ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

৪০৭ রানের দিনে আগারওয়ালের ব্লক বাস্টার শো

ইন্দোর থেকে ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ১৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৪০৭ রানের দিনে আগারওয়ালের ব্লক বাস্টার শো

ছবি : মিলটন আহমেদ

আবু জায়েদ রাহীকে কোনোকিছু থেকে আলাদা করা গেল না।  বোলিংয়ে উইকেটও নিলেন।  ফিল্ডিংয়ে নিলেন ক্যাচ।  ইন্দোরে দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের হয়ে সবথেকে বেশি ‘ফুটেজ’ খেয়েছেন তো তিনিই!

গুনে গুনে চার উইকেট নেওয়ার পর সীমানায় দাঁড়িয়ে সবথেকে অরাধ্য ক্যাচ ধরলেন রাহী। বল তালুবন্দি হওয়ার পরও ইন্দোরে গগণবিদারী চিৎকার। কারণ, দর্শকদের ততক্ষণে দেখা হয়ে গেছে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ২৪৩ রানের ব্লক বাস্টার শো। চাইলে ইন্দোরের দর্শকরা ‘ইমরুল-ইমরুল’ বলে আওয়াজ তুলতে পারেন! কেননা তার কারণেই তো দেখা মিলল ২৪৩ রানের মাস্টার ব্লাস্টার ইনিংসের।

গতকাল শেষ বিকেলে রাহীর বলে স্লিপে ইমরুল ডাবল সেঞ্চুরিয়ানের লোপ্পা ক্যাচ ছেড়েছিলেন। ওই জীবন পাওয়ার পর বাংলাদেশের বোলারদের কড়া শাসন করেছেন ডানহাতি ওপেনার। তাতে ভারত গড়েছে রানের পাহাড়।  শুক্রবার দ্বিতীয় দিন শেষে ভারতের রান ৬ উইকেটে ৪৯৩।  বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে কতো করেছিল তা আরেকবার মনে করিয়ে দিই, ১৫০। 

প্রথম দিনে আলো কেড়েছিলেন অনেকে। কিন্তু আজ শুধু আগারাওয়াল ও রাহীর দিন। আগারওয়াল মাত্র পাঁচ ইনিংস ব্যবধানে পেয়েছেন নিজের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। পাশাপাশি গড়েছেন অসাধারণ কীর্তি।  দ্বিতীয় সর্বোনিম্ন কম ইনিংস খেলে দ্বিতীয় ডাবলের স্বাদ পেয়েছেন এ ওপেনার।  স্বদেশি বিনোদ কাম্বলি মাত্র পাঁচ ইনিংসে পেয়েছিলেন দুই ডাবল।  আগারওয়াল ১২তম ইনিংসে এ ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়েছেন।  স্যার ডন ব্র্যাডম্যান খেলেছেন আগারওয়ালের থেকে ১ ইনিংস বেশি।

৩৭ রানে দিন শুরু করে দারুণ ব্যাটিংয়ে আগারওয়াল মধ্যাহ্ন বিরতির পর তুলে নেন সেঞ্চুরি।  তবে বিরতির আগে ভারত কিছুটা ব্যাকফুটে ছিল।  দিনের শুরুতে পূজারার ক্যাচ ছেড়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।  অবশ্য তাকে ফেরাতে বেশিক্ষণ সময় নেননি রাহী। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল চালাতে গিয়ে পূজারা (৫৪) ক্যাচ দেন গালিতে মিরাজের পরিবর্তে ফিল্ডিংয়ে নামা সাইফ হাসানের হাতে।  এরপর ভারত সবথেকে বড় ধাক্কাটা হজম করে।  ইন্দোরের উপস্থিত দর্শকদের অবাক করে রাহী ফিরিয়ে দেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে।

রাহীর ভেতরে ঢোকানো বল আঘাত করে কোহলির পেছনের পায়ে।  সচরাচর এমন ভুল হয়না কোহলির। কিন্তু রাহীর সুইংয়ে কিছু করার ছিল না তার। আম্পায়ার রড টাকার প্রথমে আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশ শূন্য রানে ফেরায় ভারতের অধিনায়ককে। কোহলিকে হজম করতে হয় ক্যারিয়ারের দশম ডাক। 

দিনের শুরুতে ২ উইকেট তুলে রাহী দলকে এগিয়ে রাখলেও বাকিরা কিছুই করতে পারেননি।  টেস্ট আমেজ জমে উঠার জন্য প্রতিপক্ষ শিবিরে আঘাত করার প্রয়োজন হয়।  রাহী বাদে বাকিরা ছিলেন নির্বিষ, নিষ্প্রভ।  ফলে চতুর্থ উইকেটে বড় জুটি পায় ভারত।  আগারওয়ালের নতুন সঙ্গী আজিঙ্কা রাহানে।  ১৯০ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ভোগাতে থাকেন দুজন।  চা-বিরতির পর নতুন বল নিয়ে এ জুটি ভাঙেন ওই রাহী।  রাহানে রাহীর শর্ট বল তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ পয়েন্টে। ১৭২ বলে ৮৬ রান করে ফেরেন এ ব্যাটসম্যান।

আগারওয়াল ৯৩ রানে থেকে মিরাজকে ছক্কা মেরে পৌঁছান ৯৯ এ।  সেখান থেকে ১ রান নিয়ে সেঞ্চুরি। সেই মিরাজকে ছক্কা মেরে নিজের রান ১৯৬ রান থেকে ২০২ এ নিয়ে যান ভারতীয় ওপেনার।  কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ২১৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এবার ডাবলে পৌঁছার পর হাঁকালেন তিন ছক্কা ও দুই চার। তাতে রান বাড়তে থাক এক্সপ্রেস গতিতে।  শেষ পর্যন্ত মিরাজই তাকে থামান ২৪৩ রানে। এবারও মিরাজকে উড়াতে গিয়ে মিড উইকেট ক্যাচ দেন। ভাগ্যিস রাহী ছিলেন।  নয়তো আগারওয়াল ট্রিপল সেঞ্চুরি তুলে নিতেন।  ডাবল সেঞ্চুরির পর কোহলি তো তাকে ড্রেসিং রুম থেকে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। ৩৩০ বলে ২৮ চার ও ৮ ছক্কায় সাজানো তার ২৪৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস।

আগারওয়াল ফেরার পর সাহার ব্যাট হাসতে পারেনি। ইবাদত তাকে বোল্ড করে নিজের ট্রেডমার্ক উদযাপন ‘স্যালুট’ দিতে ভুল করেননি।  শেষ ত্রিশ মিনিটে বাংলাদেশের বোলাররা হাত খুলে রান দিয়েছেন।  মনে হয়নি উমেশ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজাদের থামানোর কোনো উপায় তাদের জানা ছিল।  তাতে দ্বিতীয় দিনে ৮৮ ওভারে ৪০৭ রান তুলে টিম ইন্ডিয়া।  রাহী বাদে বাকিদের নির্বিষ বোলিংয়ে এমনটা হওয়ার নয় কি? ৩৪৩ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে আরেকটি ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট পরাজয়ের চোখ রাঙানি দিচ্ছে!


ইন্দোর/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়