২০২২ যুব বিশ্বকাপ: দল তৈরিতে করোনার ধাক্কা, সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
যুব বিশ্বকাপজয়ী দলকে সংবর্ধনা দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে প্রথম শিরোপা এনে দিয়েছিলেন আকবর আলীরা। গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারতকে হারিয়ে বিজয়ের ঝাণ্ডা উড়ায় যুব এই দল। যুবাদের শিরোপা জয় কোনো রূপকথা ছিল না, সোনার কাঠি, রূপার কাঠির পরশেও আসেনি। এ সাফল্য এসেছে নিখুঁত প্রক্রিয়ায় চার বছর ধরে চলা দীর্ঘ পরিকল্পনা ও সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
স্বপ্নের শিরোপা অর্জনের পথে বড় কারিগর ছিলেন বিসিবির পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন। তাঁর দীর্ঘ পরিকল্পনা ও একান্ত সদিচ্ছায় বিসিবির অর্জনের খাতায় যুক্ত হয় যুব বিশ্বকাপের শিরোপা। দুই বছর পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজে আছে আরেকটি যুব বিশ্বকাপ। চ্যাম্পিয়ন ট্যাগ নিয়েই সেই আসরে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু আকবরদের উত্তরসূরির খোঁজ এবং তাদের তৈরি করার কার্যক্রম পুরোপুরি থমকে আছে।
তাইতো খালেদ মাহমুদ সুজন আক্ষেপ করে বললেন, ‘ওরা বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে থেকেই আমরা ওদের উত্তরসূরি খোঁজার কার্যক্রম চালু করেছিলাম। বয়সভিত্তিক দল থেকে বেশ কয়েকজন ভালো প্রতিভাও পেয়েছি। কিন্তু করোনার কারণে আমরা ছয় মাস পিছিয়ে গেলাম।’
জানা গেছে, বয়সভিত্তিক দল থেকে প্রাথমিক দল তৈরি করে তিন দিনের ম্যাচের লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা সম্পন্ন করে রেখেছে গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগ। মার্চ ও এপ্রিলে সিলেটে শুরু হওয়ার কথা ছিল ওয়ানডে টুর্নামেন্ট। সেখান থেকে ২৫ থেকে ৩০ জন ক্রিকেটারকে বাছাই করে প্রাথমিক দল তৈরির কথা ছিল। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে সব পরিকল্পনাই থমকে আছে। যেভাবে আকবর আলী, শরীফুল ইসলাম ও রাকিবুলদের বিসিবি তৈরি করেছে, পরবর্তী অনূর্ধ্ব-১৯ দলটিকেও একইভাবে তৈরি করার পরিকল্পনা সুজনের।
‘পরবর্তীতে যারা আসবে তাদেরকে একই পরিকল্পনায় তৈরি করার ইচ্ছে আমাদের। আকবররা দুই বিশ্বকাপের মাঝে ৩৬ ম্যাচ খেলেছে। দেশে ও দেশের বাইরে ওদের এসব ম্যাচ খেলানো হয়েছে। ইংল্যান্ডে, শ্রীলঙ্কায়, দক্ষিণ আফ্রিকায়, নিউজিল্যান্ডে ম্যাচ খেলেছে। সামনে যারা আসবে তাদেরকেও এভাবে তৈরি করা হবে। আমাদের বোর্ড সভাপতি আমাদেরকে ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছেন। যেটা করার প্রয়োজন সেটাই আমাদেরকে করতে বলেছেন। কিন্তু করোনার কারণে আমরা পুরোপুরি পিছিয়ে গিয়েছি।’
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্বকাপের পূর্ব পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৩৬ ম্যাচ খেলেছিলেন আকবর-শরীফুলরা। বিশ্বকাপের পর আকবর বলেছিলেন, ‘ম্যাচ পরিস্থিতিতে একজন ক্রিকেটারের ও দলের আসল সামর্থ্য বেরিয়ে আসে। আমরা বিশ্বকাপের আগে এত ম্যাচ খেলার কারণে আমাদের টিম বন্ডিংটাও ভালো হয়েছে।’
যুব বিশ্বকাপের সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছিল দলের বন্ধন। দুই বছর একসঙ্গে থাকায় আকবররা নিজেদের উপর বিশ্বাস তৈরি করে ফেলেছিলেন। নিজেদের শক্তি, নিজেদের দূর্বলতা সবই তারা বুঝে যান। মাঠের ক্রিকেটে সেই চিত্র ফুটে উঠে প্রবলভাবে। সামনেও ক্রিকেটারদের সেই সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার ইচ্ছা যুব বিশ্বকাপের নেপথ্যরে কারিগর সুজনের, ‘আমরা পেপার ওয়ার্ক কিছু করে রাখছি। করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলেই যেন মাঠে নামতে পারি সেই কাজগুলি করে রাখছি।’
দুই বছরে যুব দলকে ৩০টির বেশি ম্যাচ খেলানোর পরিকল্পনা বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের। এজন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। তবে প্রাথমিক আলোচনাতেও নীতিনির্ধারকদের একটাই প্রশ্ন, ‘করোনা প্রকোপ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?’
চলতি বছরের ছয় মাস শেষ হতে চললো। করোনা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে নেই। বিসিবিরও ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরানোর পরিকল্পনা নেই। এ বছর যদি যুব দলের কোনো কার্যক্রম না হয় তাহলে নতুন দল গঠন করে তাদের বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করতে মাত্র এক বছর সময় পাবে বিসিবি। কাজটা শুধু তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং নয়, যুব দলকেও দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা।
ঢাকা/ইয়াসিন/কামরুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন