ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচন

অপেক্ষায় সাদ, প্রার্থী নিয়ে বিপাকে জাপা

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২৯ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অপেক্ষায় সাদ, প্রার্থী নিয়ে বিপাকে জাপা

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে দলটি। ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য হতে চান এরশাদের বড় ছেলে সাদ এরশাদ। এরশাদের আপন ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এরশাদের পরিবারের বাইরে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি এস এম ইয়াসির, জেলা জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ইতিমধ্যে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আসনে নির্বাচন করতে চান পাঁচজনই। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। দলের মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন কেউ কেউ। প্রয়োজনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন, এমন কথাও বলছেন প্রার্থীরা। এ অবস্থায় রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জাপার শীর্ষ নেতারা। প্রার্থী নির্বাচনে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। কাকে রেখে কাকে মনোনয়ন দেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নেতারা।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানান, প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কমিটি যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী ঠিক করবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুর-৩ আসনটি শূন্য হয়। যেকোনো সময় উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

জাপা ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, রংপুর-৩ আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পরিবার থেকে কেউ এমপি নির্বাচিত হোক, এটাই চায় এলাকাবাসী। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপ-নির্বাচনে ত্যাগী নেতাদের মধ্যে থেকে প্রার্থী চান। জাতীয় পার্টির জন্য রাত-দিন যারা ঘাম ঝরিয়েছেন, তাদের কাউকে যেন প্রার্থী করা হয়, এটাই তাদের প্রত্যাশা।

কিন্তু এরশাদের পরিবার চায়, এরশাদের শূন্য আসনে তার উত্তরাধিকারী হোক এমপি। এরশাদের দুই ছেলের মধ্যে এরিক এরশাদ এখনো ছোট, বড় ছেলে সাদ এরশাদ এলাকার লোকজনের সঙ্গে তেমন পরিচিত নন। তারপরও সাদকে এরশাদের এই আসনে এমপি করতে চান তার মা জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রওশন এরশাদ। জীবদ্দশায় তিনি সাদকে স্বামীর অবর্তমানে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে যেতে চান।

জানা গেছে, সাদকে রংপুর-৩ আসনে এমপি করতে রওশন এরশাদ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে তার। মহাজোট সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে সাদ এরশাদকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তখন জি এম কাদেরের এ বিষয়ে কিছু বলার থাকবে না। আওয়ামী লীগের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন সাদ এরশাদ। সংকেত না পেলে নির্বাচনে তিনি আগ্রহী নন বলেও জানা গেছে।

মহাজোটের অংশ হিসেবে এই আসনের দাবিদার জাতীয় পার্টি। সে হিসেবে আসনটি এরশাদের বড় ছেলে সাদকে ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ।

সাদও আশা করছেন, বাবা এরশাদ ও মা রওশনের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেবেন। ওই আসনে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এরশাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আসতে চান সাদ এরশাদ।

জানা গেছে, এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে রংপুরে আসা-যাওয়া করছেন সাদ। এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। মাঝে মাঝে স্ত্রী নিয়ে এরশাদের পল্লী নিবাসেও থাকছেন তিনি। কয়েকদিন আগেও তিনি রংপুরে যান। নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এলাকার অলিগলি চষে বেড়ান। এমপি নির্বাচিত হয়ে বাবা এরশাদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান সাদ। রংপুরে আসা-যাওয়ার এ অল্প সময়েই সাদ এরশাদের আচার ব্যবহারে মুগ্ধ এলাকাবাসী। বিনয়ী ও সজ্জন হিসেবে এলাকাবাসী কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তিনি।

রংপুর-৩ আসনে নির্বাচন করে এমপি হতে চান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার। তিনি এর আগে এরশাদের ছেড়ে দেয়া এই আসনে উপ-নির্বাচনে এমপি ছিলেন। সাদ এরশাদসহ সবাইকে ডিঙিয়ে তিনি প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকায় গণসংযোগও শুরু করেছেন। কয়েকদিন ধরে এলাকায় শোডাউন করছেন। মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে পারেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ তাকে চায়। কিন্তু রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি এরশাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন এবং দল থকে বহিষ্কৃত হন। এখনো তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। এ ঘটনায় দলের শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরা আসিফের ওপর ক্ষুব্ধ। তাকে প্রার্থী করা হলে দলের বড় একটি অংশের বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে।

এরশাদের পরিবারের বাইরে আরো তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। তাদের মধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব ইয়াসির শক্ত প্রার্থী। সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন তিনি। তিনি এলাকায় শোডাউন করছেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছেও ইয়াসিরের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ ইয়াসিরকে যোগ্য প্রার্থী মনে করছেন। তৃণমূলের মতামতও ইয়াসিরের দিকে বেশি। কিন্তু এরশাদের পরিবারকে ডিঙিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করা তার পক্ষে কতটুকু সম্ভব, তা বলা যাচ্ছে না। মনোনয়ন না পেলে তাকেও শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে দেখা যেতে পারে।

অন্যদিকে, জেলা জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীরও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যও। রংপুরে তারও সমর্থক রয়েছে। তিনি উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম নেবেন। দল প্রার্থী করলে তিনি নির্বাচন করবেন। তাছাড়া, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার আশির্বাদপুষ্ট জেলা জাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকও মনোনয়নপ্রত্যাশী।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ আগস্ট ২০১৯/নঈমুদ্দীন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়