ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অবশেষে দাফন স্বামীর পাশে

ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ৪ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবশেষে দাফন স্বামীর পাশে

নীলফামারী সংবাদদাতা : আইনি জটিলতা শেষে চার বছরের বেশি সময় ধরে হিমঘরে সংরক্ষণে থাকা ধর্মান্তরিত নীলফামারীর ডোমার উপজেলার হোসনে আরা ইসলামের (২০) লাশ ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী দাফন করা হয়েছে।

উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী আজ শুক্রবার দুপুর ৩টায় জেলা প্রশাসকের নিয়োগকৃত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ফাতিমা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে শ্বশুরবাড়ি উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পূর্ববোড়াগাড়ী কাজীপাড়া কবরস্থানে স্বামী হুমায়ুন ফরিদ লাইজুর কবরের পাশে দাফন করা হয়। 

কয়েক হাজার মুসল্লি জানাজায় অংশ নিতে আসায় স্থানসংকুলন না হওয়ায় দুই দফায় লাশের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

গত ১২ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ ধর্মান্তরিত হোসনে আরা ইসলামকে মুসলিম রীতি অনুযায়ী দাফন করার আদেশ দেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার হাইকোটের আদেশের কপি জেলা প্রশাসকের হাতে পৌঁছায়। আদালতের আদেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসকের পক্ষে প্রস্তুতি গ্রহণ করে শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টায় রংপুর মেডিকেল কলেজের হিমঘরে সংরক্ষণে থাকা হোসনে আরার লাশ নিয়ে আসা হয়।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে জানা যায়, ডোমার উপজেলার খামার বমুনিয়া গ্রামের অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে কলেজছাত্রী নিপা রানী রায়ের সঙ্গে একই উপজেলার পূর্ববোড়াগাড়ী গ্রামের হুমায়ুন ফরিদ লাইজুর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মোছা. হোসনে আরা ইসলাম নাম নিয়ে ২ লাখ ১ হাজার ৫০১ টাকা দেনমোহরে হুমায়ুন ফরিদ লাইজু ইসলামকে বিয়ে করেন নিপা। 

এ অবস্থায় মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাদী হয়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা আমলে নিয়ে শারীরিক পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে রাজশাহী সেফহোমে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি স্বামী হুমায়ূন ফরিদ লাইজু বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। এরপর মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার তার মেয়েকে নিজ জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করলে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে রাখেন। তবে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ দুপুরে বাবার বাড়িতে কীটনাশক পান করে মেয়েটি। তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হলে সেখানে মারা যায়। পুলিশ হাসপাতাল হতে লাশ উদ্ধার করে জেলার মর্গে ময়নাতদন্ত করে। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় দাফন নিয়ে। মেয়েটির শ্বশুর জহুরুল ইসলাম ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক দাফনে ও বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দু শাস্ত্রে সৎকারের জন্য তাৎক্ষণিকভাব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন।

সেখানে সমাধান না হওয়ায় আদালত লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে সংরক্ষণের আদেশ দেন। সেই থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে লাশ সংরক্ষণ ছিল। মামলাটি নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দীর্ঘ দিন চলার পর শ্বশুর তা হাইকোটে নিয়ে যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পেলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য হাইকোটে আবেদন করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/নীলফামারী/৪ মে ২০১৮/ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়