ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গাজা নিয়ে করপোরেট মিডিয়ার উদাসীনতা!

নূরুল মঈন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ৩০ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গাজা নিয়ে করপোরেট মিডিয়ার উদাসীনতা!

মোহাম্মদ নূরুল মঈন

নূরুল মঈন, লন্ডন থেকে : ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এক সকালে ইসরায়েল গাজা আক্রমণ করে। সময়টা ছিল বেলা ১১টা ২৫ মিনিট, অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গাজাতে তখন মর্নিং শিফটের স্কুল শেষ এবং ডে শিফট শুরুর আগের কয়েক মিনিট। দুই শিফটের ছাত্রছাত্রীরাই এ সময়ে রাস্তায় থাকে।

সময়টি বেছে নেওয়ার কারণ হলো সর্বোচ্চসংখ্যক ফিলিস্তিনি যেন মারা যায় তা নিশ্চিত করা। এ তথ্য ও বক্তব্য প্রফেসর নোয়াম চামস্কির। ইসরায়েলের আক্রমণের অভিযোগ ছিল সীমান্তে গোপন ট্যানেল পাওয়া গেছে। প্রফেসর চামস্কির মতে, গোপন ট্যানেল পাওয়া গেলে যেখানে পাওয়া গেছে সেখানেই তো আক্রমণের দরকার ছিল।

এখনো একই অভিযোগে গাজা আক্রমণ অব্যহত আছে। যেকোনো যুদ্ধে মাটির নিচে টানেল করা অতি স্বাভাবিক বিষয়। যাদের বিমান নেই, ট্যাংক নেই তারা ট্যানেলের ভেতর আত্মরক্ষা করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।

কিন্তু পৃথিবীর সব বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম ট্যানেল পাওয়াকে রীতিমতো উৎসবে পরিণত করেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতে, ইসরাইলের কথা সত্য হয়েছে, তার পরও পৃথিবীর মানুষ ইসরাইলের সমালোচনা করবে। কিন্তু করপোরেট মিডিয়া কী বলে আর বাস্তবতা কী? এ-সংক্রান্ত খুব চমৎকার একটি ক্রনোলজি আছে স্টপ ওয়ার কোয়ালিশনের ওয়েবসাইটে।

তারা বলেছে, ‘করপোরেট মিডিয়া যদি যুদ্ধ শুরু করার জন্য ফিলিস্তিনিদের দায়ী করে, তবে যুদ্ধ শেষ না করার জন্যও তাদেরকে দায়ী করবে। কিন্তু বর্তমান ভায়োলেন্স বন্ধ হওয়া মানে তো এই নয় যে, যুদ্ধ শেষ বা ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ শেষ হয়ে গেল।

ইলেকট্রনিক মিডিয়া ইনতিফাদার আলি আবুনিমাহর বক্তব্য, ‘দুই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্রুপ হামাস ও ইসলামিক জিহাদ ১০ বছর মেয়াদি অস্ত্রবিরতি এবং শান্তিচুক্তির জন্য দশ শর্তযুক্ত একটি প্রস্তাব দিয়েছে। যার মধ্যে আছে সব ধরনের সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ, গাজা অবরোধ অবসান এবং গাজাতে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর তৈরি করা।’

আবুনিমাহ এই প্রস্তাবের পেছনের কারণ উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘এটা হলো অবরোধ বোকা। গাজাতে যে-কারো সঙ্গে কথা বললে এ কথাই বলবেন তারা। অবরোধ অর্থ হলো লিভিং ডেথ, ধীরে ধীরে গাজা থেকে জীবনকে পিষে মেরে ফেলা। এটা তুলে নেওয়া দরকার। শুধু এ কারণেই হামাস ইসরায়েলের প্রস্তাবে রাজি হয়নি, যদিও মিশরও একনায়ক মিত্রের মাধ্যমে সবার গ্রহণযোগ্য অস্ত্রবিরতির কথা প্রচার করছে। হামাস বলেছে তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি, তারা মিডিয়ার মাধ্যমে এ ধরনে চুক্তির কথা শুনেছেন।’

জেরুজালেম বেইজড সাংবাদিক মিয়া গুয়ারনিয়ারই মতে, ‘স্থিতি অবস্থায় বা অস্ত্রবিরতিতে ফিরে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে ইসরায়েল মাঝেমধ্যেই আক্রমণ করে গাজা ও পশ্চিমতীরের সাধারণ মানুষ মারবে। অথচ আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং শক্তি এতে তেমন কোনো মাথা ঘামাবে না।’

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেন হোয়াইটের মন্তব্য : গাজাতে আট দিনের ‘অপারেশন পিলার লাইট’ শেষ হয়েছে তিন মাস হলো। নভেম্বরের শেষ দিক থেকে প্রতিদিন গড়ে অন্তত একটা আক্রমণ হয়েছে গাজাতে। এগুলো হলো সিমান্তে মোতায়েন সৈন্যদের গুলি করা, গাজা কোস্টলাইনে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের ওপর গুলি করা এবং ইসরায়েলি সেনাবহিনীর তাৎক্ষণিক আক্রমণ।

এ ধরনের আক্রমণগুলো করপোরেট মিডিয়া এড়িয়ে গেছে, এতে মনে হয়, তারা ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর বিষয়ে অতি উদাসীন। সর্বশেষ কনফ্লিকটের বিষয়ে ইসরায়েল বেইজড সাংবাদিক জনাথন কুকের অবজারবেশন হলো, ‘এটা খুবই হতাশাজনক, করপোরেট মিডিয়া ইসরায়েলের শান্তিপ্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে। এখানে তিনি কিছু লাইন গিলে ফেলেছেন। হামাস যা প্রত্যাখ্যান করেছে তা হলো ইউএস-ইসরাইলের ডিকটেশনে সাইন করতে। কারণ তারা মনে করে, এ চুক্তি গাজার জনগণের অবরোধ তুলে নেওয়ার অধিকার কেড়ে নেবে এবং বাকি দুনিয়া থেকে গাজাকে বিচ্ছিন্ন করবে।’

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৪/সন্তোষ/কমল কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়