ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অ্যালিয়েনরা থাকলেও তাদের দেখা পাব না!

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০১, ২৭ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অ্যালিয়েনরা থাকলেও তাদের দেখা পাব না!

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : ভীনগ্রহের প্রাণী অর্থাৎ অ্যালিয়েনের খোঁজ নতুন কিছু নয়, অনেক আগে থেকেই গবেষণা চলছে এ বিষয়ে। কিন্তু নতুন একটি গবেষণায় দাবী করা হয়েছে, ভীনগ্রহের জীবিত কোনো প্রাণীর অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

কারণ অ্যালিয়েনের অস্তিত্ব নিশ্চিতে পৃথিবী থেকে পাঠানো সংকেত মহাকাশে পৌঁছাতে এবং সেখান থেকে ফেরত আসতে যে সময় লাগে ততদিন পর্যন্ত হয়তো সেখানে কোনো সভ্যতা টিকে থাকে না। পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য দুনিয়া আমাদের অজান্তেই সৃষ্টি এবং ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অ্যালিয়েন নিয়ে বর্তমানের আধুনিক গবেষণাগুলো জগৎবিখ্যাত ড্রেক সমীকরণের উন্নত রূপ মাত্র। ১৯৬১ সালে ফ্রাংক ড্রেক নামক বিখ্যাত এক গবেষক, আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে অবস্থিত তেজস্ক্রিয় জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণাগারে গবেষণা চালিয়ে কার্যকরী এই সমীকরণের উদ্ভাবনা ঘটান।

প্রতিবছর কতগুলো নক্ষত্রের জন্ম হচ্ছে, সেসব নক্ষত্রে বিভিন্ন গ্রহের উপস্থিতি, সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা এসব জটিল হিসাব-নিকাশ সমীকরণটি দ্বারা করা সম্ভব এবং পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহ থেকে কোনো সংকেতও সমীকরণটি দ্বারা উদ্ধার করা সম্ভব। কিন্তু এই গবেষণার বর্তমান ফলাফলগুলো সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

সুইজারল্যান্ডের ল্যসেনে অবস্থিত ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুলের গবেষকদলের সদস্য ক্লডিও গ্রিমাল্ডি, সায়েন্স নিউজের লিসা গ্রসম্যানকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি আমাদের সৌরজগতের বাইরের কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থেকেও থাকে, পৃথিবী থেকে সেখানে পাঠানো সংকেত আবার পৃথিবীতে ফেরত আসতে আসতে সেখানকার প্রাণের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।’

ড্রেক সমীকরণের ফিচারগুলো নিয়ে যদিও তর্ক-বিতর্কের ব্যাপার রয়েছে, তবে গবেষকরা পৃথিবীর বাইরের সভ্যতার জীবদ্দশা ১ লাখ বছর স্থায়ী হিসেবে অনুমান করেছেন, আলোর গতি ছায়াপথকে অতিক্রম করতে কতটা দীর্ঘ সময় লাগতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে। নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ভীনগ্রহীদের সভ্যতা এতটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত থেকে থাকলেও, সংকেত ছায়াপথের কেবল ছোট্ট একটি ভগ্নাংশ পূরণ করবে। উদাহরণস্বরূপ পৃথিবী থেকে বর্তমানে ৮০ বছর স্থায়ী সংকেত মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে যা আকাশ গঙ্গার মাত্র ০.০০১ শতাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থান করবে।

গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, পৃথিবীর বাইরে অবস্থানকারী অ্যালিয়েনদের অস্তিত্ব যদি খুঁজে পেতে হয় তাহলে তাদেরকে পৃথিবী থেকে পাঠানো সংকেতের ৫০ আলোকবর্ষের মধ্যে অবস্থান করতে হবে। তাছাড়া কোনো শক্তিশালী এবং টেকসই অ্যালিয়েন বংশ যদি পাঠানো সংকেতের ১ লাখ বছর স্থায়িত্বকাল পর্যন্ত টিকেও যায়, তারপরও তাদের সঠিক অস্তিত্ব অনুসন্ধান করা অসম্ভব হয়ে পড়বে যদি নতুন কোনো প্রজাতির উদ্ভব সেখানে না ঘটে।

নতুন গবেষণার আরেকটি চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, যেকোনো সময় পৃথিবীকে অতিক্রম করা মহাজাগতিক সংকেতগুলো বর্তমান সভ্যতার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত। এই গবেষণার লক্ষ্য হলো, এখন পর্যন্ত ভীনগ্রহের প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব সম্পর্কে একটা উন্নত দৃষ্টিকোণ পেতে সহায়তা করা। যোগাযোগের এই অভাবটা কি পৃথিবীর বাইরে আদৌ কারো বসবাস নেই বলে? নাকি এটা আমাদেরই ব্যর্থতা যা আমরা তাদের খুঁজে পাচ্ছি না?

গবেষকগণ আশাবাদী যে, সংশোধিত ড্রেক সমীকরণ মহাকাশে রেডিও সংকেত খোঁজায় আমাদের সম্ভাবনাকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি সম্ভবত এটা বোঝার উন্নত মাধ্যম হবে যে, আমাদের টেলিস্কোপের অবস্থান কোথায় হতে পারে। যদিও এই গবেষণাটি একটি প্রাথমিক পর্যায়ের ধারণা অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে এটি মূল্যায়িত হতে হবে।

তার আগে আপাতত, পৃথিবীর বাইরে আমাদের কাছাকাছি কোনো সভ্যতার কাছ থেকে সংকেত পাওয়ার প্রত্যাশা করাটা উচিত হবে না, অন্তত ১ লাখ বছর জীবদ্দশার কোনো সভ্যতার নয়। হয়তো মহাকাশের ভিন্ন এক সৌরজগত থেকে তারা প্রতিনিয়ত সংকেত পাঠাচ্ছে; কিন্তু সেই সংকেত পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে সেই প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে যাচ্ছে। আবার যে অ্যালিয়েন সম্প্রদায় এখন সংকেত পাঠাচ্ছে তা হয়তো এখনও পৃথিবীতে আসার অপেক্ষায় আছে।

তথ্যসূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়