শুধুই ভালোবাসেন না বলে সন্তানকে খুন করলেন ফুটবলার বাবা
সন্তান, যে কোনো বাবা-মায়ের কাছে পরম আরাধ্যের সম্পদ। আর তাই সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা হয় আকাশচুম্বী। পৃথিবীতে তাই সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের চেয়ে আপন হয় না আর কেউই। যে কোনো বিপদ-আপদে সন্তানের ছায়া হয়ে থাকেন তারা। তার্কিশ ফুটবলার সেভার টক্তাসের ছেলে কাশিম টক্তাসও হয়ত বাবার কাছে সেই আশ্রয়টুকু চেয়েছেন। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনার উপসর্গ থাকায় বাবার সাথে কোয়ারেন্টাইনে দারুণ সময় কাটানোর প্রত্যাশাই হয়ত ছিল কাশিমের।
কিন্তু ৫ বছর বয়সী সন্তান কাশিমের প্রতি ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে সেভারের। আশ্রয়ের শেষ ভরসা না হয়ে তাই ঘাতক হিসেবে সন্তান কাশিমের কাছে ধরা দেন সেভার টক্তাস। নিজ হাতে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন সন্তানকে। করোনার উপসর্গ থাকায় শুরুতে এই ভাইরাসে মারা গেছেন বলে ছড়িয়ে দেন সকলের কাছে। কিন্তু নিজের অপরাধবোধের সাথে যেন আর পেরে উঠলেন না। অবশেষে সন্তান হত্যার ১১ দিন পর পুলিশের কাছে গিয়ে পুরো ঘটনার জবানবন্দি দিলেন ৩২ বছর বয়সী এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার।
তুর্কির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, গত ২৩ এপ্রিল নিজের ছেলে কাসিমকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সেভার। কাসিমের গায়ে তখন প্রচণ্ড জ্বর এবং শ্বাসকষ্টও ছিল প্রবল। ফলে ডাক্তাররা কোন ঝুঁকি না নিয়ে, করোনা উপসর্গ হিসেবে বাবা-ছেলেকে একসঙ্গে হাসপাতালের একটি কক্ষে কোয়ারেন্টাইনে রাখেন।
আর সেখানেই বালিশ চাপা দিয়ে নিজের ছেলেকে খুন করেন সেভার। মেরে ফেলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারদের ডেকে আনেন তিনি। আগে থেকেই করোনা উপসর্গ থাকায়, কাসিমের এ মৃত্যুকে করোনা আক্রান্ত হয়ে অন্যান্য মৃতের মতোই গণ্য করেন ডাক্তাররা। পরিবারের সদস্যরাও সন্দেহ করেনি কিছুই। কাসিমের লাশও দাফন করা হয় পরদিনই।
কিন্তু দাফনের দশ দিন পর নিজ থেকে থানায় যান সেভার এবং বর্ণনা দেন আসল ঘটনার। তিনি জানান, যখন হাসপাতালে কেউ ছিল না, তখন বালিশ চাপা দিয়ে তিনিই ছেলেকে হত্যা করেছেন। কারণ সন্তানের প্রতি কোন ভালোবাসাই নাকি ছিল না তাঁর।
ঘটনার জবানবন্দিতে সেভার বলেন, ‘আমার পিঠের ওপর শুয়ে ছিল সে (কাসিম)। তখন আমি ওর মুখে বালিশ চেপে ধরি। টানা ১৫ মিনিট সেটি ধরে রেখেছিলাম। আমার ছেলের তখন অনেক কষ্ট হচ্ছিল। যখন আর নড়াচড়া করছিল না, তখন বালিশ উঠিয়ে নেই। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারদের ডেকে নেই। যেন কেউ আমার ওপর সন্দেহ না করে।’
জবানবন্দিতে সেভার জানিয়েছেন, মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্ত নন তিনি। অতীতেও এমন কোনো সমস্যা ছিল না তাঁর। কেবলমাত্র সন্তানকে আর ভালোবাসতেন না বলেই হত্যা করেছেন তিনি।
এ ঘটনায় এরই মধ্যে মামলা হয়েছে সেভারের নামে। তুরস্কের আদালত আদেশ দিয়েছে লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করার। তদন্ত চলছে পুরো ঘটনার। আর পুরো ঘটনা হত্যার অভিযোগ সত্য হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে সেভারকে।
৩২ বছর বয়সী সেভার টক্তাস ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে তুর্কির সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন। সবশেষ বুরসা ইয়েলদ্রিম স্পোরের হয়ে খেলেছেন তিনি।
তুর্কি ফুটবলার সেভার টক্তাস তাঁর ছেলে কাসিমকে জীবনের সবচেয়ে বড় এক শিক্ষা দেন। যে ছিল, ‘কখনও পৃথিবীর উপর নির্ভর করো না।’ তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কাসিম শিক্ষাটা আত্মস্থ করতে করতে পৌঁছে যায় পরপারে। বেঁচে থাকতে যদি জানতো সে, তবে কী কাসিম তাঁর পৃথিবী, বাবা সেভারের উপরও হাসপাতালের সেই কোয়ারেন্টাইনের সময় বিশ্বাস রাখতো…!
ঢাকা/কামরুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন