ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অনলাইনের গুজব শনাক্ত করবে বিডি ফ্যাক্ট চেক

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনলাইনের গুজব শনাক্ত করবে বিডি ফ্যাক্ট চেক

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : ‘ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষের বলার স্বাধীনতা বেড়েছে। তাই স্বাধীন মানুষকে বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যথায় সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার হতে পারে এবং তা বৃহত্তর সমাজের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের মূল কাজ হলো তথ্য বিভ্রান্তি দূর করা।’- বলছিলেন বিডি ফ্যাক্ট চেক এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা কদরুদ্দীন শিশির।

বিডি ফ্যাক্ট চেক অনলাইনে সঠিক তথ্য শনাক্ত, ভুয়া খবর বা গুজব শনাক্ত করে মানুষকে সচেতন করার কাজ করে। স্বল্প সময়ে বেশ সাড়াও পেলেছে ওয়েবসাইটটি। পাঠক কোনো খবর নিয়ে সন্দেহ বা বিভ্রান্তি তৈরি হলে তারা বিডি ফ্যাক্ট চেক এর ইনবক্সে সেটির সত্যতা জানতে চাচ্ছেন। তথ্য বিভ্রান্তি  ও গুজব প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে বিডি ফ্যাক্ট চেক।

কয়েকজন তরুণের সম্মিলিত উদ্যোগে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে বিডি ফ্যাক্ট চেক। মূলত ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফেক নিউজের ছড়াছড়ির পর ফ্যাক্ট চেকিংয়ের বিষয় বিশ্বে বেশ আলোচিত হতে থাকে। বাংলাদেশেও অনলাইনে ফেক নিউজ প্রায়ই ভাইরাল হয়। এটা আসলে সব দেশেই কম-বেশি হয়। এমন বাস্তবতায়ও এমন ফ্যাক্ট চেকিংয়ের চিন্তা করেন এই তরুণ দল। গড়ে তোলেন বিডি ফ্যাক্ট চেক।

কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ‘আমার বন্ধু জাহেদ আরমান যুক্তরাষ্ট্রে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে একসঙ্গে পড়েছি। আমি এখানে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। একদিন ও ফোন করে বললো, তুই রাজি থাকলে ফ্যাক্ট চেকিং নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমি নিজে আগে থেকেই ব্লগে ও ফেসবুকে টুকটাক ফ্যাক্ট চেকিং করতাম। পরে আমরা অল্প কয়েকজন তরুণ মিলে টিম তৈরি করেছি। স্বেচ্ছাসেবা দিয়েই এটি দাঁড় করিয়েছি। প্রথম দিকে মানুষজন বুঝে উঠতে পারেনি বিষয়টা। তবে এখন সবাই এর গুরুত্ব বুঝতে পারছে।’

বিডি ফ্যাক্ট চেক-এর অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাহিদ আরমান বলেন, ‘ভুয়া খবর বা গুজবের কারণে অতীতে আমাদের দেশে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাজনীতি ও ধর্ম বিষয়ক ভুয়া খবরই বেশি ছড়ায়। আমরাও এ দুটি বিষয়ের ওপর বেশি জোর দেই। বর্তমানে যে পরিসরে কাজ করছি অদূর ভবিষ্যতে তা আরো অনেক বড় করতে চাই। অবশ্য এজন্য অর্থনৈতিক সক্ষমতা একটা বড় বিষয়। তার ওপর নির্ভর করবে কত বড় আকারে এটিকে নিয়ে যাওয়া যাবে।’

সামাজিক মাধ্যমের উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গে তথ্যের অনিয়ন্ত্রিত প্রবাহ বেড়েছে। এটার অনেক ভালো দিক আছে। আবার বিপদও আছে। একটা হলো যাচাই বাছাই ছাড়া নানা তথ্য ছড়াচ্ছে। বা ইচ্ছা করে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এতে অসেচতন মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সচেতন মানুষও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বিডি ফ্যাক্ট চেক এই বিভ্রান্তি দূর করতে কাজ করছে। ইন্টারনেটে সামাজিক মাধ্যম বা অন্য সূত্র থেকে যেসব ভুল খবর, ভুয়া তথ্য/ছবি/ভিডিও ছড়ানো হয় সেগুলো চিহ্নিত করে প্রকাশ করে বিডি ফ্যাক্ট চেক।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা চার কোটির মতো। ফেসবুক ব্যবহার করেন দুই কোটিরও বেশি মানুষ। এত মানুষের মধ্যে ছড়ানো ভুল তথ্যকে চিহ্নিত করা একটা বিরাট কাজ। বিডি ফ্যাক্ট চেক বড় বড় ভুল তথ্যগুলো বা যেগুলো ভাইরাল হয় সেগুলো নিয়েই আপাতত কাজ করছে। তারা পাচঁটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করে। এগুলো হচ্ছে ফ্যাক্ট নির্বাচন, গবেষণা, লিখন, সম্পাদনা এবং সংশোধন। বিডি ফ্যাক্ট চেক যেকোনো বিষয়ের ওপর ফ্যাক্ট অনুসন্ধান করে না। সংস্থাটি শুধু সেসব বিষয়ের ফ্যক্ট চেক করে যেগুলোর সমাজে ব্যাপক প্রভাব আছে। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য যা প্রেস রিলিজ, বিজ্ঞাপন কিংবা সংবাদ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় শুধু সেগুলোর ফ্যাক্ট চেক করে থাকে বিডি ফ্যাক্ট চেক। সংস্থাটি কোনো অনুমান কিংবা তথ্যসূত্রবিহীন কোনো বক্তব্যের ফ্যাক্ট চেক করে না। তারা যেসব সূত্র থেকে ফ্যাক্ট চেকের বিষয় ঠিক করে সেগুলো হচ্ছে: বিজ্ঞাপন, প্রেস রিলিজ, সংবাদ, ওয়েবসাইট, টেলিভিশন, টকশো, কিংবা রাজনৈতিক দলের ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্ট, জনসভার বক্তব্য।

তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। যদি কোনো বক্তব্য সংস্থাটির কাছে মিথ্যা, প্রতারণাপূর্ণ, কিংবা ভুয়া বলে মনে হয় তখনই তারা এর ফ্যক্ট চেক করে। গবেষণার মধ্য দিয়ে যে সমস্ত বিষয়ের উপযুক্ত প্রমাণ সংস্থাটির হাতে থাকে সেগুলোকেই প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। বিডি ফ্যাক্ট চেক তথ্য সংগ্রহের জন্য সবসময় প্রাথমিক তথ্যসূত্রের ওপর নির্ভর করে। এছাড়া কোনো প্রতিবেদনের ব্যাখ্যাদানের জন্য সংস্থাটি সবসময় দল-মত নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নেয়।

উদ্যোক্তারা ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান, সামাজিক মাধ্যমের বাইরেও মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও ভুল খবর, বায়াস খবর নিয়মিত প্রচার হচ্ছে। এগুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতে চাই। আর একদল তরুণকে গড়ে তুলতে চাই যারা মানুষকে সত্য জানানোকে নিজেদের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করবে।

ওয়েবসাইট:  




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়