ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অদ্ভুত সব চিকিৎসা পদ্ধতি (শেষ পর্ব)

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২১ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অদ্ভুত সব চিকিৎসা পদ্ধতি (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : প্রাচীনকালে অদ্ভুত কিছু চিকিৎসা ছিল, যা একরকম প্রথার মতো তখনকার সমাজে বিরাজ করত। এসব চিকিৎসা বর্তমানে যাচ্ছেতাই বলে বিবেচিত হবে। প্রাচীনকালের অদ্ভুত কিছু চিকিৎসা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* মরা ইঁদুরের মলম
প্রাচীন মিশরীয় জনগোষ্ঠী বিভিন্ন রোগের সকল সম্ভাব্য নিরাময় খোঁজার চেষ্টা করেছিল। তারা এক পর্যায়ে মরা ইঁদুর দিয়ে এক ধরনের মলম তৈরি করা শুরু করে যা কাশি, দাঁতব্যথা এবং অন্যান্য রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হতো। ব্রিটেনে ইঁদুর ব্যবহৃত হতো আঁচিল চিকিৎসার কাজে। ইঁদুর অর্ধেক করে কেটে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দেওয়া হতো নিরাময়ের উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে এই পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

* পারদের পানীয়
ইদানিং আমরা জানি পারদ একটি বিষাক্ত ধাতু যা দৃষ্টিহীনতা, স্নায়ুক্ষয়, শ্রবণশক্তিহীনতা, পেশী দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা তৈরি করে থাকে। পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা পারদের ক্ষতিকর দিকের কথা প্রচার করে আসছে অনেক আগে থেকেই। কিন্ত প্রাচীন গ্রিক, ইরানি এবং চীনারা বিশ্বাস করতো যে, পারদের পানীয় পান বা পারদ ত্বকে লাগানো জীবনের সময়কাল বৃদ্ধি করে থাকে এবং এটি সিফিলিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করে। কিন শিন হুয়াং নামে একজন চীনা রাজা চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য অধিকমাত্রায় পারদ গ্রহণের ফলে মারা যান।

* চোখের ভেতরে দাঁত বসিয়ে দেওয়া
অন্ধত্বজনিত চিকিৎসার কাজে প্রাচীনকালে চোখের ভেতরে দাঁতের একটি অংশ বসিয়ে দেওয়া হতো এবং এই পদ্ধতি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও প্রচলিত আছে। প্রথমে রোগীর একটি দাঁত তুলে নিয়ে তাতে একটি লেন্স ড্রিল করে বসানো হয়। তার আগে দাঁতটি তার গালের মধ্যে সাময়িক একটি সময়ের জন্য বসানো হয় যাতে দাঁতটি তার নিজস্ব রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করে নিতে পারে। তারপর সেটি লেন্সের সঙ্গে লাগিয়ে চোখে বসিয়ে দেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক শ্যানন ওয়েবার এবং গ্রেগ মোলোনি এই ধরনের জটিল সার্জারি করে থাকেন।

* পেঁয়াজ দিয়ে গর্ভধারণ পরীক্ষা
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় পেঁয়াজ দিয়ে গর্ভধারণ পরীক্ষা করার রীতি প্রচলিত ছিল। কোনো নারী গর্ভবতী কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য তার যোনিতে পেঁয়াজ ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। পরদিন সকালে যদি তার মুখ দিয়ে পেঁয়াজের গন্ধ পাওয়া যেত তাহলে মনে করা হতো যে ওই নারী গর্ভবতী।

* হেমিগ্লোসেকটমি
হেমিগ্লোসেকটমি এমন এক পদ্ধতি যা প্রাচীনকালে তোতলামি সারানোর কাজে ব্যবহৃত হতো। রোগীর জিহ্বার কিছু অংশ কেটে ফেলে তোতলামি নিরাময় করা হতো এবং এই পদ্ধতিতে কোনোরকম অচেতন করে নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে প্রুশিয়ান সার্জন জে.এফ ডিফেনবাখ ছিলেন এই পদ্ধতির অন্যতম অনুসারী এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই পদ্ধতিতে সার্জারির ফলে রোগী স্বাভাবিকভাবে কথা বলার ক্ষমতা লাভ করে।

* ঘুমপাড়ানি সিরাপ
উনবিংশ শতাব্দীতে কোডিন, আফিম এবং হেরোইনের সংমিশ্রণে এক প্রকার সিরাপ তৈরি করা হতো যা শিশুদের ঘুমপাড়ানি ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো ব্যাপকভাবে। এই সিরাপটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তখন ব্যাপকহারে বিখ্যাত করে তোলা হয়। ১৮০০ সালের মাঝের দিকে এটি বাজারে বেশ চাহিদা তৈরি করে নেয়। ১৯৩০ সাল অবধি সিরাপটি বাজারে তার চাহিদা ধরে রাখে যদিও পরবর্তীতে এটির সত্যতা সবাই জেনে যায়।

* লার্ভা পদ্ধতি
আমেরিকান গৃহযুদ্ধের আগে অবধি সংক্রমিত ক্ষত নিরাময়ের কাজে লার্ভার ব্যবহার বহুল প্রচলিত ছিল, কেননা লার্ভাগুলো মরা টিস্যুগুলো খেয়ে ফেলতো এবং সুস্থ টিস্যুগুলো সুরক্ষিত থাকতো। পদ্ধতিটি এতোটাই কার্যকরী ছিল যে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখনো এই পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যখন খুব শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করে না তখন এই ছোট্ট মাছির বাচ্চাগুলো মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।

পড়ুন :

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়