ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

‘স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা পাওয়া যাবে ২০২৭ পর্যন্ত’

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২১ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা পাওয়া যাবে ২০২৭ পর্যন্ত’

বিশেষ প্রতিবেদক : স্বল্পোন্নত দেশের সব সুযোগ-সুবিধা ২০২৭ সাল পর্যন্ত পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন  অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ছয় বছর পর্যবেক্ষণের পর ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। তবে ২০২৭ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশের সুযোগ সুবিধা বন্ধ হলেও আমাদের জন্য কোন চিন্তার কারণ নেই কেননা নতুন নতুন সুবিধার জন্য আরও উইন্ডো খোলা হবে।

বুধবার সকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এসময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, ইআরডি সচিব শফিকুল আজমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর বিশ্বভিক্ষুক নয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল। আগে বিশ্বের যে কোনও স্থানে গেলে শুধু আমাদের বদনাম শুনতে হয়েছে যে বাংলাদেশ একটি গরীব দেশ। শুধু সাহায্য চায়। এখন আর বাংলাদেশ সে অবস্থানে নেই। বাংলাদেশ এখন পাতাল থেকে আসমানে উঠেছে। আগে নিচে ছিলাম, এখন ওপরে উঠেছি এবং আরও উঠবো। বাংলাদেশের এই অর্জন ধুমধামের সঙ্গে আমরা উদযাপন  করবো না কেন !’

তিনি বলেন, ‘এলডিসি দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হওয়া উপলক্ষে ২০ তারিখ থেকে উৎসব শুরু হয়েছে। এই উৎসব চলবে ২৬ মার্চ পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী এই অর্জনের রূপকার। ২২ মার্চ সকালে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধণা দেওয়া হবে। এদিন দুপুরের পর রাজধানীর ৯টি অঞ্চল থেকে জনগণ র‌্যালি সহকারে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জমায়েত হবে বিকাল ৩টার মধ্যে। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এখানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।’

মুহিত বলেন, ‘আগামী ২৬ তারিখ পর্যন্ত সরকারের সব দফতর থেকে জনগণকে যে কোনও একটি সেবা ফ্রি দেওয়া হবে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি- এই ঘোষণা পেয়েছি ১৭ তারিখ। এটি বাস্তবায়ন হবে ২০২৪ সালে। এই মধ্যবর্তী ছয় বছর জাতিসংঘের কাছে আমরা এলডিসি হিসেবেই থাকবো। তবে বিশ্বব্যাংকের কাছে আমরা ইতোমধ্যেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গেছি।

এলডিসি থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে, এর মূল চ্যলেঞ্জ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন,  ‘এর মূল চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের মানসিক পরিবর্তন। মানসিক পরিবর্তনের জন্যই আমাদের এই অর্জন। আমরা যে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি সেটা আমাদের মানসিকভাবে ধারণ করতে হবে।’

সামনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা এলডিসি থাকব। ২০১৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত একটা ট্রানজিশনে থাকব। আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন করতে হবে। বেশি হারে আন্তর্জাতিক ঋণ নেওয়ার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।’

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সামনের সব সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানোর ওপর জোর দেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘মানসিকতার পরিবর্তনে ইতোমধ্যে আমরা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কোন খাতে কত ঋণ নেব, সে বিষয়ে সাবধান হতে হবে।’

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশকে জাতিসংঘ জানায় ১৭ মার্চ। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ মিশনের কাছে সেদিন ওই স্বীকৃতিপত্র হস্তান্তর করা হয়।

অর্থমন্ত্রী জানান, ওই স্বীকৃতিপত্র মঙ্গলবার দেশে এসেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তা হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মাথাপিছু আয়, মানবোন্নয়ন সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের ভিত্তিতে তিন বছর পর পর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের আবেদন পর্যালোচনা করে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। একটি দেশের মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১২৩০ ডলার, মানবোন্নয়ন সূচকে স্কোর ৬৬ বা তার বেশি এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে স্কোর ৩২ বা তার কম হলে সেই দেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির যোগ্য বিবেচনা করা হয়।’

পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১২৭১ ডলার, মানবোন্নয়ন সূচকের স্কোর ৭২ দশমিক ৯ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে স্কোর ২৪ দশমিক ৮ হওয়ায় বাংলাদেশ এ স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পর বাংলাদেশ এবারই প্রথম তিনটি সূচকে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে সক্ষম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে সিডিপির ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ যদি আবারও এ মানদ-গুলোর কমপক্ষে দুটি পূরণ করতে পারে, সিডিপি তখন বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য সুপারিশ করবে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল তা অনুমোদন করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাঠাবে।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এ স্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশের জন্য দুই চারটি ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হলেও অনেক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, জিএসপিসহ নতুন নতুন অনেক ক্ষেত্রে দরজা খুলে যাবে। 

মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে সম্মানজনক স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এটা বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল সম্মান।’

আগামী তিন বছর পর ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়