ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ফাইনাল জুজু কাটবে, ভাগ্য ফিরবে সাত নম্বর ফাইনালে!

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ১৬ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফাইনাল জুজু কাটবে, ভাগ্য ফিরবে সাত নম্বর ফাইনালে!

ক্রীড়া প্রতিবেদক : ছয়বার ফাইনাল খেলেও কোনো শিরোপা জেতা হয়নি বাংলাদেশের। শুক্রবার সপ্তমবারের মতো যেকোনো ফরম্যাট, যেকোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে নামছে বাংলাদেশ।

ফাইনাল জুজু কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ। ভাগ্য ফিরবে লাকি সেভেনে। এমনটাই বিশ্বাস সবার। এ বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছেন ক্রিকেটাররাই। ওয়ালটন ত্রিদেশীয় সিরিজে এখন পর্যন্ত অপরাজিত মাশরাফির দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার হারিয়ে পেয়েছে ফাইনালের টিকিট। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে পেয়েছে অনায়াস জয়।  মোদ্দাকথা, তিন ম্যাচেই অলআউট ক্রিকেট খেলছেন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকরা।

মাঠের আবেগ, উত্তেজনা সামলে নিতে পারলে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ইতিহাস গড়ার হাতছানি সৌম্য, মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিনদের।

কেমন ছিল এর আগের ছয় ফাইনাল। উত্তর খুঁজেছে রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া বিভাগ


আগের ছয় ফাইনাল
২০০৯ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। পুরো আসরে দারুণ খেলে বাংলাদেশ খেলেছিল ফাইনালে। কিন্তু ফাইনালে বাংলাদেশের হৃদয় ভেঙে যায় ২ উইকেটের হারে। মিরপুরে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ১৫২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। রকিবুল হাসান সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেছিলেন। ব্যাটসম্যানরা সেদিন দায়িত্ব নিতে না পারলেও বোলাররা এগিয়ে এসেছিলেন। শ্রীলঙ্কা মাত্র ৫ রান তুলতেই হারিয়েছিল ৬ উইকেট। তাতেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু কুমার সাঙ্গাকারার ৫৯ ও পারভেজ মারুফের ৩৮ রানে শ্রীলঙ্কা জয় পায় সহজেই। তবে শেষ আঘাতটি করেছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। ১৬ বলে ৩৩ রান করে দলকে দেন ট্রফির স্বাদ।

তিন বছর পর বাংলাদেশ ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয় ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তানকে আতিথেয়তা দেয় বাংলাদেশ। ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে বাংলাদেশ খেলেছিল ফাইনাল। কিন্তু মাত্র ২ রানে ভাঙে বাংলাদেশের শিরোপার স্বপ্ন। পাকিস্তান আগে ব্যাটিং করে ২৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তামিমের ৬০, সাকিবের ৬৮ রানে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু মাঝে পথ হারিয়ে ম্যাচ কঠিন করে ফেলে স্বাগতিকরা। শেষ ওভারে ৯ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ তুলতে পারেন মাত্র ৭। ২ রানে হারে বাংলাদেশ। ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ, কিন্তু ওই ২ রানের আক্ষেপ আজও ভুলতে পারেননি।

চার বছর পর আবারো এশিয়া কাপের ফাইনালের মঞ্চে বাংলাদেশ। ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। ওয়ানডে নয় এবার ফরম্যাট টি-টোয়েন্টি। ফরম্যাট পাল্টালেও পাল্টায়নি বাংলাদেশের ভাগ্য। সহজে ফাইনাল হারলেও বাংলাদেশ পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেছিল। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ১৫ ওভারে ১২০ রান তোলে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ ঝড় তুলে ১৩ বলে করেছিলেন ৩৩ রান। কিন্তু ১৩.৫ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল তুলে নেয় জয়। দুঃস্বপ্নের আরেকটি রাত কাটায় বাংলাদেশ।

২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও পাল্টায়নি ফাইনাল ভাগ্য। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ সবার আগে পৌঁছে গিয়েছিল ফাইনালে। কিন্তু ফাইনাল জুজু কাটাতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭৯ রানের বিশাল হারের ক্ষত এখনো তরাতাজা টাইগার শিবিরে। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২২১ রানের জবাবে বাংলাদেশ করেছিল ১৪২ রান। সেই মাহমুদউল্লাহ আবারো এগিয়ে এসেছিলেন। ব্যাট হাতে করেছিলেন ৭৬ রান। কিন্তু তাকে সমর্থন দিতে পারেননি কেউ।

দুমাস পর আরেকটি ফাইনাল। ১৮ মার্চ আরেকটি দুঃস্বপ্নের রাত কাটায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ডেরায় ঢুকে লঙ্কানদের দুবার হারিয়ে ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। জয়ের সব আয়োজন হয়ে গিয়েছিল। শেষ ১২ বলে ভারতের লাগত ৩২ রান। ১৯তম ওভারে রুবেল খরচ করে আসেন ২২ রান। তাতেই সব ওলটপালট। শেষ ওভারে ১০ রান ডিফেন্ড করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ করেন দিনেশ কার্তিক। অথচ পুরো ‍টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। ফাইনালেও ভারতকে কড়া জবাব দিচ্ছিল সাকিবের দল। কিন্তু শেষ চাপ সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ।
 


এক বছরে তিন ফাইনাল হার! এমন দুঃস্মৃতি আন্তর্জাতিক কোনো দলের আছে কি না, জানা নেই। বছরের শুরুতে ঢাকায়, মার্চে শ্রীলঙ্কায় এবং সেপ্টেম্বরে দুবাইয়ে ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ।  ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। আবার ফাইনাল হার।  এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত।  শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারতের। কী দারুণ শুরুই না করেছিল বাংলাদেশ।  লিটন ও মিরাজের উদ্বোধনী জুটিতে আসে রেকর্ড ১২১ রান। টপ অর্ডার যে চমক দেখায়, তা পূর্ণ রূপ দিতে পারেনি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। তাতেই বড় ইনিংসের স্বপ্নের সমাধি। লিটনের একার ১২১ ও বাকিদের ১০১ মিলিয়ে বাংলাদেশের পুঁজি মাত্র ২২২। এই রান নিয়েও বোলাররা লড়েছিলেন। কিন্তু পারেননি জেতাতে।  ইনিংসের শেষ বলে ১ রান নিয়ে ভারত ম্যাচ জেতে ৩ উইকেটে।

তিন এশিয়ার পরাশক্তির কাছে ছয়বার ফাইনাল হারার পর স্বাভাবিকভাবেই একটা বড় প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ কি ফাইনাল জিততে পারবে না?

শুক্রবার সেই উত্তর, সেই অপেক্ষা ঘুচানোর পালা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আরেকটি জয় মুছে দিতে পারে ব্যর্থতার কালিমা। সাত নম্বর ফাইনালে এসে কাটবে ফাইনাল জুজু। ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা বোর্ডের সামনে গগনবিদারী চিৎকারের অভিজ্ঞতা পেতে চায় বাংলাদেশও। মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহরা ছুঁতে চান রূপালি ট্রফিও।  শুক্রবারই কি সেই দিন, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ বাংলাদেশ ক্রিকেটের! যদি সব কিছু বাংলাদেশের পক্ষে আসে তাহলে ডাবলিনে নতুন করে লেখা হবে বাংলাদেশের জয়গান।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ মে ২০১৯/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়