ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

অভিনয় না-জানা ঐশ্বরিয়া

আহমেদ শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৩, ১ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অভিনয় না-জানা ঐশ্বরিয়া

ছেচল্লিশেও তিনি অবাক করা সুন্দরী। যৌবনে বিশ্বসুন্দরী ছিলেন। যারা বলেন সুন্দরীতমাদের নাকি গুণ থাকে না (মাকাল ফল!)- তাদের মিথ্যে প্রমাণ করেছেন তিনি। মেধাবী ছাত্রী, তুখোড় মডেল, দক্ষ নৃত্যশিল্পী, পরিশ্রমী অভিনেতা- অনেকভাবেই তার প্রতিভার মূল্যায়ন করা যায়। যদিও আরো অনেকের মতোই সাফল্যের পথ তার জন্য সহজ ছিল না। অথচ ১৯৯৪-এর পর তরতর করে উৎড়ে গেছেন সবক’টি পরীক্ষায়। বলতে পারেন একশতে একশ। কিন্তু দুষ্টুলোকের কথা থেমে থাকেনি। বিশ্বসুন্দরী হয়েছে তো কী হয়েছে- অভিনয়ে দক্ষ না! এমন অনেক কথা তাকে শুনতে হয়েছে। তিনি শুনেছেন, কখনও মুচকি হেসেছেন। আর ওই মুচকি হাসি, নীল নয়নের দ্যুতিতেই সালমান খানকেও বলতে বাধ্য করেছেন- হাম দিল দে চুকে সনম!

পাঠক, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কাকে নিয়ে এই লেখা? তাল মেলাতে পারছেন না? তাহলে ‘তাল’-এর কথাই না হয় স্মরণ করুন। মনে পড়েছে- সাদা শাড়ি কোমরে জড়িয়ে এক তন্বি তুমুল বৃষ্টিতে নেচে নেচে গাইছে- তাল সে তাল মিলা। আপনার কল্পনার সঙ্গে লেখাটা কি মিলল? মিললে ভালো, না মিললে আপনাকেই পরে আফসোস করতে হবে। কারণ তাকে ভোলা যায় না। তিনি ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। আজ ছেচল্লিশ বছরে পা দিলেন এই অভিনেত্রী।

ঐশ্বরিয়ার জন্ম ১৯৭৩ সালের ১ নভেম্বর কর্ণাটকে। বাবা কৃষ্ণরাজ আর্মি বায়োলজিস্ট। মা বৃন্দা গৃহিণী। ভাই আদিত্য রাই ইঞ্জিনিয়ার। পরিবার কর্ণাটক থেকে মুম্বাই চলে আসার পর আরিয়া বিদ্যা মন্দির হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন ঐশ্বরিয়া। এরপর জয় হিন্দ কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। এক বছর পরে ডিজি রুপারেল কলেজে চলে যান। সেখান থেকে ৯০ শতাংশ নব্বর নিয়ে এইচএসসি পাস করেন।

ছোটবেলা থেকেই ক্ল্যাসিকাল ড্যান্স ও মিউজিকে তালিম নেন ঐশ্বরিয়া। জুওলজি তার প্রিয় বিষয় ছিলো, তাই শুরুতে চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, পরে আর্কিটেক্ট হওয়ার স্বপ্ন জাগে মনে। কিন্তু সে স্বপ্ন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি, মডেলিংয়ে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৯১ সালে একটি আন্তর্জাতিক সুপারমডেল প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন ঐশ্বরিয়া। ভোগের মার্কিন সংস্করণের প্রচ্ছদে স্থান পান। ১৯৯৩ সালে আমির  খান ও মাহিমা চৌধুরীর সাথে পেপসির বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বলতে পারেন এক বিজ্ঞাপনেই বাজিমাত! ১৯৯৪ সালটা ঐশ্বরিয়ার জন্য বিরাট এক মাইলফলক। কারণ সে বছর দক্ষিণ আফ্রিকার সান সিটিতে অনুষ্ঠিত মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন তিনি।

ব্যস, এরপর রুপালি জগতের হাতছানি। তবে বলিউড নয়, শুরুটা হয় মনি রত্নমের তামিল সিনেমা ‘ইরুভার’ (১৯৯৭) দিয়ে। সে বছরই বলিউডে ববি দেওলের বিপরীতে ‘অউর পেয়ার হো গ্যায়া’ মুক্তি পায়। কিন্তু ছবিটি চলেনি। অমনি শুরু হয় কানাঘুষা- এই মেয়ে সব পারে, অভিনয় নয়। সমালোচনায় কান না দিয়ে ঐশ্বরিয়া এগিয়ে চলেন। পরের বছর বিগ বাজেটের তামিল সিনেমা ‘জিন্স’-এ অভিনয় করেই আলোচনায় আসেন তিনি। এবার তার নাচ ব্যাপক প্রশংসিত হয়; অভিনয় নয়!

১৯৯৯ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ সিনেমা ঐশ্বরিয়ার জন্য টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। সঞ্জয় লীলা বানসালির এই রোমান্টিক সিনেমাতে সালমান খান ও অজয় দেবগনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেন অ্যাশ। এরপর ২০০০ সালে শাহরুখের বিপরীতে হিট ছবি  ‘মোহাব্বতে’, ২০০২ সালে আবারো শাহরুখ খানের বিপরীতে সুপারহিট ‘দেবদাস’-এ তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। বলা যায়, ‘দেবদাস’ সিনেমায় পার্বতীর চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ভক্তের হৃদয়ে আসন পোক্ত করে নেন। ভুলে গেলে চলবে না এই সিনেমায় চন্দ্রমুখী চরিত্রে আরেক হার্টথ্রব মাধুরী দিক্ষীতের কথা। তিনিও তখন সুপারহিট নায়িকা। পর্দায় নাচে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই কাজটিই সফলভাবে করেছেন পরিচালক। দুজনকে একসঙ্গে নাচিয়েছেন। তাতেই দর্শক মুগ্ধ!

এরপর ঐশ্বরিয়া ২০০৬-এ হৃতিক রোশানের বিপরীতে গ্ল্যামারাস চোরের চরিত্রে ‘ধুম-টু’-তে অভিনয় করে সারা ফেলে দেন। তামিল, তেলেগু, বাংলা, ইংরেজি ছবিতে অভিনয় করে তিনি তার প্রতিভা দেখিয়েছেন। পেয়েছেন অসংখ্য স্বীকৃতি। একবার দুবার নয়, দশবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছেন ঐশ্বরিয়া। এর মধ্যে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ও ‘দেবদাস’র জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৯ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন। ২০১২ সালে শিল্প-সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য এই অভিনেত্রীকে ‘নাইট অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ সম্মাননায় ভূষিত করে ফ্রান্স। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে ভারতের বাইরে ইউরোপ ও আমেরিকাতেও ঐশ্বরিয়ার ভক্ত সংখ্যা অনেক। ২০০৩ সালে প্রথম বলিউড অভিনেত্রী হিসেবে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ পান তিনি। এরপর থেকে নিয়মিত কানে দেখা যায় তাকে।

বলিউডে পা দেয়ার পর সালমান খানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ঐশ্বরিয়া। কিন্তু এই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। এরপর বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনের ছেলে অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজন জুটি বেঁধে ‘ঢাই আকসার প্রেম কি’ ও ‘কুছ না কাহো’ সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। কিন্তু সফল হননি। তাতে কী! বাস্তব জীবনের জুটিতে তারা ঈর্ষণীয়ভাবে সফল। যদিও অভিষেক তার চেয়ে দুই বছরের বড় অ্যাশের প্রেমে পড়েন ‘ধুম-টু’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়। এরপর ২০০৭ এর ২০ এপ্রিল তাদের হয়। ২০১১ সালে ঘরে কন্যা সন্তান আরাধ্যর জন্ম হয়। সব মিলিয়ে এই দম্পতি বেশ সুখেই আছেন এখন।

আজীবন সুখে থাকুন বলিউডের গর্ব ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। শুভ জন্মদিন।

 

ঢাকা/মারুফ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়