ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আ.লীগের ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়তে অক্টোবরে মাঠে নামছে সিআরআই

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আ.লীগের ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়তে অক্টোবরে মাঠে নামছে সিআরআই

নৃপেন রায় : আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সমুদয় তথ্য সমৃদ্ধ ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী অক্টোবর মাসে মাঠে নামছে দলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। দলের কয়েকজন নেতা ও সিআরআই সংশ্লিষ্টরা রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআরআই সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল ও বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ থেমে যায়। গত ১৯ আগস্ট রাজশাহী বিভাগের প্রত্যেক জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের মোবাইল ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সিআরআই-এর কয়েকটি টিমের সংগ্রহ শুরু করার কথা ছিল। এখন এই কাজ অক্টোবরে শুরু হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিউইয়র্ক সফর শেষ করে দেশে ফিরলে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করা হবে।

গত ২১মে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে প্রিয়াংকা কমিউিনিটি সেন্টারে দপ্তর কমিটির সভায় দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দপ্তর সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষে জেলা, উপজেলা ও মহানগর দপ্তর ও উপ-দপ্তর সম্পাদকদের বিভিন্ন নির্দেশনা ও করণীয় সম্পর্কে অবগত করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দপ্তর সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরামর্শ ও নির্দেশনায় কাদের বলেন, ‘কাজের কথাগুলো সেরে নেই। ভাষণ কালকে হয়ে গেছে। আজকে ভাষণের দরকার নেই। কাজের কথা বলার জন্য ডেকেছি। যাদের অফিস (কার্যালয়) নেই তারা এখানে ফরম আছে, ফরমে লিখে দিয়ে যাবেন। এগুলো জমা না দিয়ে ঢাকা শহর ছাড়বেন না। যেখানে নেই সেখানে আমরা অফিসের ব্যবস্থা করে দেব। আমাদের পার্টির অভিভাবক শেখ হাসিনা নিজেই উদ্যোগ নিয়েছেন। যেসব জেলায় একেবারে নিজস্ব অফিস নেই অথবা ভাড়ায় আছে সেগুলোও উল্লেখ করবেন। নেত্রী চাইছেন জেলা, উপজেলা পর্যায়ে দলের যেন একটা নিজস্ব কার্যালয় থাকে। সেটা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই জরুরি নির্দেশনা। কেউ তাড়াহুড়ো করে চলে যাবেন না। আপনাদের জেলায় যে সব উপজেলা আছে, সেখানে আপনাদের কাদের অফিস আছে, কাদের নেই, কারা ভাড়ায় আছেন সবকিছুই উল্লেখ করে যাবেন। একটু সময় লাগলেও আপনারা এই কাজটি করে যাবেন। এটাই আজকের মিটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য।

সভায় দপ্তর সম্পাদকদের মাঝে ফরম বিতরণ করা হয়। তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে জেলা পর্যায়ে সার্কুলার, পোস্টার, নির্দেশনা যায়, এগুলো যাদের অফিস নাই তারা আপাতত একটা ঠিকানা দিয়ে যাবেন, নতুন কার্যালয় না হওয়া পর্যন্ত সে ঠিকানা ব্যবহার যাতে করা যায়। কেন্দ্রীয়ভাবে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি, চিঠিপত্র, পোস্টারগুলো তৃণমূলের সংশ্লিষ্টদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেবেন। দল করলে দলের প্রতি কমিটমেন্ট নিয়ে এগুলো করতে হবে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার করার ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাংগঠনিক, প্রচার ও প্রকাশনা এবং দফতর সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে জয় বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে চাই। আর এটা সম্পন্ন করা হবে তথ্যপ্রযুক্তির সফল ব্যবহারের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।’

জয় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সব সদস্যের জন্য ডাটাবেজ করা হবে। যেখানে সদস্যদের নাম, ঠিকানা ও পদবি থাকবে। সদস্যদের নাম-পরিচয় বিচ্ছিন্নভাবে না রেখে, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে একটি পয়েন্টে রাখা হবে। যাতে প্রয়োজনে সবার সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা যায়।’

ডিজিটাল ডাটাবেজ সিস্টেমের মাধ্যমে তৃণমূলকে এ ধারায় নিয়ে আসা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে।’

অন্যদিকে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর সাংগঠনিক তথ্য ভাণ্ডারের কাজ শেষ করতে দলের সব ইউনিটের নেতাদের কাছে পুনরায় তথ্য চেয়ে পাঠায় আওয়ামী লীগ। তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সংগঠনের সব ইউনিটের নেতার প্রতি এ অনুরোধ জানান তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের বরাবরে পাঠানো অনুলিপি থেকে এ তথ্য জানা যায়। আর চিঠিতে দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষর করেন।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকারের প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠন করা। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি, জেলা/মহানগর কমিটি, উপজেলা-থানা কমিটি, পৌর-ইউনিয়ন কমিটিগুলোর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে একটি সাংগঠনিক তথ্যভা-ার (ডাটাবেজ) তৈরি করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি এর আগে আপনাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাই আবারো এই কার্যক্রম সফল করতে সব ইউনিটের নেতাদের নাম, ঠিকানা, ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, কমিউনিটি পোর্টাল নিবন্ধন ফরম আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে পুনরায় পাঠানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।

কিন্তু কয়েক দফায় এই আহ্বান জানানো হলেও দলের তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা সাড়া দেননি। তাই এবার আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে দলটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই’র নেতৃত্বে প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতারা তথ্য সংগ্রহের কাজ করবেন। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই এই তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করার নির্দেশনা আছে।

আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট নেতারা দেশের বাইরে অবস্থান করার কারণে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি। আর সিআরআই-এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন কর্মকর্তা জানান, এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। গত আগস্ট মাসে বন্যার কারণে এই উদ্যোগে পিছিয়ে যায়। আমরা আশা করছি, আগামী অক্টোবর থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করতে পারব। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতাদের নেতৃত্বে কয়েকটি টিম বিভাগওয়ারী কাজ করবে। প্রত্যেকটি টিমে একজন দলনেতাসহ তিন থেকে চার জন সদস্য থাকবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/নৃপেন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়