ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অফিস সহকারী ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অফিস সহকারী ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন

শুরুটা ২০১৬ সালে। মো. নজরুল ইসলাম কাজ করেন সিলেট সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে। এ পদে থাকায় অফিসের ক্যাশ-চেকবই থাকতো তার কাছে। আর সেই সুযোগ লুফে নেন তিনি। কৌশলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে হাতিয়ে নিতে শুরু করেন রাজস্ব উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা। এভাবে তিন বছরে তিনি ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বিষয়টি জানাজানি হয় দুই মাস আগে। এরপর থেকে তিনি অফিসে আসা বন্ধ করে দেন। সুযোগ বুঝে সৌদি আরবে পালানোর চেষ্টা করেন। এ জন্য সরকারি চাকুরের কথা গোপন করে ব্যবসায়ী পরিচয়ে তৈরি করেছেন পাসপোর্ট। বিষয়টি আগে থেকে বিমানবন্দর এপিবিএনকে জানিয়ে রেখেছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিলেট জেলার উপ-পরিচালক।

তাদের ধারণা সঠিক ছিল; ফলে বিদেশ পালানোর সময় আটকা পড়েন মো. নজরুল। তিনি সিলেট থেকে বিমানযোগে ঢাকায় যান। সেখান থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে সৌদি আরবে পাড়ি দিতেন। তবে এর আগেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার পার্কিং এলাকা থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে আটকা পড়েন তিনি। বর্তমানে তিনি রয়েছেন লালঘরে।

তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিভাগীয় তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে। গত ৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হেমায়েত হুসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্তকৃত ব্যক্তি খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। পর দিন ৪ ডিসেম্বর এ আদেশের পত্র নজরুলের স্ত্রী শেলী আক্তার পিয়ন বুকে স্বাক্ষর করে গ্রহণ করেন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিলেট জেলার উপ-পরিচালক ডা. লুৎফুন্নাহার জেসমিন বলেন, চলতি বছরে সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়লে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে নজরুল সৌদি আরবে পালানোর চেষ্টা করছেন বলে তাদের কাছে খবর ছিল। এর প্রেক্ষিতে তারা ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরের আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে আগে থেকে বিষয়টি অবহিত করে রাখেন। গত ২৭ নভেম্বর বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়।

বিমানবন্দর আমর্ড পুলিশের কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খানের পাঠানো এক পত্রে বলা হয়েছে, গত ২৭ নভেম্বর বিকেলে বিমানবন্দরের কার পার্কি এলাকা থেকে নজরুল ইসলামকে (৪৭) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তাকে তল্লাশি করে ১ হাজার সৌদি রিয়াল, ৪৫০ দিরহাম এবং ৭ হাজার ৯০০ ইউএস ডলার পাওয়া যায়। কিন্তু তার পাসপোর্টে (ঊঊ-০৪৩৮০০৬) ১ হাজার ডলার এনডোর্স করা ছিল। অতিরিক্ত ডলার এবং অর্থের বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। যে কারণে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের হয়।

পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সিলেট থেকে তাদের জানানো হয়, আটক নজরুল ইসলাম সিলেট সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত আছেন এবং তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত চলমান আছে। আটক ব্যক্তি ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০৩৭ ফ্লাইটযোগে সৌদি আরব যাওয়ার উদ্দেশে ২৬ নভেম্বর বিজি-৬০৬ ফ্লাইটে সিলেট থেকে ঢাকা আসেন। কিন্তু সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার পরেও তার কাছে বিদেশ গমনের সরকারি আদেশ (প্রজ্ঞাপন) পাওয়া যায়নি। আর তিনি যে পাসপোর্ট করেছেন তাও ব্যবসায়ী পরিচয়ে।

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সিলেট জেলা কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত নজরুল শান্ত স্বভাবের। তিনি জেলা অফিসে বিভিন্ন সময়ে কাজে আসতেন। তিনি প্রয়োজন ছাড়া কারো সঙ্গে আলাপও করতেন না।

সম্প্রতি তার অনিয়মের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন তিন সদস্যের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এ কমিটির অপর দুই জন হলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফসি) ডা. জাহিদ হোসেন ও বালাগঞ্জ উপজেলা মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফসি) ডা. হামিদা বেগম।

তদন্ত কমিটির প্রধান পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত ১৪ নভেম্বর তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্তে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসের রেকর্ড ক্লিপিংএ অনিয়মসহ প্রাথমিকভাবে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণ পেয়েছেন তারা।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (যুগ্ম সচিব) কুতুব উদ্দিন জানান, অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-কে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

সিলেট/আব্দুল্লাহ আল নোমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়