ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আক্ষেপে কাটল প্রথম টি-টোয়েন্টি

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ২৪ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আক্ষেপে কাটল প্রথম টি-টোয়েন্টি

এক ম্যাচে কত কিছুর আক্ষেপ করবে বাংলাদেশ? অথচ শুরু থেকেই সব নিজেদের পক্ষে আসার কথা!

টস জিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অর্ধেক কাজ তো করেই দিয়েছিলেন। তবুও কেন ব্যাটিংয়ে এ দশা! আবার বোলিংয়ে কেন একই ভুল? শেষটা তো বেদনাবিধুর।

লোপ্পা ক্যাচ মিস। তিন বিভাগেই যেন ওলটপালট বাংলাদেশ। এমন পারফরম্যান্সে জয় কি মানায়? মানায় না বলেই শুক্রবার লাহোরে প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। টস জিতে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে তোলে ৫ উইকেটে ১৪১ রান। পাকিস্তান সেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ৩ বল আগে, ৫ উইকেট হাতে রেখে।

দুই দলের মন্থর ব্যাটিংয়ের প্রথম কারণ উইকেট। ধীরগতির উইকেটে সহজাত ব্যাটিং করা সম্ভব ছিল না। বল ব্যাটে আসছিল ধীরে। বল উঁচু-নিচু হচ্ছিল। তাইতো চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটেনি দুই ইনিংসেই। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৯.৩ ওভার খেলা হলো। অথচ ছক্কা হয়েছে মাত্র ৩টি। সেটাও বাংলাদেশের ইনিংসে। পাকিস্তানের ইনিংসে ছিল না কোনো ছক্কা! টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল প্রমাণ করল ছক্কা ছাড়াও ম্যাচ জেতা যায়।

তামিম ইকবালের নতুন সঙ্গী নাঈম শেখ। দুই বাঁহাতির উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৭১ রান। মন্থর ব্যাটিংয়ে দুজন দৃষ্টি কাড়েন। পাওয়ার প্লের সুবিধা নিতে পারেননি। ৬ ওভারে রান মাত্র ৩৫।   ধীরগতিতে ব্যাটিং করা তামিম উইকেটে থিতু হয়েছিলেন ভালোভাবেই। আগ্রাসন দেখানো মাত্র শুরু করেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন সাজঘরে। ৩৪ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৩৯ রান।  নাঈমও সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তরুণ ওপেনারও সেট হয়ে ফেরেন সাজঘরে। ৪১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৩ রান করেন। দুজন সেট ব্যাটসম্যান দীর্ঘসময় ক্রিজে থাকলেও তাদের ব্যাট থেকে আসেনি বড় ইনিংস। ম্যাচের পার্থক্য তৈরি হয় সেখানেই।

শেষ ৯ ওভারে পরের ব্যাটসম্যানরা প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহ ১৪ বলে ১৯, মোহাম্মদ মিথুন ৩ বলে ৫, সৌম্য সরকার ৫ বলে ৭ রান করেন। মাঝে লিটন দাস আউট হন ১৩ বলে ১২ করে। কঠিন উইকেটে ব্যাট করা সহজ ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্ট্রাইক রোটেট করতে পারছিলেন না।  ইনিংসের ৪৫ বলই ছিল ডট। ম্যাচের বড় পার্থক্য তৈরি হয় সেখানেই।

স্বল্প পুঁজিতেও লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে শফিউল ইসলামের বাবর আজমকে ফেরানো এবং পাওয়া প্লের শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের নেওয়া মোহাম্মদ হাফিজের উইকেট বলে দিচ্ছিল বাংলাদেশ দারুণ কিছু করবে। লড়াই করল ঠিকই। পাকিস্তানকে চাপে রাখল। বোলিংও ছিল আঁটসাট। কিন্তু ওভারপ্রতি দুটি বল খারাপ করেই গড়বড় করে দেন মুস্তাফিজ, শফিউলরা।

মুস্তাফিজ পরপর দুই ওভারে চার বাউন্ডারি হজম করেন লেগ সাইডে বল দিয়ে। শফিউলও তাই। লেগ সাইডে বল দিয়ে ব্যাটসম্যানকে উপহার দিয়েছেন বাউন্ডারি। মুস্তাফিজ ৪ ওভারের বোলিং স্পেলে রান দিয়েছেন ৪০। আর শফিউল ২৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। আল-আমিন ছিলেন দুর্দান্ত। ৪ ওভারে দিয়েছেন ১৮ রান, নিয়েছেন ১ উইকেট।

পাকিস্তানের ব্যাটিং অনেকটাই ছিল বাংলাদেশের মতো। প্রথম ৬ ওভারে তাদের রান ৩৬। বাংলাদেশের ছিল ৩৫।  পাকিস্তান দলীয় ১০০ পায় ৮৬ বলে, বাংলাদেশ পেয়েছিল ৯০ বলে। বাউন্ডারিও দুই দলের ছিল প্রায় সমান। পাকিস্তানের ১৫, বাংলাদেশের ১৩।  দুই দল প্রায় একই বিন্দুতে থাকলেও একজন পারফরমার দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন।

তিনি হলেন ম্যাচসেরা শোয়েব মালিক। উইকেটে থিতু হওয়ার পর কীভাবে ম্যাচ শেষ করতে হয়, তা আরেকবার দেখিয়ে দিয়েছেন। ৪৫ বলে ৫ বাউন্ডারিতে অপরাজিত ৫৮ রান করেছেন। তাতেই ম্যাচ জয়। বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান প্রায় সমান সময় ক্রিজে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কেউই দায়িত্ব নিতে পারেননি। সেজন্য বড় হয়নি দলীয় রান। তাতেই যত আক্ষেপ বাংলাদেশের।

তবুও শেষটায় রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল। ৬ বলে লাগত ৫ রান। সৌম্যর প্রথম দুই বলে ৩ রান নেন মালিক। পরের বলে মোহাম্মদ রিজওয়ান ক্যাচ দিয়েছিলেন মিথুনকে। কিন্তু লোপ্পা ক্যাচ ফেলে হতাশা বাড়ান মিথুন।

রাত পোহালেই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি। প্রথম টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্স কাটাছেঁড়ার সুযোগ কম। ভুল শোধরানোর সময়ও নেই। ব্যাট-বলের পারফরম্যান্সের থেকেও দৃঢ় মানসিকতা পাল্টে দিতে পারে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ফল।


ঢাকা/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়