ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অটোমেশন সিস্টেম বিকল, ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারেজ

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৪, ২৮ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অটোমেশন সিস্টেম বিকল, ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারেজ

নজরুল মৃধা, রংপুর : তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজের অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেম গত এক বছর থেকে কাজ করছে না। অটোমেটিক সিস্টেম ঠিক না থাকায় প্রচীন পদ্ধতি অর্থাৎ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে জেনারেটর দিয়ে ব্যারেজের গেট ওঠানামা করতে হচ্ছে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজ। অপারেটিং সিস্টেম বিকল থাকায় চলতি বর্ষা মৌসুমে পানির নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে।

এদিকে গত কয়েকদিন থেকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যারেজের ৫২টি গেট ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই খুলে রাখা হয়েছে। যা অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকবে। অপরদিকে তিস্তা ব্যারেজের পলির আধার ও প্রধান সেচ খাল হুমকির মুখে পড়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ ও সুষ্ঠু নজরদারি না থাকায় তিস্তা ব্যারেজের সিলট্রাফে অর্থাৎ পলির আধার থেকে নিয়মিত পলি উত্তোলন করা হচ্ছে না। ফলে প্রতি বছর ২০ লাখ মেট্রিক টন পলি জমা হচ্ছে এই আধারে। একই সাথে পলির আধার থেকে ওই পলি ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান সেচ খালে গিয়ে পড়ছে। ফলে প্রধান খালের পানির স্তর ৩ ফিট কমে গিয়ে সঠিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।

ব্যারেজের যান্ত্রিক ও পনি ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা গেছে, ব্যারেজের পানি নিঃসরণ ক্ষমতা সাড়ে চার লাখ কিউসেক। এর বাড়তি পানি বা ঢল এলে ব্যারেজের পাশে ফ্লাড বাইপাসের ফিউজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গিয়ে বিকল্প পথে ঘুরে গিয়ে বাড়তি পানি আবার নদীতে পড়ার কথা। কিন্তু ২০১৭ সালের তীব্র ঢলে বাড়তি চাপেও ফ্লাড ফিউজ ওপেন না হওয়ায় চরম ঝুঁকিতে পড়ে ব্যারেজ। জেনারেটর দিয়ে টুলি পদ্ধতিতে গেটগুলো উপরে তোলা এবং নামানো হচ্ছে। গত বছর অটোমেটিক অপারেটিং সিস্টেম কাজ শুরু হয়। এখনো সেই কাজ চলমান। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সিকিমের ভারি বর্ষণ হয়েছে। বর্ষণের সেই ঢলের কারণে গত কয়েকদিন থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অপারেটিং সিস্টেম ঠিক না থাকায় আগেভাগেই ব্যারেজের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ৫২টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। সিস্টেম ঠিক না থাকায় সুবিধামত পানি ছাড়া এবং পানি প্রধান খালে সরবরাহ করা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে আসন্ন বন্যা মোকাবিলায় ব্যারেজ ও পাশের এলাকার মানুষ হুমকির মুখে রয়েছে।

ব্যারেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর তিস্তা নদী প্রায় ৫ কোটি মেট্রিক টন পলি বহন করে। এই পলি ব্যারেজের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডালিয়া থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। অপরদিকে সেচ প্রকল্পের জন্য প্রধান খালে পানি প্রবেশের উৎস মুখে ৪৫ হেক্টর এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পলির আধার অর্থাৎ সিলট্রাফ। উজান থেকে নেমে আসা পলির একটি বিশাল অংশ এই সিলট্রাফে প্রবেশ করছে। প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থ বরাদ্দের অভাবে এই সিলট্রাফ নিয়মিত ড্রেজিং করা হয় না। গত দুই বছর থেকে সিলট্রাফ থেকে কোন পলি উত্তোলন না করা হয়নি। ক্রমাগত পলি পড়ার কারণে প্রধান খালের নিম্নাংশ ভরাট হয়ে আড়াই থেকে তিন ফুট পানির স্তর কমে গেছে। ফলে প্রধান খালের পানি দুষণ হয়ে বিভিন্ন সংযোগ খালে গিয়ে পড়ায় সেচ প্রকল্পটিও হুমকির মুখে রয়েছে। প্রধান খালের পানির স্তর ৩ ফিটের মত কমে গেলেও খালটি সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। আগামী ১০ বছরের মধ্যে অকার্যকর হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

 

 

নীলফামারী জেলার ডালিয়া উপজেলার খলিসা চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার বলেন, ব্যারেজের সাথেই আমার ইউনিয়ন। ব্যারেজে গেট যদি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে উঠানামা করা হয় তা হলে বন্যার সময় বেশি ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, ‘ব্যারেজটি নিয়ে সরকারের আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সানু ও আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিস্তায় বন্যা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডিমলার তিনটি ইউনিয়ন। ব্যারেজের গেট ঠিক মত কাজ না করলে পানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাই আমাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

এলাকাবাসী দ্রুত অটোমেটিক পদ্ধতিতে গেট ওঠানামা ব্যবস্থা করার দাবি করেন। তারা আরো বলেন, দীর্ঘদিন থেকে পলি অপসারণ না করায় প্রধান খালটিও হুমকির মুখে। দ্রুত পলি অপসারণের দাবি জানান তারা।

তিস্তা ব্যারেজ যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুজ্জোহা জানান, ব্যারেজের পানি নিষ্কাশনের জন্য ৫২টি গেটে খুলে রাখা হয়েছে। অক্টোবরে আবার পর্যায়ক্রমে গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ব্যারেজের খুব একটা যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। ঠিকাদার এখনো কাজ করছে। কোথাও সমস্যা হলে সেগুলো আমরা দ্রুত সমাধান করছি। পলির আধার পলি জমাট থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন ড্রেজার মেশিনের সংকট। আমারা পলি উত্তোলনের জন্য ড্রেজার মেশিন চেয়েছি। মেশিন পেলেই পলি উত্তোলনের কাজ শুরু হবে।

ডালিয়া ব্যা‌রেজের পানি ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বাফিউল বারী জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫২ সেন্টিমিটারের ওপর। এই পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমা ধরা হয়। যেকোনো সময়ে পানি বিপৎসীমায় চলে আসতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।

ব্যারেজের অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে। ব্যারেজের যান্ত্রিক বিভাগ সেগুলো মেরামতের কাজ করছে।


রাইজিংবিডি/রংপুর/২৮ জুন ২০১৯/নজরুল মৃধা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়