ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অ্যান্টিবায়োটিক : চিকিৎসককে যে প্রশ্নগুলো করা উচিত (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২০ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অ্যান্টিবায়োটিক : চিকিৎসককে যে প্রশ্নগুলো করা উচিত (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : অসুস্থতায় ভোগার কারণে চিকিৎসকের কাছে গেলেন। তিনি আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করলেন। এই প্রেসক্রিপশন নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার পূর্বে আপনার চিকিৎসককে অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করুন। এসব প্রশ্নের উত্তর পেলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কার্যকারিতা বেড়ে যেতে পারে ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সমস্যা প্রতিরোধ হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পূর্বে আপনার চিকিৎসককে যে প্রশ্নগুলো করা উচিত তা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* কোনো ডোজ ভুলে গেলে কি করবো?

সঠিক সময়ে সঠিক ডোজে ওষুধ সেবন করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আপনি ওষুধ সেবন করতে ভুলে যেতে পারেন অথবা খুব দেরিতে ওষুধ সেবনের কথা মনে পড়তে পারে। তাই কোনো ডোজ ভুলে গেলে কি করা উচিত তা সম্পর্কে জ্ঞান রাখার প্রয়োজন রয়েছে। কিছু ওষুধ মনে পড়া মাত্র সেবন করলেও সমস্যা নেই, কিন্তু অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে পরবর্তী ডোজ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে- এ ডোজের সঙ্গে ভুলে যাওয়া ডোজ যোগ হবে না, প্রেসক্রিপশনে যতটুকু লেখা আছে ততটুকু সেবন করতে হবে। ওষুধ সেবন করতে ভুলে গেলে কি করা উচিত তা জানতে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

* কখন ভালো অনুভব করতে শুরু করবো?

আপনার উপসর্গ চলে গেলেই প্রেসক্রিপশনের ওষুধ সেবন বন্ধ করবেন না, প্রেসক্রিপশনে যতদিন পর্যন্ত ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে ততদিন পর্যন্ত ওষুধ সেবন করা উচিত, কারণ উপসর্গ চলে গেলেও আপনার শরীরে অনিরাপদ মাত্রায় ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে। আমেরিকান ফার্মাসিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র, পেনসিলভানিয়ায় অবস্থিত হার্টজেল’স ফার্মেসির সভাপতি ডা. ভিনসেন্ট হার্টজেল বলেন, ‘ওষুধ সেবন আরম্ভের পর আপনি আবার কখন থেকে ভালো অনুভব করতে শুরু করবেন তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেয়া উচিত। সাধারণত দুই-তিন দিনে একজন রোগী ভালো অনুভব করতে শুরু করে।’ যদি ২/৩ দিন পরও আপনি ভালো অনুভব করতে শুরু না করেন, তাহলে পুনরায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে- কারণ, আপনার ওষুধ পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে অথবা আপনার উপসর্গ পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।

* কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পর খুব অল্প সংখ্যক রোগীর মাঝে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, কিন্তু আপনার শরীরে কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা সম্পর্কে জেনে নেয়া অথবা সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে হাইভস বা আমবাত ওঠতে পারে। আমেরিকান সোসাইটি অব হেলথ সিস্টেম ফার্মাসিস্টস কনজ্যুমার মেডিকেশন ইনফরমেশনের এডিটর ও ফার্মেসির ডাক্তার বারবারা ইয়াং বলেন, ‘ওষুধের ধরনের ওপর নির্ভর করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তীব্রতা বিবেচনা করে আপনার চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন যে ওষুধটি চালিয়ে যাবেন নাকি অন্য কোনো থেরাপি প্রয়োজন হবে।’

* অ্যান্টিবায়োটিক গুঁড়ো করে সেবন করা যাবে?

অনেক রোগী গিলতে কষ্ট হয় বলে অথবা গলায় আটকে যাওয়ার ভয়ে ওষুধের বড়ি বা পিলকে গুঁড়ো করে ফেলেন। কিন্তু এমনটা করা কি উচিত? এ প্রসঙ্গে ডা. ইয়াং বলেন, ‘যদি আপনার ওষুধের বড়ি গিলতে সমস্যা হয়, তাহলে এটি গুঁড়ো করার পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করুন, কারণ সম্পূর্ণ বড়ি বা ক্যাপসুল যত ভালোভাবে শোষিত হয়, গুঁড়ো করা ওষুধ তেমনভাবে শোষিত নাও হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘অনেক অ্যান্টিবায়োটিক লিকুইড ফর্মে পাওয়া যায়, যা আপনার জন্য ভালো অপশন হতে পারে।’

* অ্যান্টিবায়োটিক অন্য ওষুধের সঙ্গে সেবন নিরাপদ?

ক্ষতিকর বিক্রিয়া এড়াতে আপনার চিকিৎসক জিজ্ঞেস করতে পারেন যে আপনি বর্তমানে কোন কোন ওষুধ খাচ্ছেন। আপনার চিকিৎসক এ বিষয়ে জানতে না চাইলেও আপনি নিজ থেকে জানান যে কোন ওষুধগুলো সেবন করছেন, এমনকি জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি অথবা প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনা যায় এমন সাপ্লিমেন্ট ও ভিটামিন সম্পর্কেও। ডা. হার্টজেল বলেন, ‘কিছু অ্যান্টিবায়োটিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ির কার্যকারিতা কমিয়ে ফেলে, যার মানে হলো গর্ভনিরোধের জন্য আপনার ভিন্ন উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন হবে। এছাড়া সাপ্লিমেন্টের আয়রন কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পড়ে, যার ফলে এসব অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে শোষিত হতে পারে না।’ আপনার প্রেসক্রিপশনের ওষুধ অনেকগুলো ফার্মেসিতে খোঁজার পরও না পেলে চিকিৎসককে অবহিত করুন।

* আমি কি এই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি অ্যালার্জিক (যেহেতু পূর্বে রিয়্যাকশন হয়েছিল)?

কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি অ্যালার্জি থাকার মানে কেবলমাত্র এটা নয় যে ওষুধটি সেবন করবেন না, আপনাকে এই ওষুধের ফ্যামিলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য ওষুধও এড়িয়ে চলতে হবে, বলেন আমেরিকান ফার্মাসিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ও ফ্লোরিডার ক্লিনিক্যাল কনসালটেন্ট ফার্মাসিস্ট নরম্যান টোমাকা। কিন্তু ছোটকালে কোনো ওষুধের প্রতি রিয়্যাকশনের মানে এই নয় যে আপনাকে ওষুধটি এখনো এড়িয়ে চলতে হবে। ছোটকালে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে আপনার যে রিয়্যাকশন হয়েছিল তা যে অ্যালার্জি এমনটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না- উদাহরণস্বরূপ, অ্যাম্পিসিলিন শিশুদের ত্বকে র‍্যাশ সৃষ্টি করতে পারে, যার সঙ্গে হিস্টামিন নিঃসরণের সম্পর্ক রয়েছে, অ্যালার্জি নয়। কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি আপনার আসলেই অ্যালার্জি রয়েছে কিনা তা উদঘাটন করতে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে মেডিক্যাল টেস্ট করুন। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পর অস্বাভাবিক উপসর্গ লক্ষ্য করলে আপনার চিকিৎসককে জানান।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

আরো পড়ুন :

* পানি ছাড়া ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক

* খাবার যখন ওষুধের শত্রু​

* ওষুধ সেবনে যত ভুল

* অ্যাসপিরিন যখন বিপজ্জনক​

* যে ৮ ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট আপনার প্রয়োজন নেই



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ আগস্ট ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়