ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ৬ মারাত্মক উপসর্গ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ৬ মারাত্মক উপসর্গ

প্রত্যেকের পাকস্থলি বা পেটে কিছু না কিছু সমস্যা হয়, যেমন- স্টমাক ভাইরাস অথবা ফুড পয়জনিং অথবা ডায়রিয়া অথবা কোনো নির্দিষ্ট খাবার সহ্য করতে না পারা। পেটের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে অ্যাপেন্ডিসাইটিস। এ সমস্যাটি পেটের অন্যান্য সমস্যার তুলনায় কম হলেও এ বিষয়ে জানা থাকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অ্যাপেন্ডিসাইটিসকে অবহেলা করলে তা জীবন কেড়ে নিতে পারে।

ইউ.এস ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের তথ্যানুযায়ী, এ সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে কিশোর-কিশোরী ও ২০-৩০ বছর বয়সি লোকদের মধ্যে। মায়ো ক্লিনিক অ্যাপেন্ডিসাইটিসকে অ্যাপেন্ডিক্সের প্রদাহ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। রোয়ান স্কুল অব অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিনের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর জেনিফার কাডল বলেন, ‘অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা না করলে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাবে, যা জীবননাশের কারণ হতে পারে।’ তাই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা ও সচেতন থাকা উচিত। এ প্রতিবেদনে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ৬ মারাত্মক উপসর্গ উল্লেখ করা হলো।

পেটে ব্যথা : প্রায়ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সবচেয়ে কমন উপসর্গ হচ্ছে পেটে ব্যথা। এ ব্যথা সাধারণত নাভির পাশে হয় এবং ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এ ব্যথা পেটের ডানদিকে নিচে এক-চতুর্থাংশে স্থানান্তরিত হয়, বলেন ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলিনা স্কুল অব মেডিসিনের অন্তর্গত কোলোরেক্টাল ও জেনারেল সার্জারির সার্জন সেড্রেক ম্যাকফেডেন। সাধারণ পেট ব্যথা অথবা বদহজমের ব্যথার মাত্রা স্থির হলেও অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা কিছু ঘন্টার মধ্যে আরো খারাপ পর্যায়ে চলে যায়।

বাথরুম করতে ব্যথা : অ্যাপেন্ডিক্সের অবস্থান পেলভিসের নিম্নভাগে হলে ঘনঘন মূত্রত্যাগের বেগ আসতে পারে অথবা মূত্রত্যাগে ব্যথা অনুভব হতে পারে অথবা ডায়রিয়া হতে পারে, বলেন ডা. ম্যাকফেডেন। কখনো কখনো কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘একজন রোগী কোন ধরনের উপসর্গে ভুগবেন তা নির্ভর করে তার অ্যাপেন্ডিক্সের অবস্থানের ওপর। সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্সের অবস্থান হলো, পেটের ডানদিকে নিম্নভাগে এক-চতুর্থাংশে, কিন্তু ব্যক্তিভেদে এর অবস্থান একটু ভিন্নও হতে পারে।’

বমি আসার অনুভূতি : পেট ব্যথা শুরুর পর বমিভাব, বমি ও খাবারে অনীহা হচ্ছে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ, বলেন ডা. ম্যাকফেডেন। তাই আপনার তীব্র পেট ব্যথার সঙ্গে বমি আসার অনুভূতি হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

জ্বর ও শীতলতা : জ্বর হচ্ছে কোনো ইনফেকশনের লক্ষণ। জ্বরের সঙ্গে শারীরিক শীতলতা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে, বলেন ডা. ম্যাকফেডেন। জ্বরের মানে হচ্ছে আপনার মাথা গরম হবে, কিন্তু শারীরিক শীতলতায় কম্বল দিয়ে শরীর ঢাকার পরও ঠান্ডা অনুভব হবে। শরীরে গরম ও ঠান্ডার সমন্বয় এবং সেইসঙ্গে পেটে ব্যথা হচ্ছে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সতর্কীকরণ উপসর্গ।

গ্যাস জমে যাওয়া : অতিরিক্ত ফল, বিনস ও অন্যান্য গ্যাস-উৎপাদনকারী খাবার খেলে আপনার পেটে প্রায়সময় গ্যাস জমতে পারে এবং এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু আপনার পেটে গ্যাসীয় অবস্থার পাশাপাশি মলত্যাগের ধারাবাহিকতা ভেঙে পড়লে ও বদহজম হলে এটি একটি লক্ষণ হতে পারে যে আপনার অ্যাপেন্ডিক্সে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে, বলেন ডা. ম্যাকফেডেন। ইউ.এস ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, মনে হতে পারে যে মলত্যাগের পর এ অস্বস্তি (গ্যাসীয় অবস্থা) প্রশমিত হবে, কিন্তু আসলে তা হয় না- এক্ষেত্রে আর দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

নড়াচড়া করতে অসুবিধা : অ্যাপেন্ডিসাইটিস থেকে উৎপন্ন ব্যথার কারণে এ সমস্যায় আক্রান্ত অনেক লোকের পক্ষে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়ে, বলেন ডা. কাডল। প্রায়ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লোকেরা ব্যথা কমানোর আশায় বিছানা বা সোফায় কুণ্ডলি পাকিয়ে শুয়ে বা বসে থাকেন। ইউ.এস ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস উল্লেখ করেছে, নড়াচড়া করলে, গভীর শ্বাস নিলে ও কাশি/হাঁচি দিলে এ ব্যথা আরো বেড়ে যায়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিসে করণীয়

এসব উপসর্গের মধ্যে যেকোনো একটি দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডা. কাডল বলেন, ‘অ্যাপেন্ডিক্সে প্রদাহ হলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়ে থাকে। এটি হলো একটি মারাত্মক দশা, যার জন্য অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা না করলে জটিলতায় ভুগতে হবে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাওয়া, যা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বা মৃত্যু ঘটাতে পারে।’ একারণে জীবন বাঁচাতে তাড়াতাড়ি অ্যাপেন্ডিসাইটিস শনাক্তকরণ গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের (ডিপার্টমেন্ট অব ইমার্জেন্সি মেডিসিন) অ্যাকাডেমিক ফেলো ও চিফ রেসিডেন্ট ড্যান জিনগোল্ড বলেন, ‘সময়ের পরিক্রমায় অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে থাকে, যেমন- ডান তলপেটে ব্যথা ও পেটের অনমনীয়তা। হাঁটলে, কাশলে ও গাড়ির ঝাঁকুনিতে এ ব্যথা বেড়ে যায়। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গের সঙ্গে মানসিক অবস্থায় পরিবর্তন আসলে তা তীব্র সিস্টেমিক ইনফেকশনের ইঙ্গিত দিতে পারে।’ অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হচ্ছে সার্জারি।

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়