ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মাতৃসদন থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধার

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাতৃসদন থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকার নগর মাতৃসদন থেকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া নবজাতকটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার দুপুরে নগরীর বাসার রোড এলাকার একটি বাসা থেকে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।

এ সময় নবাজতক চুরি করে নিয়ে যাওয়া ওই নারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম শাহীন আক্তার ওরফে শুভ্রা (৩৫)। তিনি নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজশাহীর আলুপট্টি ক্যাম্পাসের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তার স্বামীর নাম ডা. আক্তারুজ্জামান। তাদের স্থায়ী বাড়ি জেলার বাগমারা উপজেলায়। তবে এই দম্পতি বাসার রোড এলাকার ওই বাসাটি ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

গত ১৯ জানুয়ারি রাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) নামের একটি এনজিও পরিচালিত একটি মাতৃসদন থেকে জন্মের মাত্র ৬ ঘণ্টা পর নবজাতকটি চুরি হয়।

শুভ্রা নিজেকে একজন এনজিওকর্মী পরিচয় দিয়ে গর্ভকালীন সময় থেকেই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে নবজাতকটির মা মুক্তি খাতুনের (১৮) সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। আর মুক্তিকে নানা পরামর্শ দিতেন নগরীর ডাশমারী এলাকার নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাঠকর্মী তহুরা খাতুন।

মুক্তির প্রসব বেদনা উঠলে গত ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে তহুরা ও শুভ্রা তাকে নওদাপাড়া এলাকায় ওই মাতৃসদনে ভর্তি করেন। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তির ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। শুভ্রা তার চিকিৎসার খরচ বাবদ তিন হাজার টাকা দেন। এ ছাড়া বাচ্চার জন্য একটি তোয়ালে, কম্বল ও নতুন পোশাক কিনে দেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কৌশলে তিনি বাচ্চাটি নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় মুক্তি খাতুনের মা রোজিনা খাতুন বাদী হয়ে নগরীর শাহমখদুম থানায় মামলা করেন।

এ মামলায় পুলিশ তহুরাকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। তবে রিমান্ডে তহুরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বাচ্চা নিয়ে যাওয়া ওই নারীকে তিনি চেনেন না। এরই মধ্যে পুলিশ সিসি ক্যামেরার একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে। ওই ফুটেজে দেখা যায়, নগরীর বিনোদপুর বাজারে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে চলে যাচ্ছেন এক নারী। ফুটেজটি দেখে মুক্তির মা শনাক্ত করেন, এই সেই নারী যিনি বাচ্চা নিয়ে পালিয়েছেন।

এরপরই ওই নারীকে ধরতে মাঠে নামে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল বাসার রোড এলাকার ওই বাসাটি ঘিরে ফেলে। এরপর মুক্তি খাতুনের বাবা মুক্তার হোসেন ও মাতৃসদনের চিকিৎসকদের ডেকে পাঠানো হয়। তারা এসে শনাক্ত করেন এই শুভ্রাই তাদের বাচ্চা চুরি করেন। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ শুভ্রাকে প্রথমে বের করে আনে। এ সময় শুভ্রা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তাকে একটি মাইক্রোবাসে তোলার পর বাচ্চাটিকে বের করে আনে পুলিশ।

এ সময় রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) উপকমিশনার (পূর্ব) আমির জাফর বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে আমরা যে নারীকে দেখেছিলাম এই শুভ্রাই সেই নারী। ফুটেজে আমরা শুভ্রার যে পোশাক ও ভ্যানেটি ব্যাগ দেখেছিলাম, তা জব্দ করা হয়েছে। চিকিৎসক ও ভুক্তভোগী পরিবারটিও তাকে শনাক্ত করেছেন।’

তিনি জানান, প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের সহযোগিতায় বাচ্চাটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হলো। বাচ্চাটিকে আপাতত সেফহোমে রাখা হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে তাকে তার মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে নিজের প্রথম সন্তানকে হারানোর পর ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার দুর্গম চর শ্যামপুরের দিনমজুর নাসির উদ্দিনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন। শুক্রবার বাচ্চা উদ্ধারের খবর পেয়ে একটি অটোরিকশায় চড়ে বাসার রোডে ছুটে আসেন মুক্তি ও তার মা রোজিনা। এ সময় মুক্তি কোনো কথা না বললেও তা মা বলেন, তিনি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

নবজাতক চুরির এ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর শাহমখদুম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিয়ার রহমান জানান, গ্রেপ্তার তহুরার এই ঘটনার সঙ্গে কতটুকু সংশ্লিষ্টতা আছে তা এখন খতিয়ে দেখা হবে। তার সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে অভিযোগপত্র থেকে তাকে বাদ দেওয়া হবে।



রাইজিংবিডি/রাজশাহী/২৭ জানুয়ারি ২০১৭/তানজিমুল হক/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়