ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতশুভ্র সাগরমাতা

ইকরামুল হাসান শাকিল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ১৫ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতশুভ্র সাগরমাতা

(কাঞ্চনজঙ্ঘার সোনালী আলোয়: পঞ্চম পর্ব)

ইকরামুল হাসান শাকিল:
 পানি আর চকলেট খেয়ে আবার উপরের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। কিছু সময় হাঁটার পর আমরা চলে এলাম ১২,৬৬৫ ফুট উচ্চতায় এভারেস্ট ভিউ হোটেলের কাছে। আবহাওয়া অনেক ভালো। রোদ আছে। মেঘও নেই। প্রথমেই দেখতে পেলাম রাজসিংহাসনের মতো দু’হাত প্রসারিত করে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে মাউন্ট আমা-দাব্লাম। আমরা যে দু’টি পর্বত অভিযানে এসেছি মাউন্ট আমা-দাব্লাম একটি। পেছনেই সবার উপর দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতশুভ্র পবিত্র সাগরমাতা। পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট।

পৃথিবীর সর্বোচ্চতায় সব থেকে বড় মন্দির থায়াংবুচে মুনাস্ট্রি দেখতে পেলাম এখান থেকে। দূর থেকে মুনাস্ট্রি ছোট দেখাচ্ছিল। এভারেস্ট ও আমা-দাব্লামকে পেছনের দৃশ্য করে আমরা সবাই ছবি তুললাম। এভারেস্ট ভিউ হোটেলের পাশ ঘেঁষে সামনের দিকে নামতে শুরু করলাম। উপর থেকেই খুমজুং গ্রামটি দেখতে পেলাম। দূরের উপর থেকে গ্রামগুলো দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে। চারদিকে উঁচু পাহাড় ঘেরা মাঝখানে মানুষের ঘরবাড়ি। খুম্বু অঞ্চলে এই গ্রামটিই সব থেকে বড় গ্রাম। আর এই গ্রামটি এডমুন্ড হিলারীর স্মৃতি বহন করছে। হিলারী পৃথিবীর অন্যতম প্রথম ব্যক্তি যিনি এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন। তাঁর প্রিয় একটি জায়গা ছিলো এটি। এখানকার মানুষদের উন্নয়ন নিয়ে তিনি কাজ করেছেন।



পৌনে একটার দিকে আমরা খুমজুং গ্রামে এলাম। এই গ্রামটির উচ্চতা ১২,৪০০ ফুট। বেউল লজে আমরা মাসালা চা পান করলাম। খাবারের অর্ডার দিয়ে খুমজুং থেকে খুনদে এলাম। ১২,৬০০ ফুট উঁচু এই গ্রাম। এই গ্রামটিই লাকপা চিরি শেরপার গ্রাম। তিনি আমাদের বিএমটিসির সাথে দু’টি পর্বতারোহণ অভিযানে অংশ নেন। তিনি একাধিকবার মাউন্ট এভারেস্ট সামিট করেছেন। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সময় তিনি এভারেস্ট অভিযানে বেসক্যাম্পে ছিলেন। সেখানেই তিনি প্রাণঘাতি অ্যাভাল্যাঞ্চের কবলে পরে মৃত্যুবরণ করেন। এই সময় বেসক্যাম্পে আঠারো জন শেরপা ও পর্বতারোহী প্রাণ হারান।    

বেউল লজে দুপুরের খাবার খেলাম। খাবার শেষে খুমজুং গ্রামটি ঘুরে দেখতে বের হলাম। হিলারী এই গ্রামের মানুষদের শিক্ষার আলো জ্বালানোর উদ্দেশ্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এখন সেই স্কুলটি কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। হিলারীর নামে স্কুলের নামকরণ করা হয়েছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুল মাঠে খেলা করছে। আর একদল ছাত্রছাত্রী স্কুলের চারপাশ পরিষ্কার  করছে। একজন শিক্ষকের সাথে আমাদের কথা হলো। তিনি বাংলা জানেন। তার বাড়ি দার্জিলিং-এ ছিলো। স্কুলের সামনে একটি হিলারীর সোনালী রঙের ভাস্কর্য আছে। গ্রামের মানুষজনও হিলারীকে রেখেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। গ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।



বিকেল চারটের সময় আমরা নামচে বাজারের ফেরার পথ ধরলাম। আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে। দেখতে দেখতে চারপাশ মেঘে অন্ধকার হয়ে গেলো। একে হোয়াইট আউট বলে। হোয়াইট আউট হলে চারপাশের কিছু দেখা যায় না। ১৫/২০ ফুট দূরের একজন আর একজনকে দেখা যাচ্ছে না। শীতও আক্কেল জ্ঞানহীন ভাবে হুট করে নেমে এসেছে। শীতের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সন্ধ্যার মধ্যে নামচে বাজারের লজে চলে এলাম। ডাইনিং-এ বসে জিঞ্জার চা আর রুমহিটারে শরীর গরম করে ওনো খেলতে বসলাম। খেলার সময় শামীম ভাইর পাশে বসলেই হলো। সব কার্ড দেখে ফেলেন। খেলতে খেলতে রাতের খাবারের সময় হয়ে গেলো। টেবিলে খাবার চলে এলো। এখানকার রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করে নারীরা। খাবার পরিবেশনও করে তারা।



সকাল নয়টার সময় আমরা নামচে বাজার থেকে মেনদের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। বাজারের ভেতর দিয়ে আস্তে আস্তে চলে এলাম হেলিপ্যাডের কাছে। বাজারের উপরে হেলিপ্যাড। এখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম। আজ তেমন খাড়া চড়াই বা কঠিন পথ নাই। আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পথ। বার্জ, রটড্রেন্ড্রন ও পাইন বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলছি। উঁচু উঁচু গাছের ফাঁক দিয়ে সুর্যের আলো শিল্পকর্ম করছে। আলো ছায়ার খেলার ছলে হাঁটছি আজ। ছবিও তুলছি। এখন আবহাওয়া ভালো। রোদও আছে। হাঁটতে হাঁটতে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেলো। রাস্তার পাশে একটি ছোট রেস্টুরেন্ট দেখে খেতে বসলাম। খাবার তৈরী হচ্ছে। আমরা বসে বসে আড্ডা দিতে শুরু করলাম। আজ রান্না ঘরে মুহিত ভাই আর ছায়াবিথী আপু। রান্না শেষে আমরা খেতে বসলাম। মুহিত ভাই ডিম ভাজি করেছেন আর ছায়াবিথী আপু ডাল রান্না করেছেন। আর আমরা খাবার ধ্বংসের অপেক্ষায় দাঁতে শান দিচ্ছি। ঘুম থেকে উঠে সাতটার মধ্যে ব্যাগ নিয়ে আমরা ডাইনিং-এ চলে এলাম। খাবার শেষে আমরা মাসালা চা পান করলাম। এমন সময় একদল অস্ট্রেলিয়ানদের সাথে আড্ডা হলো। তারা এভারেস্ট বেসক্যাম্প ঘুরে এসেছে। নারী পুরুষ তরুণ ও বৃদ্ধের ১৫/১৬ জনের একটি দল। তাদের নেপালে এটাই প্রথম সফর। আজ তারা হেলিকপ্টারে করে খুম্বু রিজন উপর থেকে দেখবে।

আলোকচিত্র: এম এ মুহিত




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ আগস্ট ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়