ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অবৈধ গ্যাস সংযোগ শনাক্ত হলেই জরিমানা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবৈধ গ্যাস সংযোগ শনাক্ত হলেই জরিমানা

আবাসিক বা বাণিজ্যিক যেকোনো ধরনের গ্যাস সংযোগ অবৈধ শনাক্ত হলে সেই গ্রাহককে ১২ মাসের (এক বছর) সমপরিমাণ বিল জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। এই বিল তৈরি করা হবে ব্যবহৃত চুলার ওপর ভিত্তি করে। পাশাপাশি গ্রাহককে শনাক্তকরণের তারিখ থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের তারিখ পর্যন্ত গ্রাহকের স্থাপিত গ্যাস সরঞ্জামের বিপরীতে ফ্ল্যাট রেটে গ্যাস বিল আদায় করা হবে।

অবৈধ গ্যাসের অপব্যবহার রোধ, সুষম বণ্টন নিশ্চিত, গ্যাসের লোড সমন্বয় এবং সর্বোপরি রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ বিভিন্ন পরিকল্পনায় প্রণয়ন করা হবে গ্যাস বিপণন বিধিমালা, ২০১৯। এরই মধ্যে এই নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় এসব বিধি রাখা হয়েছে। বর্তমানে খসড়া নীতিমালাটি পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত করার পর এটি গ্যাস আইন বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় এবং রাজস্ব ফাঁকির একটি অন্যতম কারণ অবৈধ সংযোগ। এর কারণে একদিক যেমন গ্যাসের সমবণ্টন হয় না, গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। বিধিমালায় তাই সাধারণ সংযোগ, মিটার এবং সিএনজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবৈধ সংযোগের জরিমানার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সম্পূর্ণ চোরাইভাবে বাইপাস লাইন, মিটার ট্যাম্পারিং, খাতায় নাম-ঠিকানা না তুলেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ ইত্যাদি নানা কৌশলে গ্যাস চুরি-লোপাটের ঘটনা অবলীলায় ঘটে চলছে। মাঝে মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সংঘবদ্ধ গ্যাস-চোর-লুটেরাদের নানা ধরনের তদবিরের কারণে এসব অভিযান খুব একটা কাজে আসে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, বাসাবাড়ি, হাউজিং কমপ্লেক্স, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সিএনজি স্টেশনসমূহে চোরাই গ্যাসের লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ দিয়ে এবং অনেক জায়গায় অনুমোদনের অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করে এসব দুর্নীতিবাজ চক্র প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, শুধুমাত্র রাজধানীতেই এরকম অবৈধ ও অনৈতিক সংযোগের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এসব চোরাই-অবৈধ সংযোগ থেকে সরকার এক টাকাও রাজস্ব পাচ্ছে না। অথচ প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে খাচ্ছে লুটেরা চক্র।

এসব অপতৎপরতা বন্ধ করতে একটি গ্যাস বিপণন বিধিমালা খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্টরা।

জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ বিভাগের সহকারী সচিব মো. রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, গ্যাসের অপচয়, অপব্যবহার এবং অবৈধ সংযোগের বিষয়ে সরকার অবহিত আছে। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালিত হলেও এসব বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই এ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতে বিধি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্যাস আইন প্রণয়নের পর দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে গ্যাস বিপণন খসড়া বিধিমালা-২০১৯ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এরপর এটি গত ২৫ আগস্ট উন্মুক্ত করা হয় সর্বস্তরের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে। এ সংক্রান্ত প্রাপ্ত সকল মতামত পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, খসড়া বিধিমালা এবং বিভিন্ন সুপারিশ ও মতামত পর্যালোচনা করার জন্য আগামী ২ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। জ্বালানি খাতের সম্পৃক্ত সকল পক্ষকে এতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সভায় খসড়া বিধিমালাটি চূড়ান্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষদের মতামত নেয়া হবে। এরপর এটি চূড়ান্ত আকারে প্রণয়ন করা হবে। খসড়া বিধিমালাটি জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ বিভাগের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

জাতীয়সম্পদ গ্যাসের চোরাই লাইন, অবৈধ সংযোগ, চুরি, লুটপাট ও অপচয় রোধে নিয়মিত তদারকি হবে এখন থেকে। খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, মিটারযুক্ত গ্রাহক গ্যাস কারচুপি বা অননুমোদিত গ্যাস ব্যবহার করলে অস্থায়ীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ অপরাধ অনুযায়ী জরিমানা দিতে বাধ্য হবেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ থেকে সর্বনিম্ন ৩ মাসের বাড়তি বিল জরিমানা দিতে হবে গ্রাহককে।

রেগুলেটর বা রেগুলেটরের চাপ অননুমোদিতভাবে বা অবৈধভাবে পুনঃস্থাপন বা পুনর্নির্ধারণ করে নির্ধারিত চাপের বেশি চাপে গ্যাস ব্যবহার করলেও উপরোক্ত নিয়মে জরিমানার আওতায় আসবেন উক্ত গ্রাহক।

শিল্প গ্রাহক ঘণ্টাপ্রতি লোড ৪ হাজার ঘনফুটের নিচে গ্যাস কারচুপি বা গ্যাসের অপব্যবহার করলে অস্থায়ীভাবে লাইন বিচ্ছিন্নকরণসহ দুই থেকে ছয় মাসের অতিরিক্ত বিল জরিমানা দিতে হবে।

এছাড়া বিধিতে আরো বলা হয়েছে, গ্যাস সংযোগ সংক্রান্ত কোনো শর্ত ভঙ্গের কারণে গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন হলে, এরপর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করলে পরিদর্শনের তারিখ থেকে শনাক্তকরণ তারিখ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬ মাসের গ্যাস বিলের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা দিতে হবে।


ঢাকা/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়