ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মেঘ সরে রোদ্দুরের দেখা

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেঘ সরে রোদ্দুরের দেখা

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ওপর কালো মেঘ জমে ছিল দীর্ঘদিন। ক্রিকেটাকাশে সাফল্যের সূর্য্যের দেখা মিলছিল না। একের পর এক মেঘ জমে চিরেচ্যাপ্টা সাদা পোশাকের বাংলাদেশ। সেই মেঘ সরিয়ে অবশেষে দেখা মিলল রোদ্দুরের।

কাকতলীয়ভাবে মিরপুরের আকাশে ছিল আজ মেঘের ঘনঘটা। কালো মেঘে ঢেকে ছিল আকাশ। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোঁটাও ঝরেছিল। কিন্তু মধ্যদুপুরের হঠাৎ রোদ্দুরে সরে যায় মেঘ। তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসে আরেকটি সাফল্য। দ্বিতীয় ইনিংস ব্যবধানে জয়।

মিরপুরের আকাশ আর বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের থেকে মেঘ সরিয়ে রোদ্দুরের দেখা দিতে সাহায্য করে পরমবন্ধু জিম্বাবুয়ে। ২০০৫ সালে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়। ১৫ বছর পর তাদের বিপক্ষে আসল টেস্টের ১৪তম জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এর আগে একবারই বাংলাদেশ জিতেছিল ইনিংস ব্যবধানে। এবার জিম্বাবুয়েকে বাংলাদেশকে হারাল ইনিংস ও ১০৬ রানের ব্যবধানে।

বাংলাদেশকে আরেকবার ব্যাটিংয়ে পাঠাতে জিম্বাবুয়েকে ২৯৫ রান করতে হতো। আগের দিন ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বড় পরাজয়ের শঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল অতিথিদের। চতুর্থ দিনে স্বাগতিকদের দাপটে শঙ্কা আর শঙ্কা থাকেনি। নাঈমের ৫ ও তাইজুলের ৪ উইকেটে চা-বিরতির আগেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে ২৬৫ রান করা জিম্বাবুয়ে এবার অলআউট ১৮৯ রানে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছিল ৫৬০ রান।

মঙ্গলবার দিনের প্রথম রানের জন্য ২৮ বল অপেক্ষা করতে হয় জিম্বাবুয়েকে। শুরুর দুই ওভার করে মেডেন করেন তাইজুল ও রাহী। দিনের পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে টেলর দিনের প্রথম রান নিলে স্বস্তি ফিরে আসে অতিথি শিবিরে। কিন্তু ওই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

তাইজুল পরের ওভারে ভাঙেন আগের দিনের অপরাজিত জুটি। তাইজুলের লেগ স্ট্যাম্পের ওপরের বল কাসুজা লেগ সাইডে ফ্লিক করেছিলেন ঠিকঠাক মতো। কিন্তু বাড়তি বাউন্স ও টার্নে বল ব্যাটের কানায় লেগে দ্বিতীয় স্লিপে মিথুনের হাতে জমে যায়। বাংলাদেশ পেয়ে যায় দিনের প্রথম সাফল্য।

পেসার ও স্পিনারদের যৌথ আক্রমণে জিম্বাবুয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিল। একে তো রান আসছিল না, দ্বিতীয়ত নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তাদের ২২ গজে টিকে থাকা কঠিন হয়ে গিয়েছিল।

আগের দিন প্রথম ওভারে দুই উইকেট নেওয়া নাঈম আজ দিনের প্রথম ওভারেই সাফল্যর দেখা পান। ডানহাতি স্পিনারের বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লং লেগে ক্যাচ তোলেন জিম্বাবুয়ে দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলর। এলোপাথারি শটে জিম্বাবুয়েকে হতাশায় ডোবান ১৭ রান করা টেলর। ৪৪ রান তুলতেই ৪ উইকেট নেই অতিথিদের।

সেখান থেকে খানিকটা প্রতিরোধ গড়েন সিকান্দার রাজা ও ক্রেইগ আরভিন। ৬০ রানের জুটিতে দলের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান। কিন্তু বিরতির দুই ওভার আগে নিজেদের ভুলে ভাঙে জুটি। তাইজুলের বল কভার পয়েন্টে পাঠিয়ে দ্রুত রান নিতে চেয়েছিলেন রাজা। শুরুতে সাড়া দেননি আরভিন। কিন্তু সতীর্থের ডাকে সাড়া দিয়ে বিপদে ডেকে আনেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। পয়েন্ট থেকে সরাসরি থ্রোতে উইকেট ভাঙেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া আরভিনের ইনিংসটি শেষ হয় ৪৩ রানে। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৯ বলে ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন বাঁহাতি।

প্রথম সেশনে ৩ উইকেট তুলে নিজেদের কাজ এগিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনে জয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবুও লড়াই করল অতিথিরা। ২২ ওভারে হারিয়েছে শেষ ৫ উইকেট। বিরতির পর প্রথম আঘাত করেন তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনারের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে মুশফিকের দারুণ ক্যাচে সাজঘরের পথ ধরেন রাজা। শূন্যে লাফিয়ে দুই হাতে বল তালুবন্দি করেন ডাবল সেঞ্চুরির হাঁকানো মুশফিক।  ৪ রানে চাকাবা জীবন পাওয়ার পর নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি।

তাইজুলের ঘূর্ণির বিপরীতে স্লগ করতে গিয়ে মিড অনে তামিমের হাতে ক্যাচ দেন চাকাবা। ৪০ বলে ১৮ রান করেন তিনি। সফরকারী শিবিরের শেষ দুটি উইকেটও নেন নাঈম ও তাইজুল।

প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে পাঁচের মাইলফলক ছুঁতে পারেননি নাঈম। এবার সেই সুযোগটি নষ্ট করেননি ডানহাতি স্পিনার। মারুমাকে এলবিডব্লউ করে ম্যাচের নবম উইকেটের স্বাদ পান নাঈম। টেস্ট ক্রিকেটে এটি তার দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট শিকার।

আর্মার বলে টিসুমাকে এলবিডব্লিউ করেন তাইজুল। জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেট। আম্পায়ার আঙুলও তুলেছিলেন। কিন্তু রিভিউ থাকায় সফরকারীরা রিভিউ চাইলেন। তাতে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টাল না। প্রথম ইনিংসে দুই উইকেট পাওয়া তাইজুলের এবারের শিকার চারটি। জিম্বাবুয়ে অলআউট ১৮৯ রানে।

প্রত্যাশামাফিক ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিমের হাতে। তার দৃঢ়চেতা ইনিংস বাদে এ টেস্টে বাংলাদেশের অর্জন মুমিনুলের রানে ফেরা ও নাঈম হাসানের দুর্দান্ত বোলিং।

৬ টেস্ট পর সাদা পোশাকে জয়ের দেখা মিলল বাংলাদেশের। শুধু কি দলের ওপর থেকে মেঘ সরল? মেঘ সরিয়ে রোদ্দুরের দেখা পেলেন অধিনায়ক মুমিনুল হকও। চতুর্থ টেস্টে জয়ের স্বাদ যে পেলেন তিনি। হোক না প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, জয় তো জয়-ই।

 

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়