নানা প্রশ্ন ক্রিকেটারদের মনে, উত্তর নেই কোথাও
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে চলতি সপ্তাহে ক্রিকেটারদের মাঠে নামানোর অনুমতি পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড। নিজ শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজি স্টেডিয়ামে শুরুতে ট্রেনিং করার অনুমতি পেয়েছেন আমলা, ডি ককরা।
এদিকে ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে মাঠে নামছে ৮ জুলাই। পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ইতিমধ্যে সেখানে পাড়ি জমিয়েছে। শ্রীলঙ্কা অনুশীলন করতে মাঠে নেমেছে সবার আগে। পুঁচকে ক্রিকেট দেশ আফগানিস্তানও অনুশীলনের হাওয়া গায়ে মেখেছে। নিউ জিল্যান্ড ট্রেনিংয়ে ফিরবে যে কোনো সময়। ভারত, অস্ট্রেলিয়া রয়েছে অপেক্ষায়। সেই তালিকায় আছে বাংলাদেশের নামও।
তবে কবে মাঠে ফিরবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা? টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের কণ্ঠে ছিল প্রায় একই প্রশ্ন, ‘আমাদের মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে?’ একই সুর ছিল সৌম্য সরকারের কণ্ঠেও, ‘আমরা কবে মাঠে নামতো পারবো?’ শুধু মুমিনুল-সৌম্য নয়, জাতীয় দল ও বাইরের সকল ক্রিকেটারদের মনে নানা প্রশ্ন। তবে সবার প্রশ্ন কিনারা পেয়েছে ওই একটি জায়গায়, ‘আমরা কবে মাঠে ফিরবো?’
পেশাদার ক্রিকেটারদের ক্রিকেটের বাইরে আয় করার সুযোগ সামান্যই। মাঠে যখন খেলা নেই তখন স্বাভাবিকভাবেই রুটি-রুজি নিয়ে বাড়ছে চিন্তা। প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর অনেক ক্রিকেটারই এখন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ হওয়ার পর ক্রিকেটারদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এ বছর যদি লিগ আর না হয় তাহলে বিশাল আর্থিক ধাক্কা হজম করতে হবে ক্রিকেটারদের। সেটা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদেরও।
তামিম ইকবাল বলছিলেন, ‘জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বিপিএল ও বিসিএল খেলেনা এমন অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের অপেক্ষায় থাকে। তাদের প্রতি ক্লাবগুলোরও আগ্রহ থাকে। এজন্য ভালো টাকায় চুক্তি করে। যেটা দিয়ে এক বছর তাদের চলে যেতে পারে। এবার যদি লিগ আর না হয় তাহলে তাদের থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আর কেউ হবে না।’ তামিমের জিজ্ঞাসা, ‘আমাদের খেলা, ট্রেনিং কবে শুরু হবে তা জানা নেই কারোই।’
মুমিনুল হকের শঙ্কা, ‘যেভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তাতে আমাদের মাঠে ফেরার সম্ভাবনা দূরে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বোর্ড ঝুঁকি নিয়ে আমাদের মাঠে ফেরাবে না।’ সৌম্যর জানতে চাওয়া, ‘যদি মাঠে ফিরিও আমাদের লিগ শুরু হবে নাকি অন্য কিছু? ট্রেনিংয়ের কতদিন পর লিগ শুরু হবে?’
জাতীয় দলের রাডারে নেই শাহরিয়ার নাফিস। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জানতে চাইলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই এটি সত্য। কিন্তু ক্রিকেটারদের মাঠে নামার জন্য কোনো নির্দেশনা পাওয়া গেছে কি না। উদ্বিগ্ন নাফিসের কন্ঠে চরম আশঙ্কা, ‘করোনাভাইরাসে দেশের পরিস্থিতি ভালো না। তারপরও জীবিকার প্রয়োজনে অনেকে অনেক কিছু করছে। কিন্তু আমরা ঘরে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লিগটা শুরু না হলে আমাদের ক্রিকেটারদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। আর্থিকভাবে ক্রিকেটারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সারভাইভ করা অনেক কঠিন।’
গত মাসে ক্রিকেটারদের ফেরানোর সব প্রস্তুতি নিয়েছিল বোর্ড। বিসিবি ধারণা করেছিল, ঈদের পর ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরানো যাবে। বিশেষ করে লকডাউন কিছুটা শিথিল করায় মাঠে চালু করতে পারবে ট্রেনিং। কিন্তু সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি বোর্ড। পাশাপাশি বোর্ডও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নিজের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খানও বললেন প্রায় একই কথা, ‘পরিস্থিতি ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ আসলে দেখছি না। যারাই ঘর থেকে বের হচ্ছে একেবারে নিজেদের ঝুঁকি নিয়ে বের হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে ক্রিকেট চালু করা কতটুকু ঠিক হবে সেটাই আমরা চিন্তা করছি।’
মুশফিকুর রহিম সাহস করে নিজের বাসার সামনের রাস্তায় দৌড়েছিলেন কয়েকদিন। এখন সতর্কতার জন্য ঘরের ভেতরেই করছেন সব ফিটনেস ট্রেনিং। দেশের ক্রিকেটের চিত্রটা এখন এমনই। সতর্ক বোর্ড, সতর্ক ক্রিকেটাররাও।
ঢাকা/ইয়াসিন/কামরুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন