধরা হয় ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার সহজ সব পদ্ধতি।

কেন আমাদের অনলাইন প্রাইভেসি সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত?

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অবিরাম তথ্য প্রবাহ তৈরি করছি। সরকারি হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটির বেশি। আজকে আমরা আমাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেট ও আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা ডিভাইসগুলোতে ব্যয় করছি। এখনও খুব কম মানুষই জানে যে, আমাদের ব্যবহৃত ডিভাইস ও অনলাইন সেবা থেকে অসংখ্য ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং তা শেয়ার করা হচ্ছে। এসব তথ্য অনির্দিষ্টভাবে গচ্ছিত করা হতে পারে এবং আমাদের ব্যক্তিগত এসব তথ্য উপকারে ব্যবহার করা হতে পারে আবার অবাঞ্চিতভাবেও ব্যবহার করা হতে পারে। এমনকি দেখা গেছে, অনলাইনে অনুপকারী তথ্য শেয়ার করার ফলেও তা আপনার আর্থসামাজিক অবস্থান সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করতে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন আপনার প্রিয় রেস্টুরেন্ট অথবা অনলাইনে যেসব আইটেম আপনি ক্রয় করেছেন তা শেয়ার করা।

আইনগত বিষয়

শক্তিশালী আইনের অনুপস্থিতিতে দেশি-বিদেশি অনেক কোম্পানি তাদের ইউজার ও ক্রেতাদের ব্যক্তিগত আচরণ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছে এবং ভোক্তাদের এসব তথ্য তারা লাভের জন্য বিক্রি করে দিচ্ছে। ভোক্তাদের বোঝা প্রয়োজন যে তাদের তথ্যের সঠিক মূল্য আসলে কতটা এবং কিভাবে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তা শেয়ার করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করা জানতে হবে।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ (খ) নম্বর অনুচ্ছেদে প্রাইভেসি রাইটস বা ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা (অনুচ্ছেদ ১২) নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ (অনুচ্ছেদ ১৭), জাতিসংঘের কনভেনশন অন মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স (অনুচ্ছেদ ১৪) এবং শিশু অধিকার সনদ (অনুচ্ছেদ ১৬)-এ প্রাইভেসিকে অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের কোনো আইনে নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট এবং পূর্ণাঙ্গ কোনো দিকনির্দেশনাই নেই। এখন সময় এসেছে তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের।

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যক্তি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রচার ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সর্বাধিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কিভাবে বজায় থাকবে তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মতো চরম নৈতিক অপরাধকে প্রতিহত করার জন্য আইনি ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কেউ ইচ্ছা করলেই যাতে আরেক নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন করতে না পারে সেজন্য শক্ত আইন থাকা উচিত। আইন ব্যক্তির পক্ষে তার অধিকার সংরক্ষণে দায়িত্ব পালন করে। এর সঙ্গে সঙ্গে আইন মেনে চলার জন্য জনসচেতনতাও প্রয়োজন। শুধু আইন দিয়ে এই অপকর্ম বন্ধ করা যাবে না। মানুষ নৈতিক মূল্যবোধের বিষয়ে সজাগ হলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মতো চরম নৈতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

প্রাইভেসি ও সিকিউরিটির মধ্যে পার্থক্য কী?

সিকিউরিটি বলতে- যেসব উপায়ে আমরা আমাদের নিজেদের, আমাদের সম্পত্তি ও ব্যক্তিগত তথ্যকে সুরক্ষা করি তাকে বোঝায়। এটা অবাঞ্চিত অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম পর্যায়ের প্রতিরক্ষা। আর প্রাইভেসি বলতে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে বোঝায়।


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়