ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আয়ারল্যান্ড যাওয়ার আগে দিল্লি দেখা

উদয় হাকিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২১, ১০ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আয়ারল্যান্ড যাওয়ার আগে দিল্লি দেখা

বড় মসজিদের সামনে রাতের বেলা লেখক ও ডাক্তার ইকবাল

উদয় হাকিম, ডাবলিন (আয়ারল্যান্ড) থেকে ফিরে : সত্যি ভাগ্য লাগে! মাত্র দুই ঘণ্টায় আয়ারল্যান্ডের ভিসা। কল্পনা করা যাচ্ছিল না। ভিসা পাওয়ার আগে মনে হচ্ছিল কেন পাব না, নিশ্চয় পাব। পাওয়ার পর মনে হচ্ছিল কেন পেলাম? এত সহজে? ভিসা পাওয়ার আনন্দে শরীরটা হালকা লাগছিল!

বিকেল বেলা। বেরিয়ে পড়লাম ডাক্তার ইকবাল কবিরের সঙ্গে। কোথায় যাচ্ছিলাম? ডাক্তার বললেন, প্রথমে বড় বাজার। এরপর বড় মসজিদ। সম্পূর্ণ দুটি বিপরীতমুখী জায়গা। ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা বাজার। আর উৎকৃষ্ট মসজিদ। কিন্তু কোথায় না গেলেও চলে না; আর কোথায় না গেলে চলে না?

সন্ধ্যার কিছু আগ মুহূর্ত। ওই সময়টায় দিল্লিতে যানবাহন পাওয়া মুশকিল। উবার কল করেছিলাম। বেঁচারা বোধহয় নতুন ছিল এ পেশায়। লা মেরিডিয়ান হোটেল চেনে না। যত ভাবেই বোঝাচ্ছিলাম- বোঝে না সে বোঝে না। হোটেলের পাশের রাউন্ড অ্যাবাইটে (গোল চক্কর) খালি ঘুরছিল। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে ক্যানসেল করে দিলাম। পরে অবশ্য ওই আধা ঘণ্টার টাকা চেয়েছিল উবার।

শুরু করলাম হাঁটা। পথে অটো পেলেও সেগুলোর দাম চাচ্ছিল  অতিরিক্ত চড়া। কি আর করা। হাঁটছিলাম। সূর্য ডুবে গিয়েছিল। ঠিক তখনই একটা জমিদারবাড়ির মতো পুরনো রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। খিদেও লেগেছিল। রেস্টুরেন্টটি একটি পুরনো পার্কের একাংশ। গাছ গাছালির ভিড়ে অন্ধকার। আলো জ্বলছিল। কপাল খারাপ। সে রাতে ওখানে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হবার কথা। তাই বাইরের গেস্ট অ্যালাউ না। হাঁটছিলাম। আশপাশে কোথাও খাবারের দোকান ছিল না। রাস্তায় গিয়ে একটা অটো নিলাম। চলে গেলাম বড় বাজারে। জায়গাটার নাম এখন মনে নেই। কালিবাজার টাজার এরকম কিছু হবে। ডাক্তার কিছু কেনাকাটা করলেন। তারপর আরেকটা অটো নিয়ে চললাম বড় মসজিদের দিকে।

বড় মসজিদ মানে কি? ডাক্তার বললেন, দিল্লি জামে মসজিদকে সবাই বড় মসজিদ বলে। সেখানে একসঙ্গে ২৫ হাজার ব্যক্তি নামাজ পড়তে পারেন। সম্রাট শাহজাহান সেটি তৈরি করেছেন। ১৬৪৪ থেকে ১৬৫৬, মানে ১২ বছর লেগেছিল এটি তৈরি করতে। খরচ হয়েছিল ১০ লাখ রুপি। কাজ করেছেন ৫ হাজার শ্রমিক। একে বলা হয় মসজিদ ই জাহান নুমা, মানে জগতের প্রতিবিম্ব। আগ্রার তাজমহল এবং দিল্লির লাল কেল্লার নির্মাণ কাজের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। কারণ এসবই সম্রাট শাহজাহানের তৈরি। আর তাই তিনটি স্থাপনাই কাছাকাছি অবস্থানে।

মসজিদটি সম্পর্কে জানতে উইকিপিডিয়ায় ঢুকেছিলাম। তেমন বেশি কিছু নেই সেখানে। বাংলা ভার্সনে গিয়ে জানলাম একটা নতুন শব্দ। ‘জামে অর্থ শুক্রবার’। সত্যিই যদি তাই হয়, তাহলে আমরা যত জামে মসজিদ দেখি সব কি শুক্রবারের মসজিদ? নাকি জুমআর নামাজ যেখানে পড়ানো হয় সেগুলোকে বলে জামে মসজিদ। আমিতো জানতাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেখানে জামায়াতের সঙ্গে পড়ানো হয় সেটাই জামে মসজিদ।

ঘণ্টাখানেক লাগল মসজিদের কাছে যেতে। এত জ্যাম, এত মানুষ। সেদিন কি দুনিয়ার সব মানুষ ওখানে গিয়েছিল? বাংলাদেশ আর ভারতের মতো এত গিঁজগিঁজ করা মানুষ পৃথিবীর আর কোথাও বোধহয় নেই। মানুষের যন্ত্রণায় হাঁটার জায়গা নেই। আগে জানলে ও পথ মাড়াতাম না। মসজিদের প্রবেশের এক কিলো আগে থেকেই গাড়ি বন্ধ। হেঁটে যেতে হচ্ছিল।

মসজিদের মূল গেটের কাছাকাছি গিয়ে ডাক্তার ইকবাল বলছিলেন, ভেতরে যাব কি না? বললাম আমার আগ্রহ নেই। প্রার্থনালয় আমাকে টানে না কখনোই। বরং এক ধরনের ভয় কাজ করে।

যাই হোক, ডাক্তার আসলে বড় মসজিদে গিয়েছিলেন কি কারণে সেটি শুনলে অবাক হবেন। ওখানে করিমস নামে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। যার বিরিয়ানি এবং কাবাব খুব বিখ্যাত। মসজিদে না গিয়ে বাম দিকের একটা ছোট গলিতে তিনি ঢুকলেন। মানুষের ভিড়ে পা ফেলাই মুশকিল হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরপরই আমরা আলাদা হয়ে যাচ্ছিলাম। ডাক্তারকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাৎ আবার বা দিকে মোড় নিয়ে তিনি হারিয়ে গেলেন। কি করব? দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে আমাকে খুঁজে বের করে নিয়ে গেলেন।

বিয়ের হল ঘরের সামনে সেলফি

 

অপরিসর ঘিঞ্চি একটা জায়গায় ওই করিমস রেস্টুরেন্ট। আমাদের পুরান ঢাকার মতো। তারই মধ্যে করিমস এর তিনটে রেস্টুরেন্ট। খাবারের মেন্যু অনুযায়ী ভাগ করা। একটা শুধু দলবদ্ধ অনুষ্ঠানের জন্য। বাকি দুটো কাবাব বিরিয়ানির। এর মধ্যে একটা ছিল পুরো ভরা, দাঁড়ানোরও জায়গা ছিল না। আরেকটাতে গিয়ে ঢুকলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সিট পেলাম। দেখলাম বিশেষ করে পাকিস্তানি লোকে ভরা।

ওই কাবাব বিরিয়ানির প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ নেই। ডাক্তারের প্রিয় খাবার করিমস এর বিরিয়ানি-কাবাব অর্ডার হলো। আমি মাছের কোনো তরকারি নিতে চাইছিলাম। কিন্তু মাছ নেই। ডাক্তার যতবার দিল্লি যান, ততবারই ওখানে গিয়ে খান। কাউকে পেলে নিয়ে নিয়ে যান, না হলে একা যান। করিমস এর প্রতি তার এমনই টান!

খাবার মোটামুটি ভালো। তবে আহামরি কিছু নেই তাতে। এত কষ্ট করে ভিড় ঠেলে ওখানে যাওয়ার কোনো মানে খুঁজে পাইনি।

দুনিয়াতে কিছু মানুষ আছে খাওয়ার পাগল। এরা খাওয়ার জন্য বাঁচে। আবার কিছু মানুষ বাঁচার জন্য খায়। এ কারণে খাওয়ার ফলাফলও সবাই হাতে নাতে পায়।

অন্য কেউ হলে কেনাকাটা করতে চাইতো। ডাক্তার ইকবাল জানতে চাইলেন কিছু কিনব কি না। বললাম, না। তাড়াতাড়ি এ এলাকা থেকে বের হই চলেন। একটা অটো নিয়ে চলে গেলাম হোটেলে।

মেইন গেটে না গিয়ে অন্য দরজা দিয়ে ঢুকলাম হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে। রাস্তা ভুল করলাম কি না ভাবছিলাম। এমন সময় চোখে পড়ল আলো ঝলমলে বিশাল একটা হলঘর। বিয়ের অনুষ্ঠান। মনে পড়ে গেল সুনীলের সেই কবিতার কথা। ভেতরে ফর্সা কঙ্কন পরা রমণীরা..। অসংখ্য সুন্দরী রমণীতে পুরো হলঘর ভরা। বড় লোকের বিয়ে নিশ্চয়! বয় বেয়ারাগুলোও বেশ সাহেবী পোশাক পরে সার্ভ করছিল। ডাক্তার মুগ্ধ হয়ে সব দেখছিলেন। আমন্ত্রিত ছিলাম না। তাই বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হতো না। বেরোনোর পথ খুঁজছিলাম। এর মধ্যে একটা বিশাল ঝাড়বাতির সামনে ডাক্তার ইকবাল দাঁড়িয়ে গেলেন, আসেন ছবি তুলি। সেলফি..। 

রুমে গিয়ে ইমেইল চেক করলাম। দেখলাম এয়ার টিকিট পাঠিয়েছেন খাদেমুল সাহেব। ভোর ৬ টায় ফ্লাইট। দু-ঘণ্টা  আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। ডাক্তার ইকবাল হোটেল ডেস্ক থেকে একটা গাড়ি কনফার্ম করে দিলেন এয়ারপোর্ট ড্রপের জন্য। দুপুরের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে পৌঁছানোর কথা।

 







রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৯/উদয় হাকিম/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়