ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনাভাইরাসমুক্ত মহাদেশে বসবাসকারী বিজ্ঞানীর গল্প

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২২, ১৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাসমুক্ত মহাদেশে বসবাসকারী বিজ্ঞানীর গল্প

পৃথিবীর ৭টি মহাদেশের মধ্যে ৬টিই করোনায় আক্রান্ত। করোনাভাইরাসমুক্ত একমাত্র মহাদেশ হলো, অ্যান্টার্কটিকা।

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে পৃথিবীর অনেক দেশ বর্তমানে যেখানে লকডাউনে রয়েছে, সেখানে বলা যায় অ্যান্টার্কটিকা তো বছরের পর বছর ধরে লকডাউন! কারণ বরফে ঢাকা এই অঞ্চলটিতে সাধারণ মানুষের বসবাস নেই, মহাদেশটির প্রায় ৯৮ শতাংশই ঢেকে আছে বরফে। কেবল কিছুসংখ্যক বিজ্ঞানী ও গবেষক অস্থায়ীভাবে এখানে বসবাস করে থাকেন।

ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের (বিএএস) একজন জীববিজ্ঞানী পৃথিবীর একমাত্র কোভিড-১৯ মুক্ত মহাদেশটিতে বসবাসের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।

মিরর অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেরিন বায়োলজিস্ট নাদেছা জুওয়ারস্কে অ্যান্টার্কটিকার রোথেরা গবেষণা কেন্দ্রে ১৬ মাস ধরে রয়েছেন। বিএএসের হয়ে তিনি সেখানকার সামুদ্রিক খাদ্য ব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণার করছেন।

বরফের মহাদেশটিতে প্রায় ৭০টির মতো গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে এবং ৩০টি দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণার কাজ করছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে থেকে এখানে আগমনকারীদের জন্য স্ক্রিনিং টেস্ট চালু করা হয়েছে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে। রোথেরা গবেষণা কেন্দ্রটি দক্ষিণ আমেরিকার প্রান্ত থেকে ৮০০ মাইলের বেশি দূরে অ্যান্টার্কটিকার একটি উপদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। অ্যান্টার্কটিকায় খুব শিগগির দুর্বিষহ শীতকাল শুরু হতে যাচ্ছে।

মিরর অনলাইনকে নাদেছা (৩৪) জানান, এরকম একটি বিচ্ছিন্ন ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকলেও তিনি এবং তার সহকর্মীরা স্বাভাবিক পৃথিবীর মতো নিয়মিত যোগযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আপনি যখন এত দূরে থাকবেন তখন বাকি বিশ্বের ঘটনাগুলো খুব পরাবাস্তব বলে মনে হবে। বিশ্ব সংকটের আঁচ অ্যান্টার্কটিকার বিজ্ঞানীদের উপর পড়ে না। বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে প্রতিদিন আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে এবং বিশ্বে কী ঘটছে সে সম্পর্কে বিএএস আমাদের অবহিত করে চলেছে।’
 


নাদেছা বলেন, ‘এখানে ইন্টারনেট রয়েছে এবং আমরা সোশ্যাল মিডিয়াও ব্যবহার করি। অ্যান্টার্কটিকাতে বর্তমানে কোনো করোনাভাইরাস নেই। অ্যান্টার্কটিকা এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলো ভাইরাস মুক্ত রাখতে বিএএস-এর অনেকগুলো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রয়েছে।’

এই বিজ্ঞানীর মতে, ভাইরাসটির কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কম হওয়ায় ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের কাছে অ্যান্টার্কটিকার বরফের কোরগুলো দৃশ্যমান হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাস পাওয়ার যে পরিমাণ, তা অ্যান্টার্কটিকার জলবায়ুর উপর  কোনা স্থায়ী প্রভাব ফেলার তুলনায় কম। তবে হতে পারে যে, এর প্রভাবে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকায় একটি বরফের কোর গঠন দেখতে পাবেন।’

নাদেছা জানান, অ্যান্টার্কটিকায় কাজ করার অর্থ হলো কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের অনেক আগে থেকেই তাকে এবং তার সহকর্মীদের বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘এখানকার জীবন বাড়ির আইসোলেশন জীবনের তুলনায় ভিন্ন। বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বসবাস করলেও অবসর সময়ে আমরা সহকর্মীদের সঙ্গে টেবিল টেনিস এবং অন্যান্য গবেষণা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে ডার্ট প্রতিযোগিতাসহ সময় কাটানোর নানার উপায় বের করেছি।’



ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়