ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভোট বেশি পেয়েও হারলেন হিলারি

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ১০ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভোট বেশি পেয়েও হারলেন হিলারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জাতীয় পর্যায়ে পপুলার ভোট বেশি পেয়েও হারলেন হিলারি ক্লিনটন। দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেসব ত্রুটি আছে বলে মতান্তরে অভিযোগ রয়েছে, এটি তার একটি।

গৃহীত মোট ভোটের মধ্যে হিলারি ক্লিনটন পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৮ লাখ ১৪ হাজার ১৮টি ভোট, যা গৃহীত ভোটের ৪৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৬৭৮টি ভোট, যা গৃহীত মোট ভোটের ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ২ লাখ ২ হাজার ৩৭৬টি ভোট বেশি পেয়েছেন। কিন্তু এর কোনো কার্যকারিতা নেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।

এরইমধ্যে কম বেশি সবাই জানেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে। তারপরও বলছি, ধরুন, নিউ ইয়র্কে পপুলার ভোটে জিতেছেন হিলারি। তার মানে এ রাজ্যে সব ভোট হিলারি পেয়েছেন, বিষয়টি তা নয়। এখানে হিলারি পেয়েছেন ৫৮ দশমিক শতাংশ ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট। অন্যান্যরা পেয়েছেন ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। সাধারণ ভোটারদের এই ভোটকে বলা হয় পপুলার ভোট। পপুলার ভোটে হিলারি বিজয়ী হয়েছেন।

 

নিউ ইয়র্কে হিলারি জয়ী। কিন্তু পপুলার ভোটারদের পরে আছেন মধ্যবর্তী আরেক ধরনের ভোটার, যাদের বলা হয় ইলেক্টরাল ভোটার। যে রাজ্যে যে প্রার্থী জয়ী হবেন, ওই রাজ্যের সব ইলেক্টরাল ভোট পাবেন সেই প্রার্থী। অর্থাৎ নিউ ইয়র্কে হিলারি যদি ১ ভোট পেয়েও জিততেন, তাহলে তিনিই পেতেন সব ইলেক্টরাল ভোট। এ হিসাবে নিউ ইয়র্কের ২৯টি ইলেক্টরাল ভোট পেয়েছেন হিলারি কিন্তু প্রায় ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েও একটিও ইলেক্টরাল ভোট পাননি ট্রাম্প। শুধু নেব্রাস্কা ও  মেইন রাজ্য বাদে বাকি সব রাজ্যে একই নিয়ম- বিজয়ী প্রার্থী সব ইলেক্টরাল ভোট পাবেন। এ নিয়মে পপুলার ভোটের কোনো দামই থাকে না শেষ পর্যন্ত।

ইলেক্টরাল ভোটের হিসাবে হিলারি পেয়েছেন ২২৮টি, আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৯টি। ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোট পেলেই তিনিই বিজয়ী প্রার্থী, এবার যেমন ট্রাম্প। কিন্তু যদি প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ইলেক্টরাল ভোট ভাগাভাগি হতো, তাহলে হয়তো হিলারিই হতেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের এটি একটি দুর্বলতা।

হিলারি ২২৮টি ইলেক্টরাল ভোট পেয়েছেন। জয়ের জন্য তার দরকার ছিল আর ৪২টি ভোট। কয়েকটি রাজ্যে হিলারি একেবারে জয়ের প্রান্তে এসে থেমে গেছেন। এমন রাজ্যের মধ্যে ফ্লোরিডা ও পেনসিলভানিয়া উল্লেখযোগ্য। ফ্লোরিডায় হিলারি ভোট পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ, আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ। বিজয়ী ট্রাম্প। এ রাজ্যে ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে ২৯টি, নিয়ম অনুযায়ী সবগুলো পেয়েছেন ট্রাম্প। আর পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশের বিপক্ষে হিলারি ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে হেরেছেন। এ রাজ্যে ইলেক্টরাল ভোট রয়েছে ২৯টি। ফ্লোরিডা ও পেনসিলভানিয়া মিলে ইলেক্টরাল ভোট হয় ৪৯টি, যা পেলেই প্রেসিডেন্ট হতেন হিলারি। খুব সামান্য ব্যবধানে এ দুই রাজ্যে হেরে যাওয়ায় নির্বাচনী ফলাফল হাতছাড়া হয়ে গেছে হিলারির।

হিলারি যদি ওহাইও (ইলেক্টরাল ভোট ১৮), নর্থ ক্যারোলাইন (ইলেক্টরাল ভোট ১৫) ও উইসকনসিনে (ইলেক্টরাল ভোট ১০) জিততেন তাহলে তিনিই হতেন প্রেসিডেন্ট। এ তিন রাজ্যে মোট ইলেক্টরাল ভোট ছিল ৪৩টি, যা হিলারির পিছিয়ে থাকা ৪২টির চেয়ে বেশি। এ তিন রাজ্যেও সামান্য ব্যবধানে হেরেছেন হিলারি। নির্বাচনের দুদিন আগেও এ তিন রাজ্যে জরিপে এগিয়ে ছিলেন হিলারি।

তাহলে হারলেন কেন হিলারি? রাশিয়া ও চীন চাইছিল তাই? অথবা উত্তর কোরিয়া দোয়া করেছিল তাই? এর কোনো কিছুই না। হিলারির হার আর ট্রাম্পের জয় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ফলাফল। হিলারি নারীদের ভোট পেয়েছেন বেশি ৫৪ শতাংশ, যেখানে ট্রাম্প পেয়েছেন ৪২ শতাংশ। এই ব্যবধান খুব বেশি নয়। কারণ, এবারই যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের কাছে সুযোগ এসেছিল, একজন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার। কিন্তু ১০০ জনে মাত্র ৫৪ জন হিলারিকে ভোট দিলেন, প্রত্যাশা করা হচ্ছিল শতকরা ৬০ শতাংশ নারী হিলারিকে ভোট দেবেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, নারী প্রার্থী হওয়াটা হিলারির জন্য খুব বেশি উপকারী হয়নি। বরং ক্ষতি হয়েছে। কারণ, পুরুষরা একট্টা হয়ে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। পুরুষ ভোটের ৫৩ শতাংশ পেয়েছেন ট্রাম্প, হিলারি পেয়েছেন ৪১ শতাংশ।  হিলারি যতটা বেশি নারী ভোট পেয়েছেন, হিলারি ততটা বেশি পুরুষ ভোট পেয়েছেন।

এ ছাড়া এবার হিস্পানিক ভোটারদের ভোটও কম পেয়েছেন হিলারি। ২০১২ সালে ওবামা পেয়েছিলেন ৯৩ শতাংশ কৃষাঙ্গ ভোট। এবার হিলারি পেয়েছেন ৯২ শতাংশ ভোট। এ ছাড়া শ্বেতাঙ্গদের ভোটও এবার কম পেয়েছেন হিলারি। শ্বেতাঙ্গদের শাসন কায়েমের জন্য সাদা ভোটাররা যেভাবে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন, অন্যদের বেলায় তা দেখা যায়নি।

ছোট ছোট সমস্যা ও ভুলে হেরে গেলেন হিলারি। খালি থেকে গেল ইতিহাসের পাতা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট আর কে কবে হবেন, কবে পূরণ ইতিহাসের শূন্য পাতা, এর উত্তর সুদূর ভবিষ্যতে।
 

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ নভেম্বর ২০১৬/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়