ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সিলেট বিকেএসপিতে ফুটবলের জয়গান

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিলেট বিকেএসপিতে ফুটবলের জয়গান

বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনের একাধিক তারকা। যারা দেশের পতাকা তুলে ধরেছেন বিশ্বমঞ্চে।

ক্রীড়ার মানোন্নয়ন, পর্যাপ্ত  ক্রীড়া  অবকাঠামোগত সুবিধাদি  এবং  সঠিক  প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে ‘বাংলাদেশ  ইন্সটিটিউট  অব স্পোর্টস’  (বিআইএস)  প্রতিষ্ঠার  পরিকল্পনা  করে। এরপর ১৯৮৩ সালে যার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ  ক্রীড়া  শিক্ষা  প্রতিষ্ঠান  (বিকেএসপি)।  ১৯৮৬ সালের  ১৪ এপ্রিল  প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকেই বিকেএসপি সর্বোচ্চ একাগ্রতার সাথে উচ্চমানের খেলোয়াড় তৈরির কাজ  নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সাভারে মূল বিকেএসপির বাইরেও পাঁচটি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। সেগুলো হলো বরিশাল, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, খুলনা ও সিলেটে।

ভবিষ্যত অ্যাথলেটদের স্বপ্নের ঠিকানা বিকেএসপি কেমন চলছে? কেমন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন অ্যাথলেটরা। রাইজিংবিডি-র ধারাবাহিক প্রতিবেদনে উঠে আসবে সব। আজ পড়ুন সিলেট বিকেএসপির আদ্যোপান্ত।

আরও পড়ুন :

উপমহাদেশের সেরা ফুটবল একাডেমি হওয়ার কথা ছিল। কথা দেওয়া হয়েছিল এখানে আসবে ফিফা, এএফসির কোচ-ট্রেনাররা। আসবেন বড় বড় ফুটবল তারকারা। শুধু তাঁরাই নন, বিদেশ থেকে পুষ্টিবীদ, মনোবিদ নিয়ে আসা হবে। তৈরি করা হবে আগামী প্রজন্মের ফুটবলার। কিন্তু ছয় বছরেও সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে গেছে সিলেট বিকেএসপিতে। তবে আশার কথা হচ্ছে এত অপূর্ণতার মাঝেও ফুটবলার তৈরি হয়েছে এখানে। এখানকার অনূর্ধ্ব-১৫ দল সাফ জিতিয়েছেও। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের কোনো সুযোগ-সুবিধাই তাঁদের দেওয়া হয়নি!

২০০৫ সালে সিলেট বিকেএসপির যাত্রা শুরু। ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এ প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ পায়। ফিফার অর্থায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ ফুটবল একাডেমি করার উদ্যোগ নিয়েছিল বাফুফে। তবে একাডেমি করতে পারেনি তারা। ফলে ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর এই আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ফের হাতে নেয় বিকেএসপি। এরপর ২০১৭ সালে ৩২ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে ফুটবল ডিসিপ্লিন দিয়ে এই আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। এরপর আর কোন ডিসিপ্লিন যুক্ত হয়নি। তবে গত মাসেই এই কেন্দ্রে  তায়কোয়ান্দো  যুক্ত করা হয়। তবে করোনা ভাইরাস সংকটের কারণে এ ডিসিপ্লিনের প্রশিক্ষণ এখন আটকে আছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

বলুন তো, একটি জিমনেশিয়াম কিংবা সুইমিংপুল আধুনিকায়ন করতে কতোদিন সময়ের প্রয়োজন হয়?  সিলেট বিকেএসপি চালুর পর থেকে আজ পর্যন্ত শুধু শোনাই গেল, এখানকার জিম এবং সুইমিংপুল আধুনিকায়ন করা হবে। তবে ওই পর্যন্তই সব। মাঠের ফুটবল দিয়ে এখানে খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ছেলেদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে তথৈবচ। আর এটি অনুভব করছেন এখানকার ফুটবল কোচ রবিউল ইসলামও, ‘প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য জিম খুবই প্রয়োজন। জিমনেসিয়াম ভবন থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। শুনেছি সরঞ্জামের অনুমতি হয়ে গেছে; করোনার কারণে তা আটকে আছে। এছাড়া সুইমিং একজন খেলোয়াড়ের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকারি অনুশীলন। শুনেছি সুইমিংপুল সচল করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’ 

সীমাবদ্ধতা থাকলেও সিলেট বিকেএসপি নতুন খেলোয়াড় তৈরিতে অবদান রেখে আসছে। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে এখানকার বেশ কয়েকজন প্রতিভাধর ফুটবলার খেলছেন। তবে জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় তৈরি করতে পারেনি এখনও। শিক্ষা কার্যক্রম অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হওয়ার কারণে পরবর্তীতে কেউই থাকতে পারেনা এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।  ফলে সিনিয়র লেভেলের জন্য খেলোয়াড়ও তৈরি করা যায় না। তবে সংশ্লিষ্টরা শোনালেন আশার বাণী, ‘উচ্চতর শিক্ষা চালুর জন্য এখানে ৬ তলা বিশিষ্ট নতুন একটি ভবন নির্মাণাধীন। এই ভবন চালু হলে এখানেই উচ্চতর শ্রেণিরও পাঠদান করা হবে।’

তবে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিয়ে আশাবাদী কোচ, ‘২০১৭ সালে প্রথম ব্যাচে ৩২ জন প্রশিক্ষণার্থী ছিলো। ওই ব্যাচের ১৪ জন ছেলে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছে। এ বছর অনূর্ধ্ব-১৬ তে খেলা ৭জন এই কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থী। এছাড়া ২০১৭ ও ’১৮ সালে আসা ব্যাচের কয়েকজন অনুর্ধ্ব-১৮ দলে খেলছেন। এখানকার বর্তমান ব্যাচের ১৫-১৬ জন বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলছেন। তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে আমরা আশাবাদী। সীমাবদ্ধতার ভেতরেও তাদেরকে সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতে সিলেট বিকেএসপি থেকে আরও ভালোমানের ফুটবলার পাবে বাংলাদেশ।’ 

সিলেট শহর বাইপাসের সুরমা গেইট পয়েন্ট থেকে একটু এগুলেই দেখা মিলবে সিলেট বিকেএসপি। শহর থেকে দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। চারদিকে নীরবতা, কোলাহলমুক্ত এমন পরিবেশের ১৩ একর আয়তনের এই ক্যাম্পাসে চলছে আগামীর খেলোয়াড় তৈরির কার্যক্রম। বর্তমানে শুধুমাত্র ফুটবল ডিসিপ্লিনে প্রশিক্ষণার্থী আছেন ৭০ জন। সাভারের মূল বিকেএসপির পর সিলেট বিকেএসপি ফুটবলার তৈরির বড় ঠিকানা। নতুন যোগ হয়েছে তায়কোয়ান্দো। এই ডিসিপ্লিনের প্রথম ব্যাচে যোগ দেবেন ১৮ শিক্ষার্থী। দুটি ফুটবল মাঠের পাশাপাশি একটি টেনিস কোর্টও আছে এখানে। ফুটবলের একটি মাঠে সিনটেথিক ফুটবল টার্ফ নির্মাণ করা হচ্ছে। চারজন কোচ এবং ছ’জন শিক্ষককে নিয়ে চলছে সকল কার্যক্রম।

ভবিষ্যতে আঞ্চলিক এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. ইসরাফিল আলম। তিনি বলেন, ‘ছেলেদের লেখাপড়ার জন্য একটি ৬ তলার কলেজ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ভবন নির্মাণ হলে ১১০ থেকে ১২০ জনের প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে। বর্তমানে ফুটবল এবং  তায়কোয়ান্দো  নিয়েই কাজ চলছে। ডিসিপ্লিন বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা রয়েছে। তবে জায়গা বৃদ্ধি করতে না পারলে মাঠের সংখ্যা বাড়বে না। ক্রিকেট করতে হলে বড় দুটি মাঠ লাগবে। ভবিষ্যতে জায়গা বৃদ্ধি হলে ক্রিকেটসহ অন্য ডিসিপ্লিন চালু হবে।’ 

সিলেট বিকেএসপিতে একজন খন্ডকালিন চিকিৎসক সপ্তাহে দু’দিন সেবা প্রদান করেন। তবে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে পূর্ণকালীন একজন ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগ করা হচ্ছে। একই সাথে পাঁচ বেডের একটি মেডিকেল সেন্টার নির্মাণের অনুমোদন হয়ে গেছে। কিন্তু করোনা সংকটের কারণে এ দু’টিও আটকে আছে বলে জানালেন তিনি।

আরও পড়ুুন: 

 

ঢাকা/নোমান/ইয়াসিন/কামরুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়