বাবা জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন: হাসান মাহমুদ
বিপিএল খেলেই হাসান মাহমুদ ছুটে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরে, পরিবারের কাছে। চেয়েছিলেন পরিবারের সঙ্গে কটা দিন কাটিয়ে ফিরবেন ঢাকায়। কিন্তু সেই সুযোগ আর হলো না। তবে যে সুযোগটি তিনি পেয়েছেন, সেটার জন্যই তো এতদিনের অপেক্ষা!
লক্ষ্মীপুরের বিস্ময়বালক এখন জাতীয় দলের অংশ। ডানহাতি দ্রুতগতির এই পেসারকে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ দিয়েছে বিসিবি। পাকিস্তান সফরের জন্য শনিবার ঘোষিত টি-টোয়েন্টি দলে আছেন হাসান মাহমুদ। সে খবর পৌঁছামাত্র হাসানের বাড়িতে শুরু হয়েছে ‘ঈদ উৎসব’। পরিবারের সবাই আপ্লুত তার অর্জনে। সেই মুহূর্তে মুঠোফোনে রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বললেন হাসান মাহমুদ।
অভিনন্দন হাসান মাহমুদ
হাসান মাহমুদ : ধন্যবাদ ভাই।
ঠিক এ মুহূর্তে নিজের ভেতরে কী কাজ করছে?
হাসান মাহমুদ : জাতীয় দলের জার্সিটার অপেক্ষায় আছি। আর কিছু চিন্তা করতে পারছি না।
আশপাশের চিৎকারে মনে হচ্ছে বাড়িতে উৎসব হচ্ছে?
হাসান মাহমুদ : বাড়িতে আছি। গ্রামের বাসায়, লক্ষীপুর। আমার জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবরে সবাই এখন খুশি।
আশপাশের গ্রাম থেকে কি দেখতে আসছে আপনাকে?
হাসান মাহমুদ : এখনো সবার কানে হয়তো পৌঁছায়নি। জানে না, আমি বাড়িতে আছি। পরিবারের সবাই আছে। তারা সবাই খুশি।
পরিবারের সবার প্রতিক্রিয়া কী?
হাসান মাহমুদ : বাবা শুনে তো জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করেছে। আমার চোখেও পানি চলে এসেছে। খুব আনন্দ। এটা যে কী, বলে বোঝাতে পারব না। ঈদের আনন্দ। তাদের খুশি দেখে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। এই অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম।
কার কাছ থেকে শুনলেন যে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন?
হাসান মাহমুদ : টিভিতে নিউজ দেখলাম। আর বিসিবি থেকে আমাকে আগেই বলেছিল যে, পাকিস্তান সফরে আমি ডাক পেতে পারি। যদি ডাক পাই তাহলে যেন ১৯ তারিখ রিপোর্টিং করি।
বলার অপেক্ষা রাখে না বিপিএলের পারফরম্যান্স আপনাকে নিয়ে এসেছে জাতীয় দলে। কোন উইকেট কিংবা কোন বোলিং স্পেলটার কথা এখন মনে পড়ছে?
হাসান মাহমুদ : সিলেটে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ম্যাচটা। ওই ম্যাচে ৪ উইকেট পেয়েছিলাম। রাইলি রুশোকে বোল্ড করার বলটা আমার সেরা উইকেট। ওটা অনেক দিন মনে থাকবে।
আপনার বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র গতি। বিপিএলে ১৩৫-১৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ধারাবাহিক বোলিং করেছেন। কখনো কখনো ১৪৩ ও উঠেছে। এর থেকেও কি জোরে বল করতে পারেন?
হাসান মাহমুদ : বিপিএলে আগের থেকে জোরে বল করেছি। আরো জোরে বল করার সম্ভাবনা আছে। যদি নিজেকে সেভাবে যত্ন করতে পারি। বিশ্রাম, পরিশ্রম, রুটিন মাফিক খাওয়া দাওয়া ও অনুশীলন ঠিকমতো মনোযোগ দিয়ে করতে পারি, তাহলে সম্ভাবনা থাকবে। এখন শুরু মাত্র। আশা করছি ভবিষ্যতেও এমন কিছু করতে পারব।
কখনো গতি কমাবেন?
হাসান মাহমুদ : গতির সঙ্গে আমি আপোষ করব না। আমার মূল অস্ত্রই গতি।
আর নিয়ন্ত্রণ?
হাসান মাহমুদ : সেটা আমি করতে পারি ভালোভাবেই। সামনে সময় আছে, সেগুলো আরো ভালোভাবে আয়ত্ব করতে চাই।
আপনি যাকে (শোয়েব আখতার) দেখে পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন, তার গতির বড় কারণ ছিল পেশীশক্তি। আপনি কি চাইবেন তেমন শক্তিশালী হতে? তাহলে তো গতি আরো বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে...
হাসান মাহমুদ : এসব নিয়ে আমার কাজ করার পরিকল্পনা আছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক। শরীরের বাড়তি শক্তি আপনার বোলিং গতি আরো বাড়িয়ে দেবে। জাতীয় দলে ঢুকছি মাত্র। বিসিবির ট্রেনার আমাকে দেখবে। আরো ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সেভাবেই হয়তো তৈরি করবে।
বাড়িতে গিয়ে কি খাওয়া-দাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন?
হাসান মাহমুদ : নাহ নাহ...খাওয়া-দাওয়ায় ডায়েট করছি। শাক-সবজি, ফলমূল এসব খাচ্ছি। আর বাড়িতে আসার কারণে মাছ বেশি খাওয়া হচ্ছে।
রোববার রিপোর্টিং, ফিরবেন কবে?
হাসান মাহমুদ : আজই রওনা দিয়ে দেব। উঠব অ্যাকাডেমিতে।
বিপিএলে আপনি ঢাকা প্লাটুনে খেলেছেন। অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছেন মাশরাফিকে। ওয়াহাব রিয়াজ আপনার বোলিংয়ের বেশ প্রশংসা করেছে...
হাসান মাহমুদ : মাশরাফি ভাই আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা। আমি বিপিএলের প্রতিটি মুহূর্তে ঘোরের মধ্যে ছিলাম যে উনি আমার টিমমেট। আমাকে বল করতে দিচ্ছে। ফিল্ডিংয়ে সরাচ্ছে। আমার অধিনায়ক ছিল। এসব আমার ভাবতেই অন্যরকম লাগত। কারণ, দিন শেষে উনি মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পেসার। আর ওয়াহাব রিয়াজের সঙ্গে আমি সময় কাটিয়েছি। ও আমার গতি নিয়ে দারুণ প্রশংসা করেছে।
যদি প্রথম ম্যাচেই সুযোগ হয়ে যায়, তাহলে কার উইকেট চাইবেন?
হাসান মাহমুদ : বাবর আজম। ও তো পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান এখন।
ঢাকা/ইয়াসিন/পরাগ/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন