ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মেঘের দেশে ক্লান্তি শেষে: শেষ পর্ব

আঁখি সিদ্দিকা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেঘের দেশে ক্লান্তি শেষে: শেষ পর্ব

মাওস্‌মাই কেভ যেমন চেরাপুঞ্জির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, তেমনি শিলংয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এলিফ্যান্ট ফলস। এই ফলস না দেখলে শিলং ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।  পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরনা নেমে আসছে; পাহাড়ের ধাপে ধাপে তিনটি জায়গা থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ফার্স্ট ফলস, সেকেন্ড ফলস, থার্ড ফলস।  অদ্ভুত সুন্দর! থার্ড ফলস পর্যন্ত পৌঁছতে ৫০টি সিঁড়ি ভাঙতে হয়, তবে ভাঙাটা সার্থক।  একেবারে নিচে দাঁড়িয়ে এলিফ্যান্ট ফলসের যে সৌন্দর্য্য, নিজের চোখে না দেখলে জীবনে কিছু অদেখা থেকে যায়। ঝরনা ঝরঝরিয়ে জল ছড়িয়ে নেচে নেচে চলে।  এলিফ্যান্ট ফলস-এর কাছে স্থানীয় পোশাক পরে ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে।  আরো আছে চা পানের ব্যবস্থা। চাইলে এখান থেকে আপনি সুভেনির কিনতে পারবেন।

শিলং শহর থেকে ১০ কিমি দূরে রোডোড্রন আর ঘন পাইনের বনাবৃত শিলং পিক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০০ ফিট উপরে রহস্যঘেরা রূপকথার দেশ।  শীতল।  কুয়াশাচ্ছন্ন।  হাসানের বাইনোকুলার কাড়াকাড়ি করে ছিনিয়ে এনে যা দেখছি তা ওখানে গিয়েই কেবল দেখতে হবে।  লিখে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব।  আরেকটু না বলে পারছি না, শিলং পিক-এর পাশেই খাসিয়াদের পোশাক পরে ছবি তোলার বিরাট আয়োজন রয়েছে।  পোশাকগুলো আকর্ষণীয় এবং ভীষণ রঙিন।  ওপরে কা-জিমপিন (ব্লাউজ), নিচে কা–জৈনসেম (লুঙ্গি), বুকের ওপর আড়াআড়ি আরেকটা লুঙির পাড়।  সেই আড়াআড়ি পারে অনায়াসে বাচ্চা ঝুলিয়ে রাখা যায়।  আর ঠোঁট রাঙানো শিলং-এর বিখ্যাত পান মেয়েদের আরেকটি অলঙ্কার।

হায়দারী পার্ক নয়, রোমান্টিক জায়গা।  এখানে আসার পর বুঝলাম কেন অমিত লাবণ‌্য এখান থেকে উদগত হলো।  সবাই যেন এলিয়ে পড়েছিলাম আমরা।  দূরে দেখতে পাচ্ছিলাম ছবির মতো নারী ও পুরুষের আলিঙ্গন আর জলের সাথে মাখামাখি।  কথিত আছে এটি নাকি এক বোন হারিয়ে যাওয়ায় অন্য বোনের কান্নার জলে সৃষ্ট লেক।  লেকের একদিকে বাঁধ দিয়ে এই জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।  বিরাট বড় লেকের মাঝে একটা পাহাড়ও আছে।  নাম লাংপেংডং।  লেকের পাশ ঘেঁষে আবারও বাগান। নেহেরু গার্ডেন।  লেক রিসোর্ট।  এখান থেকে যেন কেউ উঠতে চাইছিলাম না।

 

 

এখানে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে- স্পীডবোটে করে পুরো লেক ঘোরানো হয়।  এখানে একটা ছোট খাবারের দোকান আছে, সেখানে চা, কফি বা সামান্য স্ন্যাক্স খেয়ে নিতে পারেন।  দাম একেবারেই গলাকাটা মনে হব্নো।  

রামকৃষ্ণ মিশনের মিউজিয়ামের একটা বড় ভার্সান হলো স্টেট মিউজিয়াম।  ভেতরে সবকিছুরই ছবি তোলা যেতে পারে।  গারো, খাসী, জয়ন্তিয়া জাতীর মানুষের জীবনযাত্রার মডেল, অস্ত্রশস্ত্র, গয়না, রান্নার উপকরণ, পোশাক-পরিচ্ছদের একটা সংগ্রহশালা হলো এই স্টেট মিউজিয়াম । 

হোটেল থেকে বেরোনোর সময় পেলাম সেই জিনিস- মেঘালয় যার জন্য বিখ্যাত।  বৃষ্টি।  আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু হলো এবং টানা এক ঘণ্টা চলল।  পাহাড়ে বৃষ্টির একটা সুবিধে হচ্ছে এখানে জল দাঁড়ায় না, কিছুক্ষণের মধ্যেই সব জল সরে গেল।  আমরা হোটেলে ফিরলাম।  এটা আমাদের শিলং-এর শেষ রাত্রি। পরদিন সকালেই আমরা গুয়াহাটী চলে যাব।  এজন্য সন্ধ্যেবেলা বেরিয়ে কিছু কেনাকাটা করে নেয়া হলো।  শিলং থেকে কেনার জন্য সবচেয়ে ভালো জিনিস হলো এখানকার বেত ও বাঁশের কাজের জিনিসপত্র আর ছাতা।  পুলিশবাজারে এসব জিনিসের বেশ কিছু দোকান আছে।  এরা ট্যুরিস্টদের জন্য দাম সেই অর্থে কিছু বাড়িয়ে রাখে না।

এই টু‌‌রের সারসংক্ষেপ জানিয়ে রাখি।

শিলং যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে বর্ষার শুরু।  এ সময় সেখানে প্রকৃতি সবচেয়ে বেশি রৌদ্রজ্জ্বল থাকে।

 

 

শিলং ভ্রমণে প্রত্যেকেই সঙ্গে একটা ছাতা নিয়ে যাবেন।

শিলং-এ অন্তত তিন দিন থাকবেন। চেরাপুঞ্জি, নারটিয়াং আর লোকাল সাইট সিয়িংয়ের জন্য।  যদি হাতে দু'দিন থাকে তাহলে নারটিয়াং বাদ দিতে পারেন।

চেরাপুঞ্জি খুব সুন্দর! তবে এখানে থাকার কোন মানে হয় না।  চেরাপুঞ্জি ঘুরতে মোটামুটি ৫-৬ ঘণ্টা লাগে।  এখানে গেলে ‘মাওস্‌মাই কেভ’ অবশ‌্যই দেখবেন।

শিলংয়ের লোকাল সাইট সিয়িংয়ের মধ্যে এলিফ্যান্ট ফলস ও বড়াপানি অবশ‌্যই দেখতে ভুলবেন না।  শরীর অনুমতি দিলে এলিফ্যান্ট ফলসের তিনটি ফলস দেখা উচিৎ ।

শিলংয়ের প্রাণকেন্দ্র পুলিশবাজার।  এখানে সবই পাওয়া যায়।  এখানে অনেক হোটেলও আছে।  ঢাকা থেকে হোটেল বুক করে যাওয়ার সুযোগ আছে।

শিলংয়ের খুব কাছে আসাম হওয়া সত্ত্বেও এখানে চায়ের দাম খুব বেশি।  প্রতি কাপ ১০-১৫ রুপি।  চাপ্রেমীদের টি-ব্যাগ বা নিজস্ব চায়ের সরঞ্জাম বহন করাই শ্রেয়।

শিলং গেলে সন্ধ‌্যার পর রাস্তায় বের না হওয়াই ভালো। যেখানেই থাকুন না কেন সন্ধ‌্যার আগে হোটেলে ফিরে আসার চেষ্টা করবেন। 

গুয়াহাটীতে কামাখ্যা মন্দির দেখার মতো জায়গা।  বালাজী মন্দিরও দেখতে পারেন।

 

 

কম খরচে ৪-৫ দিনের বেড়ানোর পরিকল্পনা করলে শিলংয়ের মতো জায়গা কমই আছে।  মাথাপিছু মাত্র ৯০০০ রুপিতে আমাদের টুর হয়ে গেছে।

‘মেঘ পিয়ানোর ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা

মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যকুল হলে তিস্তা’

এবার ঘরে ফেরার পালা! ফেরার পথে আঁচল ভরে মেঘ নিয়ে ফিরছি কিন্তু মনটা কেমন ভিজে যাচ্ছে! শিলংয়ের শেষ গেইটে লেখা ছিল: কুবলাই, কুবলাই খি লীত বাম।  মানে বিদায়, বিদায় চলে যাও।

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়