ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনাভাইরাস কি আমেরিকার ওপর অভিশাপ?

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৩০ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাস কি আমেরিকার ওপর অভিশাপ?

করোনাভাইরাস ছড়ানো নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগের তীর ছুটে আসছে চীনের দিকে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় দুলছে বিশ্ব। পক্ষে-বিপক্ষে উপস্থাপিত হচ্ছে ভুরি ভুরি যুক্তি-তর্ক। চীনের বিপক্ষে যারা বলছেন, তাদের অনেকের অভিমত, চীন কি কিছুই জানতো না? কীভাবে তাদের অগোচরে এমন ভয়ঙ্কর একটা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেল? আবার চীনের পক্ষে যারা বলছেন, তারাও ভাইরাসের জিনগত রূপান্তর, প্যাঙ্গোলিন নামক প্রাণী থেকে উদ্ভব ইত্যাদি যুক্তি দেখাচ্ছেন। তবে এই যুক্তি-তর্কের পাল্লা দিনে দিনে চীনের বিপক্ষবাদীদের যুক্তির বাটখারায় ভারি হচ্ছে। বিশ্ববাসীর অবিশ্বাস বাড়ছে। দাবি উঠছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত উৎস শনাক্তকরণের।

ভাইরাসের উৎস যাই হোক, বিষয়টি হয়তো সময়ের সঙ্গে প্রমাণ হয়ে যাবে। তবে যদি চীন এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী হয় তাহলে এটাও বলতে হয়- এটাই জীবানু অস্ত্রের প্রথম প্রয়োগ বা পরীক্ষা নয়। চলতি বিংশ এবং উনবিংশ শতাব্দীতে বহুবার বহু জায়গায় এমন জৈব অস্ত্রের প্রয়োগ হয়েছে। এছাড়া ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীতেও বেশ কয়েকবার এই অস্ত্রের প্রয়োগের প্রমাণও পাওয়া যায়। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, আধুনিক কিংবা প্রাচীনকাল যখনই হোক না কেন পৃথিবীর কোনো দেশই জীবাণু অস্ত্রের প্রয়োগ কিংবা পরীক্ষার কথা স্বীকার করেনি।

জীবাণু অস্ত্র প্রয়োগের যেসব ঐতিহাসিক অভিযোগ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় দখলদার ব্রিটিশ বাহিনী কর্তৃক আমেরিকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের ওপর ভয়াবহ স্মল পক্সের জীবাণু প্রয়োগ সর্বজন বিদিত। বৃটেন কর্তৃক আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনের পর ভূমি দখলের নিমিত্তে আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের উচ্ছেদের ফন্দি আঁটে। এই উচ্ছেদ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এক ভীষণ অশুভ পরিকল্পনা করে ব্রিটিশরা। তারা তৎকালীন রেড ইন্ডিয়ানদের কাছে ভয়ানক স্মল পক্সের জীবাণু যুক্ত কম্বল ও রুমাল বিলি করে। এই কাজের নেতৃত্ব দেয় তৎকালীন ব্রিটিশ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক স্যার আমহার্স্ট।

ব্রিটিশ এই জাদরেল সেনানায়ক উপনিবেশিক শক্তির পক্ষ থেকে উপহারস্বরূপ রেড ইন্ডিয়ানদের কাছে কম্বল বিলি করেন। সরল চিত্তে রেড ইন্ডিয়ানরা তা গ্রহণ করে ব্যবহার শুরু করে। এরপরই শুরু হয় বিপত্তি। দাবানলের মতো স্মল পক্স ছড়িয়ে পড়ে সেই জনপদে। হাজার হাজার রেড ইন্ডিয়ান মারা যেতে থাকে। অনেক ঐতিহাসিকের মতে ওই সময়ে স্মল পক্সে প্রায় ষাট লাখ রেড ইন্ডিয়ান মারা যায়।

তবে যথারীতি ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তি এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। তাদের দাবি প্রাকৃতিকভাবে রেড ইন্ডিয়ানরা স্মল পক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলো। তবে এই বিষয়ে আমেরিকান ঐতিহাসিক ফ্রান্সিস পার্কম্যান বলেন ভিন্ন কথা। তিনি ঐতিহাসিক তথ্য প্রমান উপস্থাপন করে ব্রিটিশদের এই দাবিকে খারিজ করে দেন। তার মতে, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ওই সময়ে আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানরা দূষিত কম্বল থেকে স্মল পক্সে সংক্রামিত হয়েছিল। এছাড়া কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এলিজাবেথ ফিনও তার গবেষণা নিবন্ধে এই দাবির সত্যতা তুলে ধরেছেন।

এই দাবির বিপক্ষেও নানা সময়ে নানা মত প্রকাশিত হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ যাই হোক, কোনো ঐতিহাসিকই রেড ইন্ডিয়ানদের মৃত্যু অস্বীকার করেননি এবং তার পেছনে কোনো না কোনোভাবে ব্রিটিশদের হাত ছিল তাও পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন। কারণ রেড ইন্ডিয়ানদের ওই গণ-মৃত্যুর পরই মূলত ব্রিটিশরা আমেরিকার মাটিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করে।

রেড ইন্ডিয়ানদের অকাতরে প্রাণ দেয়ার সেই ঘটনার পর প্রায় তিনশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তাদের অভিশাপে ভারী হয়ে আছে পরাক্রমশালী আমেরিকার বাতাস। যুগে যুগে সেই অভিশাপের ছোঁয়াও লেগেছে আমেরিকার গায়ে। কে জানে করোনায় আমেরিকার বিপর্যস্ত হওয়া সেই অভিশাপের ফল কিনা? কারণ প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে একটা ঐতিহাসিক প্রমাণিত সত্য পৃথিবীতে তো রয়েছে!


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়