ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অভাব-অনটনের মধ্যেও তাদের জিপিএ-৫ অর্জন

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৪, ১৫ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অভাব-অনটনের মধ্যেও তাদের জিপিএ-৫ অর্জন

নিজস্ব প্রতিবেক, রংপুর : রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় দারিদ্র্য জয় করে আট মেধাবী শিক্ষার্থী এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

এরা কেউ দিনমজুরের, কেউ বাঁশের শ্রমিকের, কেউ পোশাক কারখানার কর্মীর বা কৃষি শ্রমিকের সন্তান। কেউ আবার পিতৃ-মাতৃহীন। অভাব এদের নিত্য সঙ্গী। অন্যের বই ধার নিয়ে লেখাপড়া করে জিপিএ-৫ পেয়ে হাসি ফুটিয়েছে দুঃখী মা-বাবার মুখে।

শিক্ষা জীবনের এই সাফল্যে তাদের দুই চোখে এখন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। তবে অর্থাভাবে ভালো কলেজে ভর্তি বা লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছে তারা।

কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে নাইমুর রহমান। সারাই নতুন বাজার গ্রামের দরিদ্র মোকসেদ আলীর ছেলে সে। অভারের মধ্যেও ৫ম ও ৮ম শ্রেণির ন্যায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছে নাইমুর। তার এক ভাই ও ছোট বোন স্কুলে পড়ে। নাইমুর এত দিন পড়াশুনার খরচ চালিয়েছে টিউশন করে।

ছাইদুর রহমান শুভ বাংলা বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণির ন্যায় এসএসসিতেও বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে রংপুরের শ্রমিক অধ্যুষিত হারাগাছ এলাকার মধ্য ঠাকুদাশ গ্রামের মৃত মুশফিকুর রহমানের ছেলে। মা সেলাইয়ের কাজ করে এক ছেলেকে কৃষি ডিপ্লোমা ও শুভকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। পিতৃহারা শুভ সব প্রতিবন্ধকতাকে পদদলিত করে ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শুভ জানায়, সে নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ জোগাড় করত। মা সামছুন নাহার সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার ওপর নির্ভরশীল তিনজনের সংসার।

রংপুরের কাউনিয়ার বাংলা বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞায় শাখায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে আবু জেহেন। সে ৫ম এবং ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল। মা আমেনা বেগম জানান, আবুর বাবা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিভিন্ন মালামাল বিক্রয় করে যা আয় হয়, তা দিয়ে অতিকষ্টে  তাদের সাতজনের সংসার চলে। আবুর লেখাপড়া খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবুর মা বলেন, ছেলের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব?

মনিরুল ইসলাম এবারের এসএসসি পরীক্ষায় শহীদবাগ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে জিপি-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল সে। মনিরুল জানায়, শ্রমিক বাবার আয়ে কোনো রকমে তাদের সংসার চলে। অভাবেব সংসারে অর্থ জোগান ও পড়ালেখার খরচ জোগাতে সে প্রাইভেট পড়াত। মনিরুলের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, তার ছেলের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। 

আরিফা বেগম কাউনিয়ার সাব্দী দারুস ছুন্নাত আলিম মাদ্রাসা থেকে মানবিক শাখায় দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এটা তার কঠোর পরিশ্রমের ফল। বাবা বাঁশের শ্রমিকের কাজ করে কোনো রকমে চারজনের সংসার চালান। আরিফার স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বিসিএস কর্মকর্তা হওয়া। কিন্তু দরিদ্র দিনমজুর বাবার অভাব-অনটনের সংসারে সেই স্বপ্ন কী পূরণ হবে।

অভাব-অনটন দমিয়ে রাখতে পারেনি পিতৃহারা মরিয়ম আক্তারকে। অর্থ সংকটের মধ্যে মরিয়ম এবার এসএসসি পরীক্ষায় মীরবাগ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

দিনে মজুরির কাজ করে, রাতে পড়ালেখা করে শামীম মিয়া প্রমাণ করেছে ইচ্ছা থাকলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। এবারের এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে শামীম মিয়া। কাউনিয়া মধ্য হরিশ্বর গ্রামের মোজাফ্ফর মন্ডল ও শাহিনা বেগমের ছেলে সে। অভাবেব সংসারে অর্থ জোগান ও পড়াশুনার খরচ জোগাতে সে প্রাইভেট পড়ানো ও মাঠে দিনমজুরির কাজ করত। 

মুরাদ হোসেন হারাগাছ আব্দুর রহমান দাখিল মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞায় শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। এটা তার কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের ফসল। গংগাচরা কামদেব শেখপাড়া গ্রামের শ্রমিক হারুন অর রশিদ ও মা মোসলেমা বেগমের ছেলে মুরাদ হোসেন। মুরাদ জানায়, তাদের ভিটাবাড়ি পর্যন্ত নেই। অন্যের জমিতে বাড়ি করে বসবাস করেন। বাবার দিনমজুরির আয়ে পাঁচজনের সংসার চলে। মুরাদের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। 




রাইজিংবিডি/রংপুর/১৫ মে ২০১৭/নজরুল মৃধা/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়