ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

নয়দিন লড়াই, শেষে সমঝোতায় ম্যাচের সমাপ্তি!

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নয়দিন লড়াই, শেষে সমঝোতায় ম্যাচের সমাপ্তি!

একবার ভাবুন তো, আপনাকে টেস্ট ম্যাচ উপভোগ করতে হবে, যেটির কোনো সময়সীমা থাকবে না। ফল বের না হওয়া পর্যন্ত খেলা চলতেই থাকবে!

সোজা বাংলায় টাইমলেস টেস্ট। ২০২০ সালে আপনি কি সেই ম্যাচ উপভোগ করবেন? ২২ গজে স্টিভেন স্মিথ বা বিরাট কোহলি নইলে মিচেল স্টার্ক বা নেইল ওয়াগনার যেই থাকুক টাইমলেস টেস্ট উপভোগ করা এ সময়ে শুধু কঠিনই নয় কষ্টসাধ্য। দর্শকদেরও দিতে হবে ‘টেস্ট’।

১৯৩০ সালের ৩ এপ্রিল এমনই এক টেস্ট খেলতে কিংসটনে নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড। নয়দিন লড়াই হয়েছিল। এরপর দুই দল সমঝোতায় ম্যাচের সমাপ্তি টানে। ওই টেস্টে রেকর্ডবুক ওলটপালট হয়ে যায়। ওই সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ টাইমলেস টেস্ট ছিল সেটাই। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসও হয়েছিল, দুই দলের রান মিলিয়ে ছাড়িয়ে গিয়েছিল অতীতের সব রেকর্ড।

ইংল্যান্ডের ওপেনার অ্যান্ড্রু সান্ডহাম প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে পেয়েছিলেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। ৩২৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। প্রায় ১০ ঘন্টা ব্যাটিং করেছিলেন, ২ নম্বর পজিশনে নেমে। তাঁর রেকর্ডটি টিকে ছিল ৭৩ বছর। ২০০৩ সালে ম্যাথু হেডেন ৩৮০ করার পথে ভেঙেছিলেন তাঁর রেকর্ড।

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৮৪৯ রানে অলআউট হয়। জবাবে ঘরের মাঠে ২৮৬ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে ২৭২ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ৮৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে ৪০৮ রান তোলে।

প্রথম তিন দিন লড়াইয়ের পর অর্থাৎ ৩, ৪ ও ৫ এপ্রিল লড়াইয়ের পর একদিনের বিশ্রাম দেওয়া হয়। ৭ এপ্রিল চতুর্থ দিনের খেলায় নামে দুই দল। ৭ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত টানা খেলা হয়েছিল। শেষ দুদিন বৃষ্টিতে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। এরপর ‘বিরক্ত’ হয়ে দুই দল সমঝোতায় ম্যাচের সমাপ্তি টানে।

তবে নয় বছর পর টাইমলেস টেস্টের রেকর্ড ভেঙে দেয় ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ১১দিন স্থায়ী হওয়ার পর ওই টেস্টও সমঝোতায় শেষ হয়। ইংল্যান্ড দলের জাহাজ ধরার তাড়া থাকায় ম্যাচ সমঝোতায় ড্র করতে বাধ্য হয় দুই দল।

ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ টাইমলেস টেস্ট খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার এক ক্রিকেটার বলেছিলেন, ‘এ ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে আমাকে দুইবার চুল ছাঁটতে হয়েছিল।’

আর তারই এক সতীর্থ নিজের ভয়াবহতা ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে, ‘প্রায় রাতে আমার স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে বসে থাকত। আমি জানতাম না কেন। পরে অবশ্য শুনেছি, ও দেখত আমি ঘুমের মধ্যেই এলবিডব্লিউর জন্য আবেদন করছি! ম্যাচে তো ৬ উইকেট পেয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু একটাও তো এলবিডব্লিউ না। তবে প্রচুর আবেদন করেছিলাম। তাই ওই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না।’

৮০ বছর আগের ম্যাচ আজও চর্চিত। এমন এক ম্যাচ যা শুরু হয়েছিল, কিন্তু শেষ হয়নি! তাইতো ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজার হলমেস জাহাজে ওঠার আগে বলেছিলেন, ‘আমি খুশি যে ম্যাচে কোনো ফল হয়নি। এটা প্রমাণ করে ম্যাচটি জয় এবং পরাজয়ের থেকেও বেশি কিছু ছিল। পুরোটাই ক্রিকেটের বাইরে ছিল।’

 

ঢাকা/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়