ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ধূমপান ছাড়ার অনন্য সুযোগ এই লকডাউন

ডা. আহমাদ খাইরুল আবরার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ১০ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধূমপান ছাড়ার অনন্য সুযোগ এই লকডাউন

প্রতীকী ছবি

ধূমপানের মতো বদভ্যাস সবসময়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। করোনা মহামারির এই সময়ে ধূমপায়ীরা আরো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধূমপান ছাড়তে বলছে বারবার। সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে দেশটির ৩ লাখ মানুষ ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন এবং ২৪ লাখ মানুষ ধূমপানের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।

এর অন্যতম কারণ হতে পারে, ফুসফুস সুস্থ রাখা। তাছাড়া, সিগারেট কিনতে বারবার দোকানে গেলে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতেও ধূমপান ছাড়তে চাচ্ছেন অনেকে। অন্যদিকে, শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতেও এই সময়ে অনেকে ধূমপান ছেড়ে দিচ্ছেন বা কমিয়ে দিচ্ছেন।

ধূমপানের ফলে স্বভাবতই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়; হার্ট ও ফুসফুসের নানা জটিল অসুখ দেখা দেয়। ফলে ধূমপায়ীরা সহজেই করোনার শিকারে পরিণত হন। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে দুর্বল হার্ট ও ফুসফুসের কারণে তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। ইউরোপীয় চিকিৎসকরা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ধূমপানের ফলে ফুসফুসের সরাসরি কিছু বায়োকেমিক্যাল পরিবর্তন হয়, যা করোনায় আক্রান্ত হলে জটিলতা তৈরির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে পরিচালিত এক গবেষণায়ও এমনটা দেখা গেছে। ধূমপায়ীদের ভেন্টিলেটরও তুলনামূলক বেশি দরকার পড়েছে।

অন্যদিকে, আমাদের দেশে অনেকেই খোলা বিড়ি-সিগারেট কেনেন। দোকানির হাত থেকে নেওয়া সেসব বিড়ি-সিগারেটেও ভাইরাস লেগে থাকতে পারে। তাই সবদিক থেকেই ধূমপায়ীদের ঝুঁকি বেশি।যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে পরিচালিত গবেষণার সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ধূমপায়ীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। আদতে যথাযথ পর্যালোচনা (পিয়ার রিভিউ) ছাড়াই প্রকাশিত ওই গবেষণাটির বেশ কিছু ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গবেষণাটির নমুনার সংখ্যা খুবই স্বল্প। তাছাড়া সেখানে আইসিইউতে নেওয়া রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমন নানা কারণে গবেষণাটি প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এমন গবেষণা আমলে না নিয়ে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা অনুসারে ধূমপান ছেড়ে দেওয়াই নিরাপদ হবে।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ধূমপানের মতো আসক্তি ছাড়া অনেক কঠিন। ধূমপায়ীদের সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডার অন্যতম অনুষঙ্গ বিড়ি-সিগারেট। তাই, স্বাভাবিক সময়ে কেউ ধূমপান ছাড়তে চাইলেও ধূমপায়ী বন্ধুবান্ধবের প্ররোচনায় তা ছাড়া কঠিন। কিন্তু করোনার কারণে বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে এমন কোনো চাপ নেই। তাই কেউ চাইলে সহজেই ধূমপান ছাড়তে পারেন। অনেকেই বাড়িতে ধূমপান করতে পারেন না; করাটা উচিৎও নয়। ফলে সুযোগের অভাবেও অনেককে ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। তার ওপর এখন রমজান মাস, এই সময়ে এমনিতেই বহু লোক ধূমপান থেকে বিরত থাকেন। এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে বদভ্যাসটিকে চিরতরে বাদ দেওয়ার সুবর্ণ সময় এখনই।

এজন্য প্রথমেই কয়েকটি উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন: দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করলে ধূমপানের প্রতি চাহিদা কমে যায়। শাকসবজি এবং ফল খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। সিগারেটের গন্ধ পেলে আবার ধূমপানের ইচ্ছা জাগতে পারে। তাই ঘরবাড়ি ও নিজের জামাকাপড় পরিষ্কার করে ফেলুন। সবশেষে পরিবারের কাছে মানসিক সমর্থন ও সহায়তা চান।

লেখক : রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়