ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অলিম্পিকে পদক জয় অসম্ভব নয় : রোমান সানা

আব্দুল্লাহ এম রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ২ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অলিম্পিকে পদক জয় অসম্ভব নয় : রোমান সানা

রোমান সানা

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের এখন আলোচিত নাম রোমান সানা। তীর ধনুক হাতে গত বছর সাফল্য পেয়েছেন একের পর এক। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া সাউথ এশিয়ান গেমসে তার নেতৃত্বেই ১০টি স্বর্ণপদক আসে আর্চারি থেকে। এর আগে বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে জুলাইয়ের টোকিও অলিম্পিকে খেলার সরাসরি সুযোগ পেয়েছেন এই আর্চার। ওয়ার্ল্ড আর্চারিতেও পদক পেয়েছিলেন খুলনার ছেলে রোমান সানা। আর সর্বশেষ একদিন আগেই খবর এসেছে ওয়ার্ল্ড আর্চারির র‌্যাঙ্কিংয়ে নাম আছে তার। রোমান সানার এবার লক্ষ্য অলিম্পিকে পদক জয়। দুঃসাধ্য হলেও অলিম্পিকে পদক জয় অসম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আত্মবিশ^াসী রোমান।

অলিম্পিকের আগে অবশ্য আরো ৬টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ আছে রোমান সানাদের সামনে। সেখান থেকেই নিজেকে আরো প্রস্তুত করে নিতে চান তিনি। বর্তমানে ছুটিতে খুলনায় আছেন এই আর্চার। খুলনায় নিজ বাসায় গতকাল রাইজিংবিডির আব্দুল্লাহ এম রুবেলের সাথে আলাপকালে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। তার সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

রাইজিংবিডি : ছুটি কেমন উপভোগ করছেন?

রোমান সানা : প্রায় সাত মাস পর খুলনায় নিজের বাড়িতে আসলাম। এখানে সময়টা বেশ ভালোই কাটছে। মা প্রায় প্রতিদিনই নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন। অনেক আত্মীয় বাড়িতে আসছেন আমার সাথে দেখা করতে। ১০ দিনের মতো হল বাড়িতে এসেছি, আরও তিন চারদিন থাকব। এরপর টানা ব্যস্ততা থাকবে। তাই এই সময়টা বাড়ির সবার সাথে উপভোগ করছি। মা, বাবা, ভাই-ভাবি সবার সাথে খুব ভালো সময় কাটছে।

রাইজিংবিডি : আপনার শুরুর গল্পটা যদি ছোট করে একটু বলেন।

রোমান সানা : নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার একটি আর্চারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই আমার আর্চারির সঙ্গে পথচলা শুরু হয়। সেই প্রশিক্ষণে ভালো করায় সুযোগ হয় প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় ধাপে বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার। সে সময়ে আমাদের আর্চারির কোচ সাজ্জাদ হোসেনের কাছেই প্রাথমিক প্রশিক্ষণ হয় আমার। সেখানে ভালো করার পর ইয়ুথ আর্চারি একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হয়। সেখানেও ভালো করি। এরপর জাতীয় দলে সুযোগ হয় প্রথম ২০১১ সালে। ২০১১ সালেই আমি প্রথম আন্তর্জাতিক পদক পাই ইয়ুথ ইন্টারন্যাশনার আর্চারি থেকে। তখন থেকেই আর্চারি আমার রক্তে মিশে আছে। সেখান থেকেই পরিশ্রম করেই এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি।

রাইজিংবিডি : এক বছর আগেও তারকা ছিলেন না। এখন তারকা রোমান সানা আপনি। বিষয়টি কতটা উপভোগ্য ? 

রোমান সানা : তারকাখ্যাতি আমার কাছে অতটা ভালো লাগে না। আমি সাধারণভাবেই চলতে পছন্দ করি। একা একা চলাফেরা করি এখনও। যখন বাইরে বের হই, অনেকেই কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমার ধারণা প্রথমে হয়তো ভাবে ইনিই কি রোমান সানা। রোমান সানা কি এভাবে বাইরে চলাফেরা করবেন। পরে অনেকে আমাকে এসে জিজ্ঞেস করে আপনি কি রোমান সানা? আমি বলি হ্যাঁ। আমার সাথে ছবি তোলে। আমি বিষয়টি উপভোগ করি। আমি তাদেরকে সব সময় বলি, আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন দেশের হয়ে আরও বড় সম্মান বয়ে আনতে পারি।

রাইজিংবিডি : খুলনায় আছেন অনেকদিন। এখনও খুলনা স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থা বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপনাকে সম্মাননা জানানো হয়নি....

রোমান সানা : আমি এটা নিয়ে কোন অভিযোগ করব না। তবে এসএ গেমসে অনেক ব্রোঞ্জ পদক জয়ীরাও তাদের নিজ শহরে গিয়ে বড় ধরনের সম্মাননা পেয়েছে। আমার জেলায় কেউ আমাকে ডাকলে, ভালোবাসা দিলে অবশ্যই অনেক ভালো লাগতো। আক্ষেপ নেই, তবে ভালো লাগাটা আরও অনেক বেশি হতো আমার।

রাইজিংবিডি : অলিম্পিকে সরাসরি সুযোগ পেয়েছেন আপনি। সেখানে নিজের লক্ষ্য কি থাকবে আপনার ? 

রোমান সানা : আমার লক্ষ্য থাকবে আমার সেরা পারফরমেন্স ওখানে করা। অলিম্পিক হচ্ছে বিশ্বের সব থেকে বড় ক্রীড়া আসর, সেখান থেকে পদক পাওয়াটা  অবশ্যই দুঃসাধ্য বিষয়। তবে অসম্ভব তো নয়। আমার স্বপ্ন আমি দেশকে একটা পদক উপহার দিব। সেটা হোক আমার হাত ধরে বা আমার টিমমেট কারও হাত ধরে। তো আমার সেই স্বপ্নটাকে আমি আঁকরে ধরে আছি, যেন এই স্বপ্নটাকে আমি বাস্তবায়ন করতে পারি। এ লক্ষ্যে আমি আগের থেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করছি। কারণ সেই জায়গাটায় যেতে হলে নিজেকে আগে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। অলিম্পিকের আগে আমার অন্তত ৬টি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আছে। এটা আমার জন্য বড় একটা সুযোগ। আশা করি এসব টুর্নামেন্ট খেলে নিজেকে আরো প্রস্তুত করতে পারব। আরেকটি সুযোগ যদি হয়, অর্থাৎ আমরা যদি টিম হিসেবে কোয়ালিফাই করতে পারি। আমারা যদি সেরা পারফর্ম করি, আর আল্লাহ পাক যদি সহায় হন, তাহলে আমরা পদক পেতেই পারি।

রাইজিংবিডি : আর্চারির ভবিষ্যৎ কতটা নিশ্চিত? 

রোমান সানা :  আমরা যখন আর্চারি খেলা শুরু করি, তখন আর্চার ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। আর এখন আর্চার দুইশতাধিক।
তবে এই ইভেন্টের আরও ভালো করার জন্য স্পন্সরদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। বলেন ক্রিকেটের একটি ম্যাচ দেখতে গেলেও দেখা যায় কত কত স্পন্সর। অথচ আর্চারির এসব ইভেন্টে দেশের পতাকা অনেক উপরে তুললেও সেভাবে স্পন্সর পাওয়া যাচ্ছে না। যদি স্পন্সর পাওয়া যেতো, যদি আর্চাররা অর্থনৈতিকভাবে আরেকটু স্বাবলম্বী হতে পারেন, তবে এই ইভেন্ট নিঃসন্দেহে লাল সবুজের পতাকা আরও উপরে নিতে পারবে।


খুলনা/রুবেল/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়