ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মুমিনুল যেখানে ‘সুপার ফ্লপ’

কলকাতা থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ২৪ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুমিনুল যেখানে ‘সুপার ফ্লপ’

ছবি: মিলটন আহমেদ

দেশের মাটিতে টেস্টে মুমিনুল হকের ব্যাটিং গড় ৫৫.৩৩, আর দেশের বাইরে ২২.৯৩।

টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো মুমিনুলের গড় নেমেছে চল্লিশের নিচে। ৩৮ টেস্টে ২ হাজার ৬৫৭ রান নিয়ে মুমিনুলের ব্যাটিং গড় এখন ৩৯.৬৫।

ভারতের মাটিতে দুই টেস্টেই মুমিনুল ছিলেন অফ ফর্মে। ইন্দোরে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে শুরুটা ভালো করেছিলেন। কিন্তু অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের স্লাইডার বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন ৩৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তার প্রাপ্তি ৭ রান।

ইডেনে তার জন্য কেটেছে বিভীষিকাময় সময়। দুই ইনিংসে দুই ডাক। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ‘পেয়ার’-এর তিক্ত স্বাদ।

কলকাতা টেস্টের আগেও মুমিনুলের গড় ছিল ৪০.৮৭। কিন্তু ইডেনে পেয়ার পাওয়ায় মুমিনুলের গড় কমেছে ১.২২। দেশের বাইরে ১৫ টেস্টে রান করেছেন মাত্র ৬৬৫। সর্বোচ্চ রান ৭৭। হাফ সেঞ্চুরি আছে মাত্র চারটি। সেখানে টেস্টের আট সেঞ্চুরির সবকটিই দেশের মাটিতে। সর্বোচ্চ রান ১৮১।

এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় মোট ৫টি টেস্ট খেলেছেন মুমিনুল। ভারতে ২টি, শ্রীলঙ্কায় ৩টি। উপমহাদেশের কন্ডিশনে রান করা কঠিন হওয়ার কথা নয়। কারণ, এখানে নেই বিরুদ্ধ কন্ডিশন বা আনপ্লেয়েবল উইকেট। কিন্তু ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে খেলা টেস্টেও মুমিনুল পাননি রান। ভারতে ২ টেস্টে রান ৮৩, শ্রীলঙ্কায় ৩ টেস্টে করেছেন ১৬৮।

উপমহাদেশের বাইরের কন্ডিশনে উপমহাদেশের অনেক নামীদামি খেলোয়াড় নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছেন। ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়াতে লেগেছে অনেক সময়। মুমিনুলও সেই পথেই হাঁটছেন। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে মিলিয়ে খেলেছেন ১০ টেস্ট। নজরকাড়া কোনো পারফরম্যান্স নেই। নেই বলার মতো কোনো স্মৃতি। টেস্টে যে ৮টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন, প্রত্যেকটিই দেশের মাটিতে। প্রশ্ন উঠছে দেশের বাইরে কেন মুমিনুল পারছেন না?

উত্তরে বরাবরের মতো এবারও মিলছে দেশে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব এবং স্পোর্টিং উইকেটের অভাব। মুমিনুল বলছেন, ভালো ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু সময়, ‘গত দুই বছর ধরে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটে বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। স্পোর্টিং উইকেট হচ্ছে। আমরাও বছরে ১০-১৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলি। জাতীয় লিগেও কিন্তু ওইভাবে করা যায় (পেস উইকেট)। যত বেশি খেলা হবে বাইরে খেলতে গেলে সুবিধা হবে।’

নিজের ব্যাটিং নিয়ে মুমিনুল এখন ভাবছেন না। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়ায় মুমিনুলের ভাবনা এখন দল নিয়ে, ‘আমি গড় নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছি না। দল খারাপ করেছে এটা নিয়ে ভাবছি। যখন কেউ খারাপ করে তখন সবারই খারাপ লাগে। আমিও স্ট্রাগল করছি। স্ট্রাগল মানুষকে ভালো কিছু দেয়।’

ইডেনে মুমিনুল দুবারই আউট হয়েছেন পেসার ইশান্ত শর্মার বলে। প্রথমটায় ৭ বলে শূন্য। দ্বিতীয়টায় ৬ বলে শূন্য। অফ স্টাম্পের বাইরে চার কিংবা পাঁচ নম্বর স্টাম্পে তার দুর্বলতা কাটছেই না। পেস বোলিংয়ে তার ব্যাট-প্যাডের ভুল রসায়ন চোখে লেগেছে বারবার। অথচ মুমিনুল দেশের মাটিতে পেস বোলিং কিংবা স্পিনে বরাবরই দুর্দান্ত। টেস্ট ক্রিকেটে শুরু থেকেই দ্যুতি ছড়ানোয় মুমিনুল পেয়েছেন টেস্ট স্পেশালিস্টের খেতাব। তবে অনেকটা বিরতিতে টেস্ট খেলায় দীর্ঘদিন পর তাকে পেতে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ।

এক ফরম্যাটে খেলায় কি সমস্যা হচ্ছে মুমিনুলের? উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক, ‘নির্দিষ্ট বছরে যখন খেলা কম থাকে তখন স্ট্রাগল করতে হয়। জিনিসটা মনের ব্যাপার। আমি নিজেকে ওইভাবে মানিয়ে নিয়েছি। দিন শেষে মানিয়ে নিতে হয়। আল্লাহর রহমতে আমার কোনো সমস্যা হয় না। আন্তর্জাতিক খেলা যখন থাকে না, ঘরোয়া যত খেলা থাকে, ‘এ’ দলের খেলা থাকে; আমি সব খেলি।’

সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে মুমিনুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নেমেছিলে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। এ সিরিজ দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। কিন্তু দুই টেস্টেই বাংলাদেশের সঙ্গী হয়েছে ব্যর্থতা, হতাশা। নতুন অধিনায়কের শুরুটাও হয়েছে বিভীষিকাময়। তবে সকলের শতভাগ সমর্থন পেয়েও ভালো করতে না পারার হতাশা মুমিনুল লুকাতে পারেননি ম্যাচ শেষে।

 

কলকাতা/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়