ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

প্রকৃতির লীলাখেলা দেখতে পানিহাটা-তারানি

সিয়াম সারোয়ার জামিল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রকৃতির লীলাখেলা দেখতে পানিহাটা-তারানি

সিয়াম সারোয়ার জামিল: নদী, পাহাড়, বন, ঝরনা- এই চারে অপরূপা পানিহাটা। কিন্তু সৌন্দর্য্যের ভাগটা শুধু পানিহাটা নিতে পারেনি। এর একটা অংশে ভাগ বসিয়েছে তারানি গ্রামের পাহাড়। অবশ্য পানিহাটা নামেই পরিচিতরা জানেন। তাই দর্শনার্থীদের জন্য পানিহাটা-তারানি দুটোই উপভোগ্য।

ভোর তখন সাতটা। জেলা শহর থেকে বাইকে চেপে বসলাম। ঘুরতে গেলে এই একটা বাহনেই আমি শান্তি পাই। তাতে রফিক আর আমি। গন্তব্য মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী স্বর্গ পানিহাটা তারানি। পথে নাস্তা বিরতি দিয়ে টানা ২৫ কিলোমিটার বাইক ছোটালো ও।

সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার রামচন্দ্রকুড়ায় যখন পৌঁছালাম তখন আটটা।  চোখে পড়লো ঘন সবুজ শ্যামল বন, খরস্রোতা পাহাড়ি ভোগাই নদী। ইচ্ছে করলো প্রকৃতির নিখুঁত ভালোবাসায় হারিয়ে যেতে। এগিয়ে গেলাম পানিহাটা পাদ্রি মিশনের পশ্চিম দিকে। উঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে তাকালাম উত্তর দিকে। আবছা আবরণের চাদরে জড়িয়ে আছে কুয়াশার মতো মেঘ। দূরের টিলাগুলো কেবলই লুকোচুরি খেলে এরই আড়ালে।



ছোট ছোট পাহাড়গুলো ফাঁকি দিয়ে পশ্চিমে চলে গেছে পাহাড়ি নদী ভোগাই। একপাশে তার কাশবন আর অপর পাশে সবুজে জড়ানো পাহাড়। নদীর টলটলে স্বচ্ছ পানির নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে অসংখ্য নুড়ি পাথর।

সামনের একশ গজ দূরে উত্তরে ভারত অংশে পিঁচঢালা আকাবাঁকা রাস্তা পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাহাড়ের বুকচিরে চলে গেছে। আর মাঝে মধ্যেই হুশহাশ করে ছুটে চলছে মালবাহী ট্রাক। চারপাশে অসংখ্য পাহাড়। এর কয়েকটির গা ঘেঁষে ভোগাই নদীতে এসে মিশেছে একটি ঝরনা। 

তার পাশেই পানিহাটা পাদ্রি মিশন। সেখানেই গড়ে উঠেছে শিশু-কিশোরদের কোলাহল। এগিয়ে গিয়ে কথা হলো স্থানীয় গারো সম্প্রদায়ের বাচ্চাদের সঙ্গে। এতো অমায়িক আর সরল, আমি মুগ্ধ। ভোগাই নদীর পাশেই মেঠোপথের গা ঘেঁষে এক দুর্দান্ত সবুজ গালিচা। প্রশস্ত সবুজ মাঠে বিকেল হলেই শিশুরা মেতে ওঠে খেলায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের কোলাহল। দুপুর গড়াতেই তাড়া দিলো রফিক। ফের ছোটালাম বাইক। ছুটতে ছুটতেই দেখছিলাম প্রকৃতির লীলাখেলা।



যেভাবে যাবেন: ঢাকার মহাখালী থেকে বিলাস পরিবহনের বাসে নালিতাবাড়ী যাওয়া যায়। সময় লাগে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। পরিবহনভেদে ভাড়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।  শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকা রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত এই স্থান। নালিতাবাড়ী শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা মোড় হয়ে সোজা উত্তরে প্রথমে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের কাছাকাছি গিয়ে পূর্ব দিকটায় মোড় নিয়ে ভোগাই ব্রিজ পাড়ি দিতে হয়। এরপর সোজা পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার গেলে চায়না মোড়। সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার গেলেই পানিহাটা-তারানির মূল পয়েন্ট। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিকশা, সিএনজি অটোরিশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায় নালিতাবাড়ী শহর থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের ব্যবধানে এবং অল্প খরচের মধ্যেই।  মোটরসাইকেল ভাড়া আসা-যাওয়ায় প্রায় ২০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন: নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা আছে।



সতর্কতা
১) অবশ্যই জুতো পরবেন। পোশাকের বিষয়ে সচেতন থাকবেন। 

২) কোনো অপচনশীল বর্জ্য ফেলে আসবে না।

৩) যথেষ্ট পানি নিয়ে যাবেন সঙ্গে। সবসময় পানি সহজলভ্য না।

৪) সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করবেন না।

৫) স্থানীয় গারো আদিবাসীরা আপনার আপনজন। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। তারা খুবই বিনয়ী ও অতিথিপরায়ণ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়