তামিমের ব্যাটে সিলেটে অপরাজিত কুমিল্লা
ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে: দুই বাঁহাতির লড়াই। খুলনার জুনায়েদ, কুমিল্লার তামিম। দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার পর দুজনই ইনিংস মেরামত করেছেন। দুজনই করেছেন সত্তরের ঘরে রান। তাদের ব্যাটে রান উৎসব হয়েছে। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসতে পেরেছেন তামিম ইকবাল।
খুলনাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠ ম্যাচে চতুর্থ জয়ের স্বাদ পেল কুমিল্লা। আর আগের ম্যাচে জয়ের খাতা খোলা খুলনা পেল আরেকটি পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ। আগে ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ১৮১ রান করেছিল খুলনা। জবাবে শেষ ওভারে ২ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে কুমিল্লা।
তামিমের ৪২ বলে ৭৩ রানের ইনিংসের পরও জয় পেতে ঘাম ঝরাতে হয় কুমিল্লার। মিডল অর্ডারে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ম্যাচ শেষ পর্যন্ত টেনে নেয় তারা। অপরদিকে খুলনার বোলিং ও ফিল্ডিং ছিল দারুণ। তাদের দারুণ লড়াইয়ে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৮ রান লাগত কুমিল্লার। প্রথম বল ওয়াইডে এক রান পায় তারা। পরের বল ডট। দ্বিতীয় বলে এক রান নেন সাইফউদ্দিন। পরের দুই বলে চার, ছক্কা মেরে কুমিল্লার জয় নিশ্চিত করেন পেরেরা।
অথচ কুমিল্লার ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল অসাধারণ। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ও এনামুল গড়েন ১১৫ রানের জুটি, যা এবারের বিপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এনামুলের থেকে আগ্রাসী ব্যাটিং করে তামিম ২২ গজকে রান স্বর্গ বানিয়ে তোলেন। ২৮ বলে তুলে নেন এবারের বিপিএলের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।
ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যান দ্রুত। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে ১৩তম ওভারে মালিঙ্গা খুলনাকে প্রথম উইকেটের স্বাদ দেন। ১২ চার ও ১ ছক্কায় তামিম সাজান ৭৩ রানের ইনিংসটি। এনামুল ৩৭ বলে ৪০ রান করে ফেরেন মাহমুদউল্লাহর বলে। এরপর ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন। শামসুর রহমান (১), ইমরুল কায়েস (১১ বলে ২৮), লিয়াম ডসন (৪), শহীদ আফ্রিদি (১২) ও জিয়াউর (০) সাজঘরে ফিরলে কুমিল্লা শিবিরে অস্থিরতা ছড়ায়। সেখান থেকে জয়ের ক্যানভাসে তুলির শেষ আঁচড় দেন থিসারা পেরেরা। ৭ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন লঙ্কান পেস অলরাউন্ডার।
এর আগে জুনায়েদের ঝড়ে বিশাল সংগ্রহ পায় খুলনা। দলীয় ২ রানে জহুরুল বিদায় নিলে দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন জুনায়েদ ও এবারের আসরে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা আল-আমিন। ৭১ রানের জুটিতে তারা প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেন এবং দলের রানের চাকা সচল রাখেন। দুজন দুই প্রান্ত থেকে কুমিল্লার বোলাদের কড়া শাসন করেন।
দারুণ ফ্লিকে পেরেরাকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা উড়ান আল-আমিন। উইকেটে চারিপাশে শট খেলে বাউন্ডারি মারেন আরও ৪টি। কিন্তু তার ১৯ বলে ৩২ রানের ইনিংসটি শেষ হয় বাজে শটে। অষ্টম ওভারে আফ্রিদি বোলিংয়ে এসে প্রথম বলে বোল্ড করেন আল-আমিনকে। এক ওভার পর আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন মাহমুদউল্লাহ। আফ্রিদিকে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে এবং পেরেরাকে পুল করে মাহমুদউল্লাহ শুরুটা ভালো করেছিলেন। কিন্তু আফ্রিদির ভেতরে ঢোকানো বলে কাট করতে বোল্ড হন ১৬ রানে।
এরপর ডেভিড মালানকে নিয়ে অর্ধশত রানের জুটি গড়েন জুনায়েদ। এ সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন জুনায়েদ। হাফ সেঞ্চুরির পরও ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ান এ ওপেনার। ১৬তম ওভারে রান আউটে জুনায়েদ ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি। ৪১ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় খেলেন ৭০ রানের ইনিংসটি।
সঙ্গী হারানোর পর মালান বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। আফ্রিদির তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ২৯ রানে। শেষটায় ব্রেথওয়েট ১২ ও আরিফুল ১৩ রান করে দলের স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করেন। বল হাতে আফ্রিদি ৩ উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন ৩৫। ৩৪ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন ওয়াহাব রিয়াজ।
দুই জয় দিয়ে সিলেট পর্ব দারুণভাবে শেষ করল কুমিল্লা। ঢাকায় জয়ের মুখ না দেখা খুলনা এখানে এসে পেয়েছিল প্রথম জয়। আজ আবার হারল তারা। আগামীকাল তাদের শেষ ম্যাচ চিটাগংয়ের বিপক্ষে। জয়ে তারা শেষটা রাঙাতে পারে কিনা সেটা দেখার।
রাইজিংবিডি/সিলেট/১৮ জানুয়ারি ২০১৯/ইয়াসিন
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন