ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার: কিছু প্রশ্ন

মনি হায়দার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার: কিছু প্রশ্ন

মনি হায়দার: শিল্প ও সাহিত্যে পুরস্কার বিষয়ে বিতর্ক চলে আসছে দেশে দেশে, সব সময়। বাংলাদেশেও পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু এবার অগ্রণী ব্যাংকের অর্থায়নে, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ব্যবস্থাপনায় যে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে, তা কেবল বিতর্কই তৈরি করেনি, অনেকগুলো প্রশ্নও তৈরি করেছে।  এ বিষয়ে লিখবার আগে যেসব লেখক বন্ধু পুরস্কার অর্জন করেছেন, প্রত্যেককে জানাই অভিনন্দন। অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও অভিনন্দন জানাই, কারণ অগ্রণী ব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া এই পুরস্কার প্রদান সম্ভব ছিল না।

বেশি দিন আগের কথা নয়, দশ এগারো বছর আগে অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কারের খবর দেশের খুব কম লেখকই জানতেন। গত কয়েক বছর হলো পুরস্কারের বিষয়টি লেখকেরা সুস্পষ্টভাবে জানতে পারছেন। ফলে তারা বই জমা দিচ্ছেন। এতদিন পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিতর্ক বা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। কিন্ত এ বছর পুরস্কার ঘোষণার পর চারদিকে প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে। কেনো?

পুরস্কার ঘোষণার পর দেখা গেলো, অনেক খ্যাতিমান লেখক পুরস্কার পান নি। জানা গেছে, পুরস্কার প্রদানের জন্য বিচারকেরা  এবং শিশু একাডেমি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যারা আগে এই পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে যারা পুরস্কার পান নি, সেইসব লেখক এবং নতুন লেখকদের সুযোগ দিতে চেয়েছেন। সাধু। আমরা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। কারণ নতুন লেখকদের সুযোগ দেয়া অবশ্যই উচিৎ। যারা পান নি, তাদেরও পাওয়ার অধিকার আছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন দুটি- প্রথমত, শিশু একাডেমি এবং বিচারকেরা এই অবাক সিদ্ধান্ত কি নিতে পারেন? পারেন না। কারণ পত্রিকায় দেয়া বিজ্ঞাপনে এই বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা ছিল না। যদি থাকতো নিশ্চয়ই পুরস্কার পাওয়া লেখক বই জমা দিতেন না।

এবার পুরস্কার দেয়া হয়েছে একসঙ্গে ছয় বছরের। ফলে একটি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। লেখকেরা এক ধরনের প্রত্যাশায় ছিলেন। তারা এমন সিদ্ধান্তে আশাহত হয়েছেন। তারচেয়েও বড় কথা- অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কি সিদ্ধান্ত জানেন? দ্বিতীয়ত, যারা আগেই তিন চার বা পাঁচবার পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেবেন? কারণ, বিচারক ও শিশু একাডেমির হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারণে অনেক লেখক যারা মাত্র একবার পুরস্কার পেয়েছেন, তাও আট নয় বছর আগে- তাদের কি অপরাধ?

বলা হয়েছে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে কোনো বই জমা পড়েনি। যতদূর জানি, ২০১৪ সালে আহমেদ রিয়াজের বই ‘হাঁসজারুদের গল্প’ বইটি এই বিভাগে জমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নাম দেখে বিচারকেরা ও শিশু একাডেমি কর্তৃপক্ষ পড়েও দেখেননি। যদি পড়তেন, বুঝতেন বইটি আসলে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের জন্যই রচিত।

বাংলাদেশে অবাক ঘটনা ঘটে। যেমন, সরকারি কোটি কোটি টাকার বই কেনা হচ্ছে। বই কেনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। বছরের পর বছর অবাক হয়ে দেখলাম,  যেসব লেখকের বই সেকায়েপ নামক প্রকল্পে যাচ্ছে, তাদের বই প্রতি বছরই যাচ্ছে। এবং সংখ্যায় চারটা-পাঁচটা! আর যাদের যাচ্ছে না, কোনো বছরই যাচ্ছে না। একটা বইও না। ঠিক বুঝতে পারি না, কোন ধরনের মাপকাঠিতে লেখক ও বই নির্বাচন করা হয়? কারা নির্বাচন করে? নিশ্চয়ই আগামীতেও সরকার কোটি কোটি টাকা দেবেন বই কিনতে। এবং এভাবে যারা পায় সব সময় পায়। যারা পায় না, কোনোকালেই পায় না। পুরস্কার ও বই কেনার এই অনিয়ম এভাবে চলতে দেয়া যায় না। লেখকসহ সংবেদনশীল সকলকে এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।

লেখক: কথাসাহিত্যিক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ মার্চ ২০১৮/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়