ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

অপরিকল্পিত নদী খননে হুমকির মুখে নৌরুট

বিলাস দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৪, ১৩ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অপরিকল্পিত নদী খননে হুমকির মুখে নৌরুট

শুকনো মৌসুম শুরু না হতেই ঢাকা-পটুয়াখালীসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ১২টি নৌরুটে নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এরমধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে যাত্রীরা যেমন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেনা, তেমনি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা।

এসকল রুটের নৌযানগুলোও নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পারায় বাড়ছে ভোগান্তি। ফলে নৌযানগুলোকে জোয়ার-ভাঁটার উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। নদী খনন কাজ চললেও তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। তাছাড়া পরিকল্পনা ছাড়াই চলছে নদী খনন।

পটুয়াখালী নৌ-বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় নদীর ১২টি রুটে ডাবল ডেকারের ১০ থেকে ১২টি যাত্রীবাহী লঞ্চ নিয়মিত যাত্রী বহন করছে।

পটুয়াখালী-ঢাকা রুটের কুয়াকাটা-০৯ লঞ্চের সুপার ভাইজার ইউনুচ হোসাইন রাইজিংবিডিকে বলেন , ‘পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের মূল পয়েন্ট, লোহালিয়া ও লাউকাঠি নদীর একাধিক স্থান, পালেরডাঙ্গা, ঝিলনা, কবাই, তাপালকাঠি, শশীর মোড়, কারখানাসহ একাধিক পয়েন্টে নাব্যতা সংকট চরম আকারে ধারণ করছে। জোয়ারের সময় এসকল স্থান গুলোতে লঞ্চ যাতায়াত করলেও ভাঁটার সময় যাত্রী-মালামাল নিয়ে লঞ্চ অতিক্রম করা যায় না। এসকল স্থানে মাঝে মধ্যে দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত পানি থাকে। ফলে লঞ্চ আটকে যাওয়ার কারণে যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতন্ডা ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। নদী খনন হলেও তা সঠিক ভাবে হচ্ছে না।’

প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের মাস্টার ইসরাফিল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত ৯ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে পটুয়াখালীর কারখানা নদীতে এমভি জামাল-৫ ও এমভি আওলাদ-৭ অন্তত চার হাজার যাত্রী নিয়ে আটকা পরে। রাত ১০টার দিকে জোয়ারের পানি বাড়লে লঞ্চ দুইটি ডুবোচর থেকে মুক্তি পায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রায় সাড়ে চার’শ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের বুড়িগঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা, তেতুলিয়া ও লোহালিয়া নদী পাড়ি দিতে সারা রাত কেটে যায়। শুষ্ক মৌসুমে ঝিলনা, টেকেরচর, কবাই, কারখানা, লোহালিয়ার মোড়ে চরম নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। ফলে ব্যাহত হয় নৌ-যানগুলোর স্বাভাবিক চলাচল। শীত মৌসুম শুরু না হতেই নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। সঠিকভাবে নদী খনন না হলে ঢাকা-পটুয়াখালী নৌরুট বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’

নাব্যতা সংকট নিরসনে এসকল পয়েন্টে প্রতি বছরই নদী খনন করে ড্রেজিং বিভাগ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ তদারকি না থাকায় খননকৃত মাটি পুনরায় নদীতে ফেলাসহ সংশ্লিষ্টদের নানা অনিয়মের কারণে নাব্যতা সংকট থেকেই যায়।

পটুয়াখালী সফরকালে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। নদী রক্ষায় এ কারণে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দিচ্ছেন নদী ও পানি অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশিষ্টজনরা। প্রতি বছরই নদী খনন করে ড্রেজিং বিভাগ। কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ তদারকি না থাকায় খননকৃত মাটি পুনরায় নদীতে ফেলাসহ সংশ্লিষ্টদের নানা অনিয়মের কারণে নাব্যতা সংকট থেকেই যায়। এতে সাধারন জনগণের ভোগান্তির পাশাপাশি নদী খননের নামে সরকারের কোটি টাকা লোপাট করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাছাড়া, নদী খননে পরিকল্পনা না থাকায় দিনে দিনে নাব্যতা সংকট বাড়ছে।’

পটুয়াখালী নৌবন্দর উপ-পরিচালক খাজা সাদিকুর রহমান জানান, ‘একটি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত নদী খনন চলছে এবং সম্প্রতি কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য আরো একটি ড্রেজিং আনা হয়েছে।’

 

পটুয়াখালী/বিলাস দাস/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়